কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি \ ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। সোমবার সকালে ব্রহ্মপূত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৫১ সেন্টিমিটার ও নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার এবং ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্র।
বন্যায় এখন পর্যন্ত জেলার নয় উপজেলার অন্তত দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
পানিবন্দি এসব মানুষ খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছেন। চারণভূমি তলিয়ে যাওয়ায় গো-খাদ্যের সংকটসহ গবাদি পশুর নিরাপদ জায়গা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় অনেক এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে তারা দুর্ভোগ নিয়ে কলাগাছের ভেলা কিংবা নৌকায় যাতায়াত করছেন। পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ধানসহ বিভিন্ন ফসল। বন্যায় প্রাণিসম্পদের সাড়ে ১১ লাখ টাকার এবং মৎস বিভাগের ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এমনকি বন্যায় শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে। শনিবার দুপুরে উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের যমুনা সরকারপাড়া গ্রামের মাঈদুল ইসলামের মেয়ে মাকসুদা জান্নাত (১১) বাড়ির পাশে বন্যার পানিতে পরে মারা যায়।
বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ৮৫টি মেডিকেল টিম, ৯টি উপজেলায় একটি করে মনিটরিং টিম এবং সিভিল সার্জন অফিসে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগ থেকে ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, চলতি বন্যায় এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে ৭৪২টি পুকুরের ৭০৫ জন মাছচাষির ১১৫ মেটিক টন মাছ ভেসে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাই সরকার জানিয়েছেন, বন্যায় প্রায় অর্ধশতাধিক মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও গো-চারণভূমি, খড় ও দানাদার শষ্য তলিয়ে যাওয়ায় ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ১৮টি ভেটেনারি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুর রশীদ জানান, এখন পর্যন্ত বন্যায় ১০ হাজার ৮৯৪ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কর্মকর্তারা পরামর্শ দেওয়াসহ তথ্য সংগ্রহ করছেন।
কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুর-এ-মোর্শেদ জানান, বন্যার্তদের সহযোগিতায় মেডিকেল টিমের সদস্যরা বন্যা কবলিত এলাকায় পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, খাবার স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন ও প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র দিয়ে সহযোগিতা করছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি আরও বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলার নাগেশ্বরীতে বেড়িবাঁধের ৫০ মিটার ওয়াস আউট হয়ে গেছে। এছাড়া দুধকুমর নদীর কালিগঞ্জ, বামনডাঙ্গা ও ধাউরারকুটি এলাকায় বাঁধ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এই এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামি সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করা হবে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম জানান, বন্যার প্রস্তুতি হিসেবে জেলা প্রশাসক দপ্তরে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সোমবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের প্রতিদিনের ক্ষয়ক্ষতির তথ্য প্রদান করতে বলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২০ লাখ টাকা এবং ৪০৭ মেট্রিক টন চাল মজুদ রয়েছে। এছাড়াও আরো ৫০০ মেট্রিক টন চাল ও ২০ লাখ টাকার চাহিদা দেওয়া হয়েছে।