স্টাফ রিপোর্টার – দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহ তীব্র আকার ধারণ করেছে। সবচেয়ে উষ্ণ মাস এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে তুলনামূলক গরম কম হওয়ার কথা থাকলেও পুরো উল্টো অবস্থা বিরাজ করছে। সোমবার (৮ মে) ঢাকার তাপমাত্রা মে মাসের হিসেবে ৩৪ বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। সোমবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে মঙ্গলবার (৯ মে) সেই রেকর্ডকে ছাড়িয়ে ৩৪ বছরের মধ্যে ঢাকার তাপমাত্রা ৩৯.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।
এদিকে তীব্র গরমে তেতে উঠেছে পুরো ঢাকা। তাপমাত্রা রেকর্ড ৪০ এর ঘর না পেরোলেও অনুভূব হচ্ছে ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এর সঙ্গে ঢাকার যানজট, ধুলোবালি, লোডশেডিং- গরমের ভোগান্তি আরও বাড়িয়েছে। বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরবে, আগামী দুই দিনের মধ্যে এমন সুসংবাদও দিতে পারেনি আবহাওয়া দফতর।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, মে মাসের মধ্যে মঙ্গলবার সবচেয়ে উষ্ণতম দিন পার করছে ঢাকা। এটা রেকর্ড তাপমাত্রা, ৩৪ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। তবে আগামী দুইদিনের মধ্যে বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। তবে সাগরের সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। এর প্রভাবে দুই-তিন দিন পর বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে। তবে বুধবার থেকে তাপমাত্রা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন এই আবহাওয়াবিদ।
আবহাওয়া দফতর বলছে, এখনও বাংলাদেশ থেকে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করা লঘুচাপটি মঙ্গলবার রাত কিংবা বুধবার রূপ নেবে ঘূর্ণিঝড়ে। ১৪ মে নাগাদ বাংলাদেশের ভোলা হয়ে কক্সবাজার জেলার মধ্যবর্তী স্থান নিয়ে উপকূলে আঘাত আনার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও সঠিক গতিপ্রকৃতি বুঝতে আরও দুই-একদিন সময় লাগবে।
এদিকে শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও গত ৯ বছর আগের রেকর্ড ভেঙেছে। মঙ্গলবার চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার তা ছিল ৪১ ডিগ্রি। এর আগে ২০১৪ সালের ২১ মে যশোরে ওই একই তাপমাত্রা উঠেছিল।
আর স্বাধীনতার পর মে মাসে দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ১৯৯৫ সালের ২৮ মে যশোরে, ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বৃষ্টির বিষয়ে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, দুইদিনের মধ্যে বৃষ্টির দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে বঙ্গোপসাগরে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ক্রমে শক্তি সঞ্চয় করে আগামী কয়েক দিনে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। সেটি যদি বাংলাদেশ বা আশপাশের অঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যায়, তার প্রভাবে দেশে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ১৩ বা ১৪ এপ্রিলে দেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কেন এত গরম
এদিকে তীব্র গরমে দিনের বেলায় ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। কাজের তাগিদে তবু যারা বের হচ্ছেন, সূর্যের খরতাপ থেকে বাঁচতে ছাতা ব্যবহার করছেন। অনেকে ডাব, জুস ও পানি পানের মাধ্যমে তৃষ্ণা মেটানোর চেষ্টা করছেন।
প্রশ্ন উঠেছে তাপমাত্রা কেন এত বাড়ছে। জবাবে আবহাওয়া দফতর বলছে, বাংলাদেশের এপ্রিল ও মে এই দুই মাস সবচেয়ে উষ্ণ মাস। এ ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে পুরো দেশের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। সর্বোচ্চ তাপমাত্রারও রেকর্ড হয়। মে মাসেও এই অবস্থা দেখা যাচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই দুই মাসে বৃষ্টি তুলনামূলক কম হয়। যে কারণে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গপোসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে ভূপৃষ্ঠের হাওয়া সাগরের দিকে ছুটছে। এ কারণেও গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।