স্টাফ রিপোর্টার- বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন গৃহবন্দী, সুতরাং দলের আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া ও পালনের ক্ষেত্রে তার পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ নেই।
রবিবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দ্বার্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ধরনের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেওয়া হবে।
তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড় মোখা’র কারণে সৃষ্টি দুর্যোগে দলের নেতাকর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, একটা সম্পূর্ণ মিথ্যাকে আবার সামনে তুলে নিয়ে আসা হয়েছে ৪৮ বছর পর। এটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। উদ্দেশ্য একটাই, জনগণ যখন তার অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে। তারা রাস্তায় নেমে পড়েছে। যখন জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্ট হয়েছে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য। মূলত সে কারণেই ৪৮ বছর পর মিথ্যা ও বিভ্রান্ত কিছু ঘটনা নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চলছে ।
তিনি বলেন, গণবিচ্ছিন্ন এই দখলদার সরকারের তরফে আগামিতে এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে। বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে এ ধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরো বাড়বে। আমরা দ্বার্থহীন ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, বাংলাদেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষদের সাথে নিয়ে বিএনপির নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটিয়ে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল নস্যাত করে দেবো।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোগী ছিলেন কর্নেল নাজমুল হুদা। অভ্যুত্থানে সক্রিয় নেতৃত্ব দিতে তিনি ঢাকা আসেন। উল্লেখ্য, খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করতে তাদের নেতৃত্বে তৎকালীন সেনাপ্রধান (পবর্তীতে রাষ্ট্রপতি) মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়। মূলতঃ খালেদ মোশাররফ ও তার সহযোগীদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষীতার সুযোগে প্রথমত ইতিহাসের নৃশংস জেলহত্যাকাণ্ড সঙ্ঘটিত হয়।
তিনি বলেন, খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সঙ্ঘটিত অভ্যুত্থানের ফলে সেনাছাউনিতে চরম বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। যে সুযোগের অপব্যবহার করে কর্নেল তাহের-ইনু গংয়ের নেতৃত্বে বিপ্লবী সৈনিক সংস্থা ও জাসদ গণবাহিনীর নেতৃত্বে পাল্টা-অভ্যুত্থান সঙ্ঘটিত করে সেনা বাহিনীতে সেনা অফিসার-সৈনিক বিরোধ সৃষ্টি করে নির্মম সেনা অফিসার হত্যার সুদূরপ্রসারী দেশী-বিদেশী চক্রান্তে শামীল হয়। যার নির্মম শিকার হচ্ছেন খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সঙ্ঘটিত অভ্যুত্থানের অন্যতম সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ ক্ষমতালোভীদের চক্রান্তে সঙ্ঘটিত শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ড, ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থান ও ৭ নভেম্বর জাসদ গণবাহিনী ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক আদর্শে কর্নেল তাহের-ইনু গংদের নেতৃত্বে পাল্টা সেনা অভ্যুত্থান এবং সৈনিক-অফিসার বিরোধ উস্কে দিয়ে নৃশংস সেনা অফিসার হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর অস্তিত্ব বিলীন করার এক ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র রুখে দিতে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, রণাঙ্গনের যোদ্ধা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জাতির ক্রান্তিলগ্নে সাহসী ভূমিকা অবতীর্ণ হন।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত দশম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের কার্যালয়ে আশ্রয় নেয়া কর্নেল হুদাকে হত্যার ঘটনায় তার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান ৪৮ বছর পর যে মামলা দায়ের করেছেন সেখানে সেই হত্যার আদেশদাতা হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম উল্লেখ করেছেন। অত্যন্ত রূঢ় সত্যি হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী নিশিরাতের নির্বাচনের বিনাভোটের গঠিত সংসদের একজন সদস্য নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি। দায়েরকৃত মামলার বাদি নাহিদ ইজাহার খানের মায়ের লিখিত গ্রন্থের ১৩৪ পাতায় সুস্পষ্টভাবে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কর্নেল তাহেরের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে উঠে এসেছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এতে আরো উঠে এসেছে কর্নেল তাহেরের নির্দেশে হত্যাকাণ্ডের চারদিন পূর্ব থেকে কর্নেল হুদা সহ অন্যনাদের ভারতের চর হিসেবে সেনাবাহিনীতে প্রচার করেছিল জাসদ গণবাহিনী। মেজর জেনারেল আমীন আহম্মেদ চৌধুরীও একই কথা লিখেছেন বইটির ভূমিকায়।
মহাসচিব বলেন, ইতিহাসের নির্মম পরিহাস হচ্ছে, কর্নেল হুদার মেয়ে নাহিদ ইজহার খান যিনি ফ্যাসিস্ট ভোটারবিহীন সংসদের এমপি হিসেবে তার পিতার হত্যাকারী জাসদ-গণবাহিনীর গণবাহিনীর উপপ্রধান হাসানুল হক ইনু এবং কর্নেল তাহেরের ভাই ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল একই সংসদের এমপি হিসেবে গলা ফাটাচ্ছেন। আর নিজের পিতার হত্যার হুকুমের আসামি করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে। যিনি তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি, তার মায়ের লেখা গ্রন্থে অভিমানভরে স্বীকার করে নিয়েছেন তাদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দিতে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বস্তুত, নাহিদ ইজহার খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার পিতার হত্যার হুকুম দাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন বর্তমান ফ্যসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়াণক হিসেবে মাত্র। এর পেছনে রয়েছে সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। যার প্রধান কারণ হচ্ছে, চলমান ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন থেকে দেশী-বিদেশী গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘোরাতে। অন্যথায় পিতার ইতিহাস স্বীকৃত জাসদ-গণবাহিনীর জীবিত কমান্ডার ইনু গংদের বাদ দিয়ে যিনি সৈনিক অফিসার বিরোধ নিরসন করে সেনা অফিসারদের জীবন বাঁচাতে জীবনবাজী রেখে দেশের বিভিন্ন সেনাছাউনিতে ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হুকুমের আসামি করে নিজের পিতার রক্তের সাথে বেঈমানি করতেন না।