Search
Close this search box.

হজে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়াল, ৩১ জন বাংলাদেশি

সৌদি আরবে প্রচণ্ড গরমে এই বছরের হজে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। স্থানীয় সময় গতকাল বৃহস্পতিবার নতুন করে মিসরের আরো ৫৮ জন হাজির মত্যুর খবর পাওয়া গেছে। একজন আরব কূটনীতিকের মতে, নিহত এক হাজারের মধ্যে মোট ৬৫৮ জনই মিসরীয় নাগরিক এবং এদের মধ্যে ৬৩০ জন অনিবন্ধিত হজযাত্রী ছিলেন। মোট ১০টি দেশ এক হাজার ৮১ জন হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

এদিকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩১ জন হজযাত্রী মারা গেছেন বলে বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।  সৌদির জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্র এই সপ্তাহে মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদে ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১২৫ ফারেনহাইট) উচ্চ তাপমাত্রার কথা জানিয়েছে। গত মাসে প্রকাশিত সৌদি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতি দশকে এই অঞ্চলে তাপমাত্রা ০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বছর হজ সৌদির গ্রীষ্মের সময় পড়েছে। প্রতিবছর হাজার হাজার হজযাত্রী অনিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমে হজে আসার চেষ্টা করেন, কারণ অনেকে ব্যয়বহুল অফিশিয়াল পারমিটের খরচ বহন করতে পারেন না। যদিও সৌদি কর্তৃপক্ষ কয়েক হাজার অনিবন্ধিত হজযাত্রীকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছিল, তবুও দেখা যাচ্ছে, অনেক অনিবন্ধিত হজযাত্রী গত শুক্রবার শুরু হওয়া মূল আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নিয়েছিলেন।

অনিবন্ধিত হজযাত্রী হওয়ায় অনেক সুযোগ-সুবিধাও পাননি তারা। সরকারি অনুমতি ছিল না বলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে পারেননি তারা। সারা বিশ্ব থেকে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন মানুষ এবারের হজে অংশগ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে অনেক বৃদ্ধ এবং অসুস্থ ব্যক্তিও ছিলেন এবং তারা এই বছর সৌদি গ্রীষ্মের কবলে পড়েছিলেন।

একজন আরব কূটনীতিক বলেছেন, ‘আরাফাত দিবসের আগে নিরাপত্তা বাহিনীর তাড়া খেয়ে অনেক মানুষ ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন।’ ওই কূটনীতিক আরো বলেছেন, মিসরীয় হজযাত্রীদের বেশি মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল প্রচণ্ড গরম। যার কারণে তাদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য সমস্যা বা জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল।

গতকাল বৃহস্পতিবার সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, মিসরীয় কর্মকর্তাদের তথ্য দিতে এবং মিসরীয় হজযাত্রীদের চিকিৎসাসেবা পেতে সহায়তা করার জন্য হাসপাতাল পরিদর্শন করা হয়েছে। তারা আরো জানায়, প্রচুরসংখ্যক মিসরীয় নাগরিক রয়েছেন, যারা হজ ডাটাবেইসে নিবন্ধিত নন। ফলে নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধান করতে এবং তাদের আত্মীয়দের খুঁজে পেতে দীর্ঘ সময় নিয়ে চেষ্টা চালাতে হচ্ছে।’

মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ আল-সিসি নির্দেশ দিয়েছেন, দেশটির প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘ক্রাইসিস সেল’  হজযাত্রীদের মৃত্যুর বিষয়টি ফলোআপ করবে। প্রেসিডেন্ট মৃতদেহ গ্রহণের সুবিধার্থে এবং প্রক্রিয়াটিকে সহজতর করার জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন বলে তার অফিস থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়াও বৃহস্পতিবার তাদের আরো নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। একজন কূটনীতিক বলেছেন, প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার হজযাত্রীর মধ্যে পাকিস্তান এ পর্যন্ত ৫৮ জনের মৃত্যু রেকর্ড করেছে। ওই কূটনীতিক আরো বলেন, ‘আমি মনে করি মানুষের সংখ্যা, আবহাওয়ার বিবেচনা করলে এই সংখ্যা স্বাভাবিক।’

ইন্দোনেশিয়ার প্রায় দুই লাখ ৪০ হাজার হজযাত্রী ছিল। দেশটি ১৮৩ জন হাজির মৃত্যুর খবর জানিয়েছে। এদিকে মালয়েশিয়া, ভারত, জর্দান, ইরান, সেনেগাল, তিউনিশিয়া, সুদান এবং ইরাকের স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান অঞ্চলও তাদের নাগরিকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। অনেক ক্ষেত্রেই কর্তৃপক্ষ কারণ উল্লেখ করেনি। অন্যদিকে বন্ধু-বান্ধব ও পরিবার নিখোঁজ হজযাত্রীদের সন্ধান করছে। কারণ বহুসংখ্যক হজযাত্রীর কোনো খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে না। সবচেয়ে খারাপ খবরের আশঙ্কায় আত্মীয়রা হাসপাতাল এবং অনলাইনে হজযাত্রীদের সন্ধান করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুই কূটনীতিক বলেছেন, সৌদি কর্তৃপক্ষ মৃত হজযাত্রীদের দাফন প্রক্রিয়া শুরু করেছে। মৃতদেহ দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সৌদি আরব দাপ্তরিকভাবে হজে অসুস্থ, মৃত এবং নিখোঁজ যাত্রীদের কোনো তালিকা বা সংখ্যা প্রকাশ করছে না। মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালের বরাত দিয়ে এএফপি জানিয়েছে, শুধু গত রবিবারই হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য তাপজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৭০০ জনেরও বেশি হজযাত্রী।

হজের সময় গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতিবছর প্রায় ১১ দিন পিছিয়ে যায়, যার অর্থ পরবর্তী বছর হজ জুনের শুরুতে অনুষ্ঠিত হবে। তখন সম্ভবত পরিস্থিতি শীতল থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ