ফিরোজ মান্না ॥ পদ্মা সেতু উদ্বোধন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা। সেতু ও সেতুর দুই পাড়ে চলছে শেষ সময়ের কাজ। দেশের মানুষের স্বপ্ন পুরণের আর মাত্র বাকি ২৩ দিন। আগামী ২৫ জুন সেতু দিয়ে দেশের মানুষ চলাচল করবে। মানুষের আগ্রহ দিন যত যাচ্ছে ততই বেড়েই চলেছে। এমন একটি অর্জনের সাক্ষি হিসাবে দেশের মানুষ দিন ক্ষণ গণনা শুরু করেছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু নিয়ে দেশ বিরোধী কিছু মানুষের চরম বিরোধীতার পরও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তে দেশের টাকায় আজ এমন একটি স্থাপনা নির্মাণ হয়েছে। যা বিশ্ববাসীকেও অবাক করে দিয়েছে। বিরোধীরা এখনও চক্রান্তে লিপ্ত। সরকারও সচেতন রয়েছে।
সেতু বিভাগ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে পদ্মা সেতুতে ৩২৮টি ও দুই প্রান্তের ৩ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার উড়ালপথে (ভায়াডাক্ট) ৮৭টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার পথে ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট বসানোর হয়েছে গত এপ্রিলে। শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবস্টেশন থেকে ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের সংযোগ কেবল স্থাপন করা হয়। সেতুতে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আটটি ফিডার স্থাপন করা হয়েছে। যার মধ্যে চারটি মেইন ফিডার ও ৪টি সাবফিডার রয়েছে।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, সেতুতে টুকিটাকি কাজ চলছে। ১৫ জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। ২৫ জুন সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগ পর্যন্ত চলবে নানা পরীক্ষা নিরিক্ষার কাজ। উদ্বোধনের দিন যাতে কোন ধরণের জটিলতা তৈরি না হয় সে জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ সব সময় সজাগ রয়েছে।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে, গ্যাস লাইন বসানোর কাজ কয়েক দিনের মধ্যেই শেষ হবে। গ্যাস লাইনটি সেতুর রেললাইনের পাশ দিয়েই বসানো হচ্ছে। মূল সেতুর কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। এই কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি ছিল ১২ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায় সেতু নির্মাণের। কোম্পানিটি গত মে পর্যন্ত করেছে ১১ হাজার ৯১৮ কোটি টাকা। মূল সেতু নির্মাণ ব্যয় কিছুটা বেঁচে যেতে পারে।
এদিকে, নদীশাসনের কাজ ৯৩ শতাংশ শেষ হয়েছে। নদীশাসনের কাজটি করছে চীনের সিনো হাইড্রো করপোরেশন। নদীশাসনের কাজের জন্য সিনো হাইড্রোর সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল ৮ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার। নদীশাসনের কাজ ১৫ জুনের মধ্যেই শেষ হবে বলে সেতু বিভাগ জানিয়েছে।
সেতুর টোল আদায়ের জন্য সেতুর দুই পাড়ে টোলপ্লাজা ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ২০১৮ সালে। এ কাজে ব্যয় হয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ভূমি অধিগ্রহণ ও পুনর্বাসনে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। সেতু নির্মাণকাজের তদারকে পরামর্শক ও নিরাপত্তাকাজে ২ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। ট্রাকের ওজন পরিমাপার জন্য ওজন স্কেল নির্মাণ করা হয়েছে। সব কাজ শেষ করতে আর কয়েকটা দিন লাগবে। এরপরই ২৫ জুন মহাকর্মযজ্ঞটি খুলে দেয়া হবে সকলের জন্য।
সেতু বিভাগ জানিয়েছে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকে এই প্রকল্প দেশে-বিদেশে আলোচিত। এ জন্য অনুষ্ঠানটি স্মরনীয় করে রাখতে আকর্ষণীয় করা হবে। বিশ্ববাসীর কাছে সেতুটি নির্মাণের পুরো ইতিহাস তুলে ধরার জন্য নেয়া হচ্ছে সব ধরণের প্রস্তুতি। আর মাত্র ২৩ দিন পরেই এই ইতিহাস বিশ্ববাসী জেনে যাবেন। একই সঙ্গে যারা পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে বিরোধীতা করেছেন তাদের মুখেও চুন কালী পড়বে। দেশের মানুষ এ দৃশ্যটিও দেখার অপেক্ষায় রয়েছে।