Search
Close this search box.

উচ্ছেদ অভিযানে বাধাঁর মুখে পুলিশ, দীর্ঘ চেষ্টায় বাড়ি দখলে প্রকৃত মালিক

গুলশানের সেই বাড়ি

স্টাফ রিপোর্টার \  ছয় বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে আঠারো বছরেও ভাড়াটিয়া বাসা না ছাড়ায় আদালতের দারস্থ হয়েছিলেন ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক ডা. গোলাম মোরশেদ আহমেদ। এরপর দীর্ঘ আইনী প্রকৃয়া শেষে ২১শে জুন উচ্ছেদের দিন ধার্য করে নির্দেশনা দেয় আদালত। অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে সহায়তার জন্য ডিএমপির গুলশান জোনের উপ পুলিশ কমিশনারকে ২৪ জন পুলিশ সদস্য পাঠানোর নির্দেশ দেয় ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালত ।

কর্মচারীরা বাড়ির প্রবেশমুখে বাধার সৃষ্টি করে।
কর্মচারীরা বাড়ির প্রবেশমুখে বাধার সৃষ্টি করে

মঙ্গলবার সকালে একজন ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য গুলশান-১ এর ৭ নম্বর রোডের ১৯ নাম্বার বাড়ির সামনে হাজির হয়। সেখানে বাড়ির মালিক ডা. গোলাম মোরশেদ আহমেদ সহ তার আইনজীবি এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহ আলম উপস্থিত হন। এ খবরে বিভিন্ন টিভি পত্রিকার সংবাদ কর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছুটে আসে।

বাড়ির মালিকের আইনজীবি এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শাহ আলম এর উপস্থিতিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ সদস্যরা বাড়িতে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাড়ির প্রবেশদ্বারেই বাঁধার মুখে পড়ে। অবৈধ ভাবে বাড়ি দখলকৃত ভাড়াটিয়া খান মোহাম্মদ আফতাবের কর্মচারীরা বাড়ির প্রবেশমুখে বাধার সৃষ্টি করে। তারা প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয় এবং ৫০ থেকে ৬০ জন  মুল ফটকের সামনে অবস্থান নেয়।

পরবর্তীতে পুলিশ সদস্যরা তাদের সরে গিয়ে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহযোগীতা করতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা কোন ভাবেই সরে না গিয়ে ফটকের সামনে বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে। সকাল থেকে প্রায় চার ঘন্টার চেষ্টায় বাড়িতে প্রবেশে ব্যার্থ হয় তারা। তারা পুলিশের সামনেই বাড়ি মালিক ও তার আইনজীবিকে স্থান ছেড়ে চলে যেতে বলেন। এরপর পুলিশ কঠোর অবস্থানে গেলে প্রবেশদ্বারের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করেন বাড়ির মালিক সহ অন্যান্যরা।

প্রবেশদ্বারের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ
প্রবেশদ্বারের তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ

বাড়ির মালিক ডা. গোলাম মোরশেদ আহমেদের অভিযোগ তিনি বিগত ২০০৩ সালে ছয় বছরের চুক্তিতে স্পেক্ট্রা ক্যাটারিং লিমিটেডের কাছে বাড়িটি ভাড়া দেন। ২০০৯ সালে বাসাটি ছাড়ার চুক্তি থাকলেও ভাড়াটিয়া খান মোহাম্মদ আফতাব বাড়ি না ছেড়ে উল্টো তার  বিরুদ্ধে আদালতে মামলা  করে।

জানা যায়, বাড়ির মালিকও একই বছর ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে পাল্টা মামলা(৫০৬/২০০৯) করেন। এদিকে খান মোহাম্মদ আফতাবের মামলা শুনানি শেষে ২০১১ সালে খারিজ করে দেয় ঢাকার আদালত। এই আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপিল করেন তিনি। জেলা জজ আদালত ২০১২ সালে আবেদনটি খারিজ করে দেয়। এরপর একইবছর তিনি হাইকোর্টে আপিল করেন। হাইকোর্টও তার আবেদন খারিজ করে দেন। এরপর তিনি আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল আবেদন করেন। অপরদিকে বাড়ির মালিকের মামলায় ২০১২ সালে ঢাকার প্রথম জেলা জজ আদালত এক রায়ে সমুদয় ভাড়াসহ বুঝিয়ে দিতে ভাড়াটিয়ার প্রতি নির্দেশ দেয়।

পুলিশ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে
পুলিশ তাদের বুঝানোর চেষ্টা করে

এই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন ভাড়াটিয়া। এছাড়া বাড়ির মালিকও জরিমানা বাড়াতে পৃথক আবেদন দাখিল করেন। উভয় আবেদনের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট বাড়ির মালিকের পক্ষে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে আপিল বিভাগে আবেদন করেন খান মোহাম্মদ আফতাব। আপিল বিভাগ ২০১৯ সালে আবেদনটি খারিজ করে রায় দেন।

এরপরও ভাড়াটিয়া খান মোহাম্মদ আফতাব বাড়ি না ছেড়ে গড়িমসি শুরু করে। গত ১৩ বছরে সে বাড়ির কোন ভাড়া পরিশোধ করে নাই। উল্টো বাড়ির মালিককেই নানা রকম হুমকী ধামকী দিয়ে নিজ বাড়িতে প্রবেশে বাঁধা দিয়ে আসছিলো।

অনড় অবস্থান
অনড় অবস্থান

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের মত স্থানে এমন একটি ঘটনা দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। অবশেষে আদালতের নির্দেশে বাড়ি ফিরে পেলেন ভুক্তভোগী বাড়ির মালিক ডা. গোলাম মোরশেদ আহমেদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ