Search
Close this search box.

ইসলামে জুয়া খেলার শাস্তি কি

ধর্ম ডেস্ক: টাকার বিনিময়ে জুয়া ও বিভিন্ন রকম যে খেলার আয়োজন হয় এটা হারাম। আরবিতে জুয়াকে বলা হয় মাইসির ও কিমার। বাংলা ও উর্দুতে এর প্রতিশব্দ হচ্ছে জুয়া। এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তাফসিরে মাআরিফুল কুরআনের লেখক মুফতি মুহাম্মদ শফী (রহ:) বলেন, ১. ‘যে চুক্তিতে কোনো সম্পদের মালিকানায় এমন সব শর্ত আরোপিত হয়, যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমানভাবে বিদ্যমান থাকে, এর ফলে পূর্ণ লাভ বা লোকসান উভয় দিকেই বজায় থাকে, এটিই হলো জুয়া।’ (ফাতাওয়া শামী : ৫/৩৫৫)।

ইসলামে প্রতিটি এমন প্রতিযোগিতা বা খেলা, যেখানে ফলাফল নিজের পক্ষে এলে অংশগ্রহণকারী লাভবান হবে, আর বিপক্ষে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা জুয়া হবে। যদি এমন হয় যে ফলাফল নিজের পক্ষে এলে লাভবান হবে, কিন্তু বিপক্ষে গেলে কোনো ক্ষতি হবে না, সেটা জুয়া নয়। (আল কিমার ওয়া সোয়ারুহুল মুহাররামাহ)

লোকেরা আপনাকে মদ ও জুয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। আপনি বলুন, এই দুইয়ের মধ্যে আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও। কিন্তু এগুলোতে উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি। (সুরা বাকারা, আয়াত ২১৯)

ইসলামে জুয়া এবং তা থেকে অর্জিত টাকাপয়সা সম্পূর্ণরূপে হারাম। পবিত্র কোরআনে একে শয়তানি কাজ বলা হয়েছে। ‘হে মুমিনগণ, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমার বেদি ও জুয়ার তিরসমূহ অপবিত্র, শয়তানি কাজ। সুতরাং এসব পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা মায়িদা: ৯০)

জুয়ায় অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রহণ করা হয়, যা সম্পূর্ণ হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস কোরো না।’ (সুরা নিসা: ২৯)

রাসুল (সা.) বলেন, ‘কেউ যদি কাউকে বলে, এসো জুয়া খেলি, তখন তার ওপর সদকা করা আবশ্যক।’ (বুখারি) শুধু খেলার আমন্ত্রণ জানালেই যেখানে কাফফারা দিতে হচ্ছে, সেখানে খেললে কী পরিমাণ গুনাহ হবে, তা সহজেই বুঝা যায়।

শয়তান তো চায়, মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ ঘটাতে এবং তোমাদেরকে আল্লাহর স্মরণে ও সালাতে বাধা দিতে। তবে কি তোমরা বিরত হবে না? (সুরা মায়েদা, আয়াত:- ৯১)

রাসুল (সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা আমার উম্মতের জন্য মদ ও জুয়া হারাম করেছেন।

সুতরাং জুয়া এমন এক খেলা, যা লাভ-লোকসানের মধ্যে ঝুলন্ত থাকে। জুয়া খেলায় মূলত নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বা বস্তু (যা পুরস্কার হিসেবে ধার্য করা হয়) নির্ধারণ করা হয়। এরপর কোনো একটি বিষয়ে দুই পক্ষ চুক্তি করে হার-জিত নির্ধারণ করে। যে পক্ষ হেরে যায়, সে পক্ষ অপর পক্ষকে পূর্বনির্ধারিত অর্থ বা বস্তু প্রদান করে। জুয়া খেলায় তিনটি উপাদান থাকা প্রয়োজন; বাজির পরিমাণ, ঝুঁকি ও পুরস্কার।

ইসলামের দৃষ্টিতে মদ-জুয়া কবিরা গুনাহ। হারাম। আদম সন্তানের শয়তান কখনো ভাল চায় না। সে চায় মানুষ তার স্রষ্টাকে ভুলে থাকুক। সমাজে মন্দ আর ক্ষতিকর কাজের ব্যাপকতা লাভ করুক। সম্ভাব্য জান্নাতিকে জাহান্নামি আর সমাজের শান্তিকে অশান্তিতে পরিণত করার জন্য শয়তান জাল বুনে। সে জাল ছড়িয়ে দেয় সমাজে। মদ ও জুয়া মুমিন বান্দাকে আটকে ফেলার জন্য শয়তানের ছড়ানো জাল। এর মধ্যে যে বান্দা পড়ে যায়, তাকে জাহান্নামি করেই ছাড়ে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা: থেকে বর্ণিত হাদিসে রসুল (সা.) বলেন, ‘বাবা-মায়ের অবাধ্য সন্তান, জুয়ায় অংশগ্রহণকারী, খোঁটাদাতা ও মদ্যপায়ী জান্নাতে যাবে না’ (দারেমি : ৩৬৫৩; মিশকাত : ৩৪৮৬)।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ