Search
Close this search box.

সংসদীয় দলের চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন রাঙ্গার

স্টাফ রির্পোটার- বিরোধী দলীয় নেতার পদ থেকে রওশন এরশাদকে সরাতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা।

জাতীয় পার্টির সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া রাঙ্গা মঙ্গলবার বিকালে স্পিকারের সঙ্গে সংসদ ভবনে দেখা করেন। এসময় বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ তার সঙ্গে ছিলেন।

স্পিকারের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে রাঙ্গা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে যে চিঠি আমি দিয়েছিলাম, সেটা আমি প্রত্যাহার করতে চাই বলে স্পিকার মহোদয়কে জানিয়েছি। বিরোধী দলীয় নেতাকে সরাতে চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়াটা যে ঠিক হয়নি, সেটা আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম। যেহেতু প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি, সেহেতু আমি আমার সই করা চিঠিটা প্রত্যাহার করার জন্য বলেছি।’

তিনি জানান, স্পিকার তাকে বলেছেন, তিনি আইনি দিক দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমি দলের গঠনতন্ত্র স্পিকারকে দিয়েছি। তিনি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।

গত ৩০ আগস্ট রওশন এরশাদের নামে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে বিরোধী দলীয় নেতার কার্যালয়ের প্যাডে রওশনের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ’র নামে একটি চিঠিও ছিল।

তিন পৃষ্ঠার ওই বিজ্ঞপ্তিতে দলের ভেতরকার রাজনীতির নানা বিষয় বর্ণনা করে আগামী ২৬ নভেম্বর দলের সম্মেলন আহ্বান করেন রওশন। নিজেকে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক করে ৮ সদস্যের একটি কমিটিরও ঘোষণা দেন।

রওশনের আচমকা এ ঘোষণায় জাতীয় পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব প্রথমে কোনও মন্তব্য না করলেও পরে দলের চেয়ারম্যানের প্রেস সচিব খন্দকার দোলোয়ার জালালী একটি বিবৃতি দিয়ে বলেন,  কাউন্সিল ডাকার এখতিয়ার রওশনের নেই। তার পদক্ষেপ ‘অবৈধ’।

রওশনের ওই পদক্ষেপের পরদিনই তাকে সংসদে বিরোধী দলের নেতার পদ থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত নেন দলটির সংসদ সদস্যরা। দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ১ সেপ্টেম্বর তাদের সিদ্ধান্ত জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। পরে দলের প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাও চিঠি দেন স্পিকারকে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর দলের সব পদ থেকে মসিউর রহমানকে অব্যাহতি দেন জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের। রাঙ্গার দাবি, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার প্রক্রিয়া ‘সঠিক ছিল না’। একটি টেলিভিশনে এ নিয়ে কথা বলায় তাকে বহিষ্কার করা হয় বলে রাঙ্গা মনে করছেন।

রওশনকে বাদ দিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে ‘হুমকির মুখে’ সই করেছিলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন রাঙ্গা। তিনি বলেন, ‘তখন সই না করলে আমাকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।’

স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর বিরোধী দলীয় এই প্রধান হুইপ বলেন, ‘একই সময় জাতীয় পার্টির দুটি গঠনতন্ত্র। এক জায়গায় বলা আছে, প্রধান পৃষ্ঠপোষক সব কাজ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তার সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আরেকটায় প্রধান পৃষ্ঠপোষকের কোনও খবরই নেই। গঠনতন্ত্র নকল করে আরেকটা করা হয়েছে।’

এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গা বলেন, ‘একটা দলের যখন মিটিংয় হয়, তখন সভাপতিত্ব যিনি করেন তিনি চিঠি দেবেন। উনি (জি এম কাদের) সেটা না করে আমাকে দিয়ে করেছেন। চিফ হুইপের এটা দেওয়ার কথা না। আমি যে মিটিং করেছি সেটা ৩১ অগাস্টের মিটিং। এমপিরা করেছেন ১ সেপ্টেম্বর। এ তারিখের মিটিংয়ে আমার কাছ থেকে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

রাঙ্গা এখন রওশনের সঙ্গে আছেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি দলের সঙ্গে আছি। দল একটাই থাকবে। এখনও চাই উনারা বসে ঠিক করুন। দলে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘স্পিকারকে বলেছি, এজেন্ডা ছাড়া মিটিং দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকে বাদ দিয়ে উপনেতা নেতা হয়ে যান তবে এটা দুঃখজনক। বৈঠকেরতো এজেন্ডা থাকতে হবে। স্পিকার বলেছেন, আমি চিঠি দিতেই পারি। উনি দেখবেন।’

প্রসঙ্গত, রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দু’জন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নানা কৌশলে তাদের মানাতেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার পক্ষে ছিলেন এরশাদ। ভোটের আগে তিনি নাটকীয়ভাবে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে রওশনের নেতৃত্বে একটি অংশ নির্বাচনে অংশ নেয়। বিএনপিবিহীন সেই সংসদ থেকে বিরোধীদলীয় নেতার আসনে বসেন রওশন।

এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে রওশন তাতে আপত্তি তোলেন। এরশাদের আসনে উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।

এরপর জি এম কাদের বিরোধী দলীয় নেতার পদ পাওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিলে বিভেদ আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে দলের একটি অংশ রওশনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।

ওই সময় দুই পক্ষের নেতাদের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জি এম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন। আর রওশন হবেন বিরোধী দলীয় নেতা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ