মিথুন আশরাফ – পেসার হাসান মাহমুদ কী অসাধারণ বোলিংই না করলেন। একাই ৫ উইকেট শিকার করে নিলেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে অষ্টম ম্যাচ খেলতে নেমেই এ কীর্তি গড়লেন। তার বোলিং গতির সামনে হার মানল আইরিশরা। সঙ্গে পেসার তাসকিন আহমেদ (৩/২৬) ও ইবাদত হোসেনের (২/২৯) বোলিং তোপে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ডকে উড়িয়ে, ইতিহাস গড়ে ১০ উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। তিন পেসারই আয়ারল্যান্ডের ১০ উইকেট তুলে নিলেন। এই প্রথম ওয়ানডেতে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট শিকার করে নিতে পারল বাংলাদেশ পেসাররা। ব্যাটিংয়ে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল (৪১*) ও লিটন কুমার দাসই (৫০*) ম্যাচ জিতিয়ে দিলেন। তাতে করে বাংলাদেশ প্রথমবার ১০ উইকেটে ২২১ বল বাকি থাকতে জিতল। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন ইতিহাস গড়ল। সঙ্গে আয়ারল্যান্ডকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজেও হারাল বাংলাদেশ।
প্রথম ওয়ানডেতে ১৮৩ রানে জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তৃতীয় ওয়ানডেতে টস জিতে আগে ব্যাটিং করে মহা বিপদে পড়ে আয়ারল্যান্ড। ১০১ রানেই গুটিয়ে যায়। ২৮.১ ওভার খেলতে পারে। কারটিস ক্যাম্ফার ৩৬ ও লরকান টাকার ২৮ রান করতে পারেন। দুই অংকের ঘরে এ দুই ব্যাটারই শুধু যেতে পারেন। পঞ্চম উইকেটে দুইজন মিলে ৪২ রানের জুটি গড়েন। তা না গড়তে পারলে ১০০ রানের নিচে অলআউট হয়ে যেতে পারত আয়ারল্যান্ড। ৮.১ ওভার বোলিং করে ১ মেডেনসহ ৩২ রান দিয়ে হাসান মাহমুদ ৫ উইকেট শিকার করেন। ১০ ওভারে ১ মেডেনসহ ২৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন তাসকিন। ইবাদত ৬ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট। জবাব দিতে নেমে দুই ওপেনার তামিম ইকবাল ও লিটন কুমার দাসই খেলা শেষ করে দেন। লিটন হাফসেঞ্চুরি করেন। ৩৮ বলে ১০ চারে অপরাজিত ৫০ রান করেন। তামিম ৪১ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় অপরাজিত ৪১ রান করেন। দুইজন মিলে ১০২ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে বাংলাদেশকে সহজেই জেতান। ১৩.১ ওভারে কোন উইকেট না হারিয়ে ১০২ রান করে জিতে বাংলাদেশ।
আয়ারল্যান্ডের ইনিংস শেষ হতেই বোঝা হয়ে যায়, বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই জিততে চলেছে। তাই হয়েছে। তবে এই ম্যাচটিতে হাসান মাহমুদ এবং তাসকিন ও ইবাদত মিলে যে বোলিং করলেন, সেটি নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে হাসান মাহমুদের প্রশংসা চারিদিকে। হাসান মাহমুদ তো প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করলেন। ওয়ানডেতে এই প্রথম কোনো ম্যাচে প্রতিপক্ষের ১০ উইকেট নিলেন বাংলাদেশের পেসাররা।
বাংলাদেশ পেস বোলাররা প্রতিপক্ষের সবকটি উইকেট নেওয়ার ঘটনা এবারই প্রথম ঘটল। এরআগে বাংলাদেশের পেস বোলারদের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল প্রতিপক্ষের ৮ উইকেট নেওয়া। এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ৮টি করে উইকেট বাংলাদেশ পেসাররা নিয়েছিলেন ১২ বার।
সবশেষ যা ছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থে পাকিস্তানের ৮ উইকেট নিয়েছিলেন বাংলাদেশের পেসাররা। ওই ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমান নিয়েছিলেন ৫ উইকেট, আর বাকি ৩ উইকেট নিয়েছিলেন মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট শিকারের আগে হাসান মাহমুদ সর্বোচ্চ ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন। তাও একবার। ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেছিলেন হাসান মাহমুদ। এরপর আর ৩ উইকেটও নিতে পারেননি। এবার প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করে নেন।
শুরুতেই ৩টি উইকেট শিকার করেন হাসান মাহমুদ। দুই ওপেনার স্টিফেন ডোহেনি, পল স্টারলিং ও হ্যারি টেকটরকে আউট করেন হাসান মাহমুদ। এরপর মাঝপথে কার্টিস ক্যাম্ফারকে ও শেষে গ্রাহাম হিউমকে আউট করে ৫ উইকেট শিকার করেন। বোলিংয়ে তিন পেসার হাসান মাহমুদ, তাসকিন ও ইবাদত দেখান ঝলক। ব্যাটিংয়ে তামিম ও লিটন মিলে ম্যাচ জিতিয়ে দেন। বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ১০ উইকেটে জিতে ইতিহাসও গড়ে।