স্টাফ রিপোর্টার: গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। তার আকস্মিক পদত্যাগের ফলে বাংলাদেশে যে শূন্যতা তৈরি হয়, তা পূরণ ও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে বেছে নেন শিক্ষার্থীরা। তাই তো হাসিনা সরকার পতনের পরপরই প্যারিসে অবস্থানরত ৮৪ বছর বয়সী নোবেলজয়ী ড. ইউনূসকে ফোন দেন তারা। জানান, তাকে তাদের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের এই অনুরোধ ফেলতে পারেননি ড. ইউনূসও। সিদ্ধান্ত নেন যা কিছু করা দরকার, তা তিনি করবেন।
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের নতুন নেতার অবস্থান স্পষ্ট: এটি তার বিপ্লব ছিল না এবং এটি তার স্বপ্ন ছিল না। তবে গত সপ্তাহে তাকে যখন শিক্ষার্থীরা ফোন করলেন তখন ড. ইউনূস জানতেন, যা কিছু প্রয়োজন, তা তিনি করবেন।
তারপর শিক্ষার্থীরা জানান, শেখ হাসিনার আকস্মিক পদত্যাগের ফলে বাংলাদেশে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা পূরণ এবং নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ড. ইউনূসকে তাদের প্রয়োজন। শিক্ষার্থীদের এই অনুরোধে সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান তিনি।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিজের কার্যালয়ে কয়েকজন নির্বাচিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত ব্রিফিংয়ে ড. ইউনূস বলেন, আমি এটা করছি। কারণ দেশের তরুণরা এটাই চেয়েছিল। আমি তাদের এটি করতে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, এটা আমার স্বপ্ন নয়, এটা তাদের স্বপ্ন। তাই আমি তাদের এই স্বপ্ন সত্যি করতে সহায়তা করছি।
গত সোমবার (৫ আগস্ট) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘিরে গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা। তিনি এখন ভারতে অবস্থান করছেন।
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। গত বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাতে এই সরকার শপথ গ্রহণ করেন।
ড. ইউনূসের ভাষায়, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বেশি জরুরি বিষয় হলো নিরাপত্তা পরিস্থিতি। কোটা আন্দোলন এবং এর জেরে সারাদেশে সহিংসতায় ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। সব পুলিশ সদস্য উধাও হয়ে যায়। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়। শত শত থানা আগুনে পুড়ে যায়। পুলিশ না থাকায় শিক্ষার্থীরা সড়কে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আইন-শৃঙ্খলা সবার আগে যাতে মানুষ স্বস্তিতে থাকতে এবং কাজ করতে পারে।
সোমবার (১২ আগস্ট) পুলিশ সদস্যরা কাজে ফেরেন। ফলে পরিস্থিতির অগ্রগতির প্রথম ঝলক সড়কে দেখা যায়। কিন্তু এটি প্রথম একটি পদক্ষেপ। তবে এখন নিরাপত্তায় এই দেশের একমাত্র সমস্যা- মোটেও এমন নয়।
ড. ইউনূস বলেন, শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর সরকার সম্পূর্ণভাবে উধাও হয়ে যায়। ১৫ বছর ধরে ক্রমবর্ধমান কর্তৃত্ববাদী শাসনের পর দেশে যা বাকি ছিল তা শুধু বিশৃঙ্খলা, পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা।
তিনি বলেন, এমনকি সরকার যা করেছে তার কোনো মানে হয় না। প্রশাসনের বিষয়ে তাদের কোন ধারণা ছিল না।
তবে এত এত বিশৃঙ্খলার মধ্যেও অনেক আশা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, আমরা এখানে আছি। তাদের জন্য, দেশের জন্য নতুন মুখ। কারণ এই মুহুর্তে দানবটি চলে গেছে। তাই এটি উদ্দীপনার বিষয়।
বাংলাদেশে সংস্কারই মুখ্য বিষয় বলে মনে করেন অধ্যাপক ইউনূস। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি থেকেই এই আন্দোলনের সূত্রপাত। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ নৃশংস ও প্রাণঘাতী অভিযানে নামলে সেটা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।
অধ্যাপক ইউনূস এটিও স্বীকার করেছেন যে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যার সঙ্গে সবাই একমত হবে না। তবে তিনি আশা করেন যে এটি আগের চেয়ে ভালো হবে।
তিনি বলেন, আমার কাজের অভিজ্ঞতা যাই হোক না কেন…আমি বলছি না, আমি সরকার চালাতে পারবো। আমার কিছু প্রতিষ্ঠান চালানোর অভিজ্ঞতা আছে। আমি যতটা পারি তাই ব্যবহার করবো। এমন লোক থাকবে যারা এটি পছন্দ করবে, যারা এটি অপছন্দ করবে। তবে আমাদের এটির মধ্য দিয়ে যেতে হবে।
সূত্র: বিবিসি