নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি \ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে উপবৃত্তির টাকা নিশ্চিত করার নাম করে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতারক চক্ররা বিকাশের মাধ্যমে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কলেজের শিক্ষক পরিচয় দিয়ে এ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিকাশে এ টাকা পরিশোধের পর বিকাশ এজেন্ট ও ভুক্তভোগীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জানা গেছে, বর্তমান সরকার প্রত্যেক স্তরে দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি প্রদান করছে। উপজেলার শিক্ষার্থীরাও নিয়ম অনুযায়ী উপবৃত্তি পেয়ে আসছে। কিছুদিন আগে কলেজ পর্যায়ে উপবৃত্তি প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করে কলেজে পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তালিকা আসার পর থেকে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা ও কলেজের শিক্ষক পরিচয়ে উপজেলার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে শিক্ষার্থীদের নাম-ঠিকানা এবং পিতা-মাতার নাম বা কলেজের ক্লাস রোল পর্যন্ত বলছে প্রতারক চক্র। চক্রটি ফোনে শিক্ষার্থীদের বলছে, তোমার দুই বছরের উপবৃত্তির টাকা জমা হয়েছে। তুমি কি টাকা তুলবে না তুলবে না। তখন বিশ্বাস করে শিক্ষার্থী বা অভিভাবকরা সম্মতি দিলে প্রতারক চক্র তাদের দেওয়া বিকাশ নম্বরে নির্ধারিত অঙ্কের টাকা পাঠাতে বলে।
তারা আরো বলে, এ বিষয়টি কারো সঙ্গে আলাপ করা যাবে না। দ্রুত ১৫-২০ মিনিটের মধ্যে টাকা পাঠাতে হবে। এ টাকা তোমার অ্যাকাউন্টেই থাকবে, কেউ কেটে নিতে পারবে না। ব্যাংক হিসাবের মতো তোমার নামে বিকাশে হিসাব চালু হবে। প্রতারকদের এ কথা বিশ্বাস করে রূপগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি এলাকার অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক বিকাশে টাকা পাঠিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছে। বিকাশে টাকা পাওয়ার পরপরই প্রতারকরা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেয়। ইছাখালী গ্রামের নার্গিস আক্তার জানান, আমার ব্যবহৃত মোবাইলে এই ০১৬১৪-৪১১৫৪৯ নাম্বার দিয়ে কল করে বলে আমার কন্যা নাসরিন আক্তার (২২)এর উপবৃত্তির ২২৫০০ টাকা আসছে। আপনার নিজ বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট নাম্বারের পিন কোডটি বলেন। পরে আমার মোবাইলের পিন কোডটি জানিয়ে দেই। আমার বিকাশ একাউন্টে নগদ ২২৫০০ টাকা ক্যাশ ইন করলে উপবৃত্তির ২২৫০০ টাকা আমার বিকাশ একাউন্টে যোগ হবে বলে জানায় ওই প্রতারক চক্র। তাদের কথা মতো রবিবার(১৯জুন) সকাল ৯টা ৫২ মিনিটের দিকে আমার বিকাশ একাউন্টে আমি নগদ ২২৫০০টাকা ক্যাশ ইন করলে আমার বিকাশ একাউন্ট থেকে তাদের বিকাশ একাউন্টের এই নাম্বারে ০১৬১৮-৭৪৩১৯২ টাকা চলে যায়। পরে আমি তাদের মোবাইলে কল করলে তারা আমার সাথে বিভিন্ন রকমের তালবাহানা মূলক কথা বলে কলটি কেটে দেয়। এ বিষয়ে বিকাশ কাষ্টমার কেয়ার ও রূপগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করি।
এর আগে গত বুধবার (৮জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই নাম্বারে ০১৮৯৩-৭৭৯১০২ দেখি একটি এসএমএস আসছে । এসএমএসে লেখা আছে উপবৃত্তির ৪,৯০০টাকা আসছে। এই টাকা উত্তোলনের জন্য এই মোবাইল ০১৮৭০-৪৪০৩০৮ নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলে। আমার নাম্বারে আবারও একটি এসএমএস পাঠায় এবং এসএসএস নাম্বারের সাথে আমার বিকাশের পিন কোডটি যোগ করে তাদের জানাতে বলে। পরে তাদের জানিয়ে দিলে এই নাম্বার ০১৬১৭-১০৯৬০৬ থেকে ২৫০০০টাকা সেন্ডমানি করে নেয় এই নাম্বারে ০১৮১৯-১৬৬৫৫৪। এছাড়া আরও দুইটি নাম্বারে রিচাজ ০১৭৫৭-০৪৫৯২৫,০১৮২৪-০১৮১১৪ করে। এ বিষয়ে বিকাশ কাষ্টমার কেয়ার ও রূপগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করি। রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ নুসরাত জাহান বলেন, উপবৃত্তির বিষয়ে টাকা চাওয়া বা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারো প্রলোভনে বিভ্রান্ত হয়ে কেউ যেন আর্থিক লেনদেন না করেন। কোনো কিছু জানার থাকলে উপজেলা ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, কলেজ ও স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।