প্রাথমিকে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমানোর লক্ষ্যে দুই বছর পর আবারও মিড-ডে মিল চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এবার আরও বড় পরিসরে, ১৫০টি উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু হতে যাচ্ছে এ স্কুল ফিডিং কর্মসূচি। আগামী আগস্ট মাসের শুরু থেকেই প্রকল্পটি চালুর পরিকল্পনা আছে বলে জানা গেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে।
মন্ত্রণালয়ের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার ১৯ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩৭ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য তিন বছর মেয়াদে এ প্রকল্প চালু হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। প্রাক্কলিত এ ব্যয়ের মধ্যে ৪ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ব্যয় হবে খাদ্য সংগ্রহ খাতে। আর বাকি অর্থ ব্যয় হবে ঠিকাদার, পরিবহন, সার্ভিস চার্জ, খাদ্য বিতরণ ও প্যাকেজিং খাতে। প্রকল্পটি সফল হলে সারাদেশের স্কুলগুলোতেই এই মিড-ডে মিল চালু করা হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী নিজে তার বাজেট বক্তৃতায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচির কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় থাকায় প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনও ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ২০০১ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ফিডিং প্রকল্প পরিচালনা করে। এরপর ২০১০ সালে ১০৪টি দারিদ্র্যপ্রবণ উপজেলায় ১৫ হাজার ৩০০টিরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারিভাবে স্কুল ফিডিং প্রোগ্রাম চালু হয়েছিল। এ কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৩০ লাখ শিশুকে ফর্টিফায়েড বিস্কুট এবং তিন উপজেলার শিক্ষার্থীদের গরম খাবার বিতরণ করা হয়। প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত চলে। মাঝে ২০২০ সালের আগস্টে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে পাঁচ বছর মেয়াদে খাবার বিতরণের জন্য ১৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রণয়ন করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তবে মিড ডে মিলের খিচুড়ি বানানো শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলে প্রকল্পটি আর অনুমোদন পায়নি একনেক সভায়।
এ ব্যাপারে তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছিলেন, প্রকল্পটির কাঠামো নিয়ে প্রধানমন্ত্রী উদ্বিগ্ন ছিলেন বলে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়নি। স্কুলে খিচুড়ি রান্না করলে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে বলে মনে করছিলেন তিনি। আর প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, গরম খাবার সরবরাহ করা তাদের পক্ষে কঠিন হবে কারণ এতে লোকবল এবং রান্নার জন্য জায়গা প্রয়োজন।
এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ জানিয়েছেন, চলতি বছরের শেষের দিকে শুরু হতে যাওয়া নতুন এই কর্মসূচিতে সরকার শুধু ফর্টিফায়েড বিস্কুটই নয়, মৌসুমি ফল, কলা, ডিম ও রুটিও সরবরাহ করবে। এ ছাড়া জুলাই মাসে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য সমান্তরাল আরেকটি স্কুল ফিডিং কর্মসূচি চালু করা হবে।
উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মিড-ডে মিল কর্মসূচির ফলে বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে এবং বিদ্যালয় থেকে ঝরে পড়ার হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।