টুংগীপাড়ার অজপাড়াগাঁর মধ্যবিত্তের সন্তান (জন্ম ১৭ই মার্চ ১৯২০) মুজিব বড় হয়েছিলেন স্বীয় প্রতিভায়। তেজে, সাহসে, ভালবাসা, দুর্বলতায় এবং অঙ্গীকার। সমাজের দুর্বল মানুষের প্রতি শোষণের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী মুজিবের কৈশোরের সেই অংগীকার এর প্রতি বিশ্বস্ততা অক্ষুন্ন ছিল শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত। সোনার চামচ নিয়ে জন্মাননি, আর রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেও শ্রেণী অবস্থান হয়নি বদল, তাঁর চলন-বলন-বলন কথনের মধ্যে। নিজের নতুন লুঙ্গী অন্যকে দান করা এবং নিজেদের গোলার ধান ক্ষুর্ধার্তদের বিলিয়ে দেয়া কিশোর ৭ম শ্রেণীর ছাত্র সাহসী মুজিবকে অন্যয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার অভিযোগে কারাগারে যেতে হয়েছিল। পেরেছিলেন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা ও মন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর সামনে দাঁড়িয়ে তাৎক্ষনিক ছাত্রদের দাবী আদায় করতে। গোপালগঞ্জের কৃষক আন্দোলনেও তাকে পাওয়া গেছে অগ্রণী ভূমিকায়। কলকাতায় গান্ধীর কুইট ইন্ডিয়া, নেতাজি সুভাষ বসুর হলওয়েল মনুমেন্ট ভাংগা, সাম্প্রদায়িক দাংগার (৪৬) বিক্ষুদ্ধ জনতা কর্তৃক ডাঃ বিধান রায়ের বাড়ীতে হামলা চালালে তা প্রতিহত এবং পাহারা, কলকাতা মাদ্রাসা ও লেডী ব্রাভোন কলেজে নঙ্গলখানার দায়িত্বে ছিলেন মুজিবই। শেরে বাংলাকে মুসলিম লীগ থেকে বহিঃস্কারের (১৯৪১) প্রতিবাদ মিছিল নামিয়েছিলেন মুজিব। ১৯৪৬ এর নির্বাচনে সোহরওয়ার্দীর নির্দেশে মুজিব ফরিদপুর জেলার নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেন সফলভাবে। ঢাকায় শুরুতেই মুজিবকে পাওয়া গেল পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির বিরুদ্ধে সংগ্রামের পটভূমি সৃষ্টিতে। গঠিত হলো গণতান্ত্রিক যুবলীগ (৬/৯/৪৭), ছাত্রলীগ (৪/১/৪৮) এবং জেলে বসেই নির্বাচিত হলেন যুগ্ম সম্পাদক আওয়ামী মুসলিমলীগের (২৪/৬/৪৯)। এরই মধ্যে বাংলা ভাষার দাবীতে প্রথম সফল ধর্মঘট পালনকালে পিকেটিংরত অবস্থায় ভাষার দাবীতে প্রথম বন্দী (১১/৩/৪৮)। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারীদের আন্দোলন সমর্থনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার (১৯৪৯)। মুচলেকা দেননি তাই আইনের ছাত্র জীবনের শেষ। শুরু হলো জীবনের আরেক অধ্যায়। খাদ্যের দাবীতে আন্দোলন। আবার বন্দী দীর্ঘদিন ধরে। আওয়ামীলীগের তেজী লোকটি (মুজিব) অক্টোবর (১৯৫০) থেকে দীর্ঘদিন বন্দী, সংগঠন নিস্তেজ। ৩১/১/৫২ তারিখে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভায় সভাপতি মাওলানা ভাষানী ভাষা ও বন্দী মুক্তির দাবীতে আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা করেন যার ধারাবাহিকতায় এবং ১৬ই ফেব্রুয়ারি থেকে জেলে অনশনরত রাজবন্দী মুজিবের ঐকান্তিক আগ্রহে দোদুল্যমান রাজনৈতিক নেতাদের ১৪৪ ধারা ভংগ না করার সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ছাত্র যুবকরা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক মাইলষ্টোন সৃষ্টি করে একুশ ফেব্রুয়ারি অন্ততঃ ৭ জন ছাত্র যুবকের রক্তের বিনিময়ে। মুজিব ছাড়া পান ২৬শে ফেব্রুয়ারি ’৫২। যাদের রক্তের বিনিময়ে মুক্তি পেলেন তাদের ত্যাগ মুজিবকে আরো বেশী সাহসী গতিশীল করে তোলে। চুয়ান্নর নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট এর প্রধান শরীক আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক মুজিবের শ্রম বৃথা যায়নি। কিন্তু বাংগালীদের প্রাদেশিক সরকার পর্যন্ত চালাতে না দিলে জেলে পাঠাবে এ ধরনের আচরণ মুজিবকে আরো ক্ষুব্দ করে তোলে। মন্ত্রীত্ব না দলের দায়িত্ব দুটির একটির মধ্যে মুজিব দলীয় নেতৃত্বে বেছেনিয়ে একটি নজীর স্থাপন করেছিলেন। ১৯৫৬ সনের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবীকে উপেক্ষা এবং প্রদেশের নাম পূর্ববঙ্গকে পূর্ব পাকিস্তান করনের প্রতিবাদে গণপরিষদ ত্যাগকারী অধিবেশন মুজিব এবং আওয়ামীলীগ প্রতিবাদ করে ছিলেন স্বীয় গুরু শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাক প্রধানমন্ত্রী হয়ে পল্টনে (১৩/৯/৫৬) উচ্চারিত পূর্বপাকিস্তানকে ৯৮ শতাংশ স্বায়ত্বশাসন দেয়ার উক্তিটির। সেই সন্ধ্যায় সার্কিট হাউজ চত্ত্বরে নাগরিক সম্বর্ধনা সভায় নেতার সামনে প্রতিবাদের ভাষা ছিল “একজন লোক প্রধানমন্ত্রী হলো আর স্বায়ত্ব শাসন পেলে গেলাম এটা মেনে নেয়া যায় না। সোহরাওয়ার্দী সাহেব যেন না ভাবেন যে, তাকে বাংলার সোল এজেন্সী দিয়ে দিয়েছে। নেতাকে সতর্ক হতে অনুরোধ করছি। ইতিমধ্যে ভাষানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করেন (১৯৫৭) ন্যাপ।
সমর নায়ক আয়ুব খান ক্ষমতা দখল করে (৭-১০-৫৮) ৪ দিনের মধ্যে মুজিবকে জেলে পুরলেন (১২/১০/৫৮) রাখলেন দেড় বছর। ১৯৬১ সনে মনিসিং, মানিক মিয়া, খোকা রায়দের সাথে এক বেঠকে মুজিব বলে ফেললেন ওদের সাথে আর থাকা যাবে না। স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করতে হবে। সবাই একমত হলেও স্ট্র্যাটেজি হিসেবে আন্দোলন স্বায়ত্ব শাসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুর (৬৩) পরে মনে হলো মুজিবের পাকিস্তানভিত্তিক রাজনীতির শেষ সুতো ছিন্ন হলো। মাথার বোঝা নেমে গেল। মাওলানা ভাষানী চীনের ‘ডোন্ট ডিষ্টার্ব আইয়ুব’ এ আটকে গেলেন। আইয়ুবের নির্যাতন ও শোষনের বিরুদ্ধে লড়বার জন্য নেতা কেবল মুজিব। প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের চাইতে একধাপ এগিয়ে আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের ঐতিহাসিক ছ’দফার দাবী পেশ করলেন লাহোর (ফেব্রুয়ারি ৬৬)। আইয়ুব খান অস্ত্রের ভাষা প্রয়োগ করলেন। বন্দী রাখলেন দীর্ঘদিন মুজিব এবং তার প্রায় সব অনুসারীদের (৬৬-৬৮)। পায়তারা করলো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসি দেয়ার। জনগন মাঠে নামলো। সৃষ্টি হলো ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহম্মেদের নেতৃত্বে উপসত্তরের গণ আন্দোলন। জনতার শক্তির কাছে অস্ত্রের পরাজয়। মুজিব মুক্তি পেলেন (২২/২/৬৯) জনগন ভালোবেসে পল্টনে ডাকলো বঙ্গবন্ধু আর ক্ষমতা ছাড়তে হলো আইয়ুবকে। পাকিস্তানের মৃত্যু ঘন্টা বাজলো।
এরপর তিনি আর মুজিব নন-বঙ্গবন্ধু। কৃতজ্ঞতার এ ঋণ শোধ করার জন্য
তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইয়ুব এর উত্তরাধিকারী ইয়াহিয়ার কাছ থেকে প্রথমেই দুটি জিনিস আদায় করে নিলেন। পেরেটির (পূর্ব ও পশ্চিমের সমান প্রতিনিধি) পরিবর্তে জনসংখ্যার ভিত্তিতে প্রতিনিধি নির্বাচন এবং জনগনের ভোটে নেতা নির্ধারণ। কৌশলে মুজিব জয়ী হলেন। আর জনগণ পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের অংশ ১৬৯ এর মধ্যে ১৬৭টিতে মুজিবের দল আওয়ামীলীগকে বিজয়ী করে শুধু পূর্ব পাকিস্তান নয় সমগ্র পাকিস্তান শাসনের অধিকার দেয় (ডিসেম্বর ৭০) কিন্তু পাকিস্তানিরা ‘বাংগালী নেটিভ’ দ্বারা শাসিত হওযা মেনে নেয়নি। সাহসী মুজিব গভীর বিচক্ষনতার সাথে দুর্বল অবস্থানে দাড়িয়ে বৃহৎশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল বের করেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ (বস্তুতঃ ১লা মার্চ) থেকে ঘোষণা করলেন পাক সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ। গান্ধীর অসহযোগ সফল হয়নি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলন একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এমনকি বাস্তিল কারাগারের পতন, ফরাসী বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, মাও সেতুং এর লং মার্চ, এসব ঘটনার চাইতেও ব্যতিক্রম কৌশল। পাক প্রেসিডেন্ট ঢাকায় আসতে মুজিবের অনুমতি নিতে হয়েছিল (১৫/৩/৭১)। আর তার উপস্থিতিতে এতদাঞ্চলের চলছিল মুজিবের প্যারালাল সরকার। শত্রুর কামান বন্ধুককে উপেক্ষা করে দশ লক্ষ লোকের উপস্থিতিতে বিশ্বের ইতিহসাসে সর্বশ্রেষ্ঠ খ্যাত আব্রাহাম লিংকনের গেটিসবার্গ এর্ডেস, বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে চার্চিলের অথবা মার্টিন লুথার কিং এর শ্রেষ্ঠ ভাষনের কৌলিন্য ম্লান করা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশ্বখ্যাত ৭ই মার্চের ভাষনে সংগ্রামের চুড়ান্ত লক্ষ্য জনগনের “মুক্তি ও স্বাধীনতার” স্পষ্ট ঘোষণা। প্রকাশ্য দিবালোকে শত্রু কবলিত, আকাশে বোমারু বিমান পরিবেষ্টিত এলাকায় দাড়িয়ে “স্বাধীনতা সংগ্রাম” এর ঘোষণা এবং “আমি যদি হুকুম দেবার না পারি, যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর (পাক সেনাবাহিনী) মোকাবেলা” করার নির্দেশ প্রদান করার সাহস মুজিব ছাড়া বিশ্বে অন্য কেউ দেখাননি কিনা জানা নেই। আলোচনার নামে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসলেও সে আলোচনার নামে ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসলেও সে আলোচনা সফল হয়নি। ইয়াহিয়া সৈন্য সমাবেশ ঘটিয়েছেন আর মুজিব প্রতিরোধের জন্য তৈরী। তাই ২৫শে মার্চ (৭১) রাতে শত্রুরা যখন মুজিবকে বন্দী করে ইথারে তখন ভেষে আসছে মুজিবের পূর্ব রেকর্ডকৃত কন্ঠস্বর “ঞযরং সধু নব সু ষধংঃ সধংংধমব ভৎড়স ঃড়ফধু, ইধহমষধফবংয রং ওহফবহঢ়বহফবহঃ”. আর মুজিব সৈনিকরা তখন মুক্তাঞ্চলে, প্রতিরোধে। বন্দী না এড়িয়ে বৃহৎ শক্তির সাহায্য নিয়ে আরেক বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই এর মুজিব যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতে না গিয়ে তা ইতিহাসের আলোকে একটি নজিরবিহীন কৌশল হিসাবে চিহ্নিত। স্বাধীনতার দায়বদ্ধতার ঋণ শোধ করতে যেন ভারতকে চরম মূল্য না দিতে হয় বাঙালিকে। মুজিবের সে হিসেব নির্ভূল। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তার যোগ্য উত্তরসূরী তাজ উদ্দিন আহম্মদ গঠন করেন মুজিব নগর সরকার ১০ই এপ্রিল ’৭১। তৈরী হয় ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। মুজিব নগর সরকার বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজ উদ্দিন প্রধান মন্ত্রী এবং কামরুজ্জামান, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, খন্দকার মোস্তাককে মন্ত্রী করে গঠিত মুজিব নগর সরকার এর বিচক্ষণতায় ভারতের সহযোগিতায় ১৬ই ডিসেম্বর ’৭১ পাক বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈনিক রেসকোর্স ময়দানে আত্মসর্মপনের মাধ্যমে দেশ পাক হানাদার মুক্ত হয়। মুক্ত স্বদেশে ফিরে মুজিব মাত্র ৩ মাসের মধ্যে মিত্র বাহিনীকে ফেরত পাঠানো, বিদেশী সৈন্য অবস্থানকালেও বিশ্বের প্রধান প্রধান দেশ সমূহের স্বীকৃতি আদায়, দশ মাসে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ সংবিধান প্রনয়ন, বিদেশী প্রত্যক্ষ সাহায্য ছাড়াই মাত্র ৩ বছরে সীমাহীন আর্থিক সংকট, বার্ষিক সাহায্য ঋণ অনুদান মাত্র ৫০ কোটি ডলার দিয়ে কোটি লোকের পুর্নবাসন, আইন, শৃংখলা, প্রশাসন, উৎপাদন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দ্রব্য মুল্য ইত্যাদি স্বাভাবিক পর্যায়ে আনতে সক্ষম হন।
রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে মুজিব দেখলেন কলোনিয়াল, বুল, দ্বারা রাজার মতো দেশ শাসন করা যায় কিন্তু দুঃখী মানুষের কল্যাণ আসেনা “চাটার দল” খেয়ে ফেলে। ধরা যায় না। তাই রাষ্ট্র নায়কের দ্রোহ কায়েমী স্বার্থবাদীদের বিরুদ্ধে। তার কন্ঠে শোনা যায়, “চুরি আমার কৃষক শ্রমিক করে না। আমরা ৫ শতাংশ শিক্ষিত সমাজই সবচাইতে করাপ্ট পিপল আর আমরাই বড় বড় কথা বলি।” তিনি যে গণতন্ত্র চেয়েছিলেন তাতে “রাতের অন্ধকারের বিদেশ থেকে টাকা পাওয়া” যায় না। শোষিত মানুষের পক্ষ নেয়ার আতংকিত হয় সমাজের দেশী বিদেশী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি। এদের সাথে যুক্ত হয়ঃ-
(ক) ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞায় নাগরিকত্ব-সম্পত্তি হারানো ব্যক্তিরা।
(খ) ধর্মের নামে যাদের রাজনীতি-ব্যবসা বন্ধ করা হয়েছিল।
(গ) রাষ্ট্রীয়করনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিরা।
(ঘ) জমির সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা সিলিং নির্ধারনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থরা।
(ঙ) গোলাম আজম, হামিদুল হক চৌধুরী সহ পাকবাহিনীর যে সব নেতৃস্থানীয় দোসরকে নাগরিক হওয়ার ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা হয়েছিল সেই ৩৯ জন ব্যক্তি।
(চ) যে ৮৪ জন পদস্থ কর্মকর্তার চাকুরী নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
(ছ) যদিও বঙ্গবন্ধু সকল সাংবাদিককে নিয়মিত ভাবে বেতন ভাতাদি এবং উপযুক্ত সরকারি চাকুরীতে নিয়োগের ব্যবস্থা রেখে পত্রিকা নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন তবুও পত্রিকা মালিকরা সম্পত্তি হারিয়ে ক্ষুব্দ হয়েছিলেন-
(জ) বঙ্গবন্ধুর সমাজতান্ত্রিক কর্মসূচী সফল হয়নি তবে এর প্রাথমিক পদক্ষেপের মধ্যে ৪ মূল নীতি ভিত্তিক জাতীয় ঐক্য, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, উৎপাদন বৃদ্ধি ছাড়াও দুনীর্তি উচ্ছেদ এবং প্রস্তাবিত বাধ্যতামূলক সমবায় ব্যবস্থায় যথাক্রমে সরকারী কর্মচারী, লুটেরা ব্যবসায়ীরা আতংকিত হয় লুটপাট বন্ধ, চাকুরী হারানো এমনকি সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হওয়ার ভয়ে। ভুস্বামী জমি হারানো ভয়ে। জেলা গর্ভনরের অধীনে আমলাদের নিয়োগও বুরোক্রাসীকে সংকিত করে। চুরি ডাকাতির জন্য থানাদারকে দায়ী, শহরে ৫ কাঠার উপর একটির বেশী-বাড়ী না থাকার বিধানও সংশ্লিষ্ট সবাইকে আতংকিত করে।
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং সমাজে এসব প্রভাবশালীদের সম্মিলিত উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয় ১৯৭৫ সনের ১৫ই আগষ্ট। এর নেতৃত্বে কারা ছিল সে কথা জাতি ইতিমধ্যেই জেনে গেছে। খুনীদের আইন করে বিচার থেকে অব্যাহতি দিয়ে বিশ্বে এটি একটি খুনী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত হয়েছিল।
প্রখ্যাত বুদ্ধিজীবি সরদার ফজলুল করিম যথার্থই বলেছেন ‘শেখ মুজিবকে আমরা ঈর্ষা করেছি আমাদের অতিক্রম করে বড় হওয়াতে। সব দিকে বড়, তেজে, সাহসে, স্নেহে, ভালোবাসায় এবং দুর্বলতায়। সব দিকে। এবং সেই ঈর্ষা থেকেই আমরা তাঁকে হত্যা করেছি। কেবল এই কথাটি বুঝিনি যে ঈর্ষায় পীড়িত হয়ে ঈষিতে স্থান দখল করা যায় না।’
যারা বিশেষ করে যে ব্যক্তি এদেশে বঙ্গবন্ধুর স্থান দখল করতে চেয়েছিল সে এবং তারা ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। ফাঁসি হয়েছে বঙ্গবন্ধুর খুনীর, ফিরে পেয়েছি ৭২ এর বাঙালি জাতিয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সম্বলিত সংবিধান। পুনঃমহিমায় উচ্চারিত হচ্ছে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : কলামিস্ট ও গবেষক