বেসরকারি হাসপাতালগুলোর চিত্র এখনও উদ্বেগজনক। শয্যা ফাঁকা না থাকায় প্রথম সারির অনেক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগীদের। তবে, দুই সপ্তাহ ধরে রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার স্থিতিশীল হওয়ায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে ৫৬টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি করা হচ্ছে। এসব হাসপাতালে এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৫ হাজার ৫৫৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ৯ আগস্ট পর্যন্ত এসব হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে ৭৩ জনের। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ২ হাজার ৮৭ জন।
ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) কর্মরত তাওহীদা খুশবো গত সোমবার এভারকেয়ার হাসপাতালে এসেছিলেন তার ৬ বছর ৭ মাস বয়সী মেয়ে তাহিয়াত জান্নাতকে ভর্তি করাতে। জান্নাতের জ্বর সেদিন ১০৪ ডিগ্রির নিচে নামছিল না। কিন্তু তবু ভর্তি নেয়নি এভারকেয়ার, কারণ তাদের শয্যা খালি ছিল না।
তাওহীদা খুশবো বলেন, মেয়েকে ভর্তির জন্য আমরা এভারকেয়ার হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে যোগাযোগ করলে তারা জানায় ভর্তি নিতে পারবে না, কারণ সিট ফাঁকা নেই।
প্রথম সারির আরেক বেসরকারি হাসপাতাল স্কয়ার হাসপাতালে একই পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয় বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলামকে। ডেঙ্গু আক্রান্ত সন্তানকে তিনিও ভর্তি করাতে পারেননি স্কয়ার হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সন্তানকে ভর্তি করান তিনি।
কয়েক সপ্তাহ ধরে ঢাকার ডেঙ্গু আক্রান্তের হার মোটামুটি স্থিতিশীল রয়েছে, তবে এখন ঢাকার বাইরে আক্রান্তের হার বাড়ছে। ঢাকায় স্থিতিশীল থাকায় সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ কিছুটা কমে এসেছে। তবে প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ আছে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু নিয়ে এ বছর সবাই আতঙ্কে আছে। এ কারণে প্রিয়জনদের কেউ ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে ভালো সেবার জন্য বেশি খরচ করে হলেও প্রথম সারির বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চায়। কিন্তু এখন দেখছি সরকারি হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল রোগী নিতে পারছে না।
রোগী ভর্তি না করা প্রসঙ্গে এভারকেয়ার হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সিট ফাঁকা না থাকলে আমরা কীভাবে ভর্তি নেব বলেন? আমাদের তো নির্দিষ্ট পরিমাণ শয্যাভিত্তিক রোগী ভর্তি করা হয়। শয্যা ছাড়া তো আমরা কোনো রোগী ভর্তি নিতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু যদি কারও ক্রিটিক্যাল হয়ে যায়, কারও যদি আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে আমরা তাদের ভর্তি নিচ্ছি। যারা সাধারণ ডেঙ্গু নিয়ে আসছে, তাদের আমরা ভর্তি নিচ্ছি না। বলছি আমাদের সাধারণ বেড ফাঁকা নেই।
তিনি বলেন, সত্যি বলতে বেডের বিষয়টা এখন জোর দিয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না। এখন বলছি আইসিইউ প্রয়োজন এমন রোগীদের আমরা ভর্তি নিচ্ছি, কিন্তু এক ঘণ্টা পরে এ সিদ্ধান্ত নাও থাকতে পারে। কারণ- আমাদের ইমারজেন্সিতে সবসময় ৮ থেকে ১০ জন রোগী সিরিয়ালে থাকেই। অর্থাৎ এখন ফাঁকা আছে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে সেগুলো পূর্ণ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং ফাঁকা আছে এই বিষয়টি আমরা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারছি না।
পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর ডা. ইশতিয়াক রহমান বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নির্ধারিত কোনো শয্যা বরাদ্দ না থাকলেও নিয়মিত ৪০ থেকে ৬০ জনের মতো ডেঙ্গু রোগী এখানে ভর্তি থাকেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত একজন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হলে মিনিমাম তিন-চার দিন থাকে। আর অন্যান্য কিছু রোগী আছে একদিন থেকেও বাসায় চলে যায়। এ কারণে সিটের বিষয়টি কনফার্ম করে আমরা কখনো বলতে পারি না। হঠাৎ খালি হয়, আবার হঠাৎ সেগুলো ভর্তিও হয়ে যায়।