Search
Close this search box.

রাজধানীর দূষণ কমাবে মেট্রোরেল

রাজধানীর দূষণ কমাবে মেট্রোরেল
রাজন ভট্টাচার্য

 

# উত্তরা-মতিঝিল পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৯৪ ভাগ
# মাথা তুলছে লাল-সবুজের স্টেশন

# ২১ কিলোমিটার পথের ভাড়া ৯০টাকা
# ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে পুরো কাজ

# দূষণ কমবে রাজধানীর
# ৩৮মিনিটে ১৭ স্টেশন হয়ে উত্তরা-মতিঝিল
# ঘন্টায় যাবে ৬০ হাজার যাত্রী

আবারো সময় বাড়লো মেট্রোরেল প্রকল্পের। নতুন করে ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৫০ভাগ। সেইসঙ্গে মতিঝিল-কমলাপুর পর্যন্ত পরিধি বেড়েছে এক কিলোমিটার। মূলত যানজট নিরসনে সবচেয়ে আশা জাগানিয়া এই প্রকল্পের দৈর্ঘ বৃদ্ধি, ভূমি অধিগ্রহণের কারণেই টাকা ও সময় দুটোই বেড়েছে।
এরি ধারাবাহিকতায় আগামী বছর ২১ কিলোমিটারের বেশি এই প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি শেষ হচ্ছে না। যদিও ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশটি উদ্বোধন হবে। পুরো প্রকল্প শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। কাজ শেষ হলে ঘন্টায় ৬০ হাজার আর দিনে পাঁচ লাখ যাত্রী পরিবহন করা যাবে। এখন যেখানে তিন থেকে চার ঘন্টা লাগে মেট্রো রেল চালুর পর মাত্র ৩৮ মিনিটে পৌঁছানো যাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৯৪ শতাংশ। এই অবস্থায়, অর্থাৎ প্রকল্পের শেষ দিকে এসে খরচ ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো হয়েছে। বাড়তি ১১ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকার খরচ যোগ করে সংশোধন করা হয়েছে এই প্রকল্প। সেই সঙ্গে এটির মেয়াদ আরও দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সংশোধিত প্রকল্পটি পাস করা হয়েছে। এতে প্রকল্পের খরচ বেড়ে দাঁড়াল ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। সর্বশেষ মেট্রো রেলের খরচ ছিল ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা।

প্রকল্প কর্মকর্তারা বলছেন, মূলত মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ৬ কিলোমিটার বাড়তি অংশ নির্মাণ, প্রতিটি স্টেশনে ওঠানামার জন্য নতুন জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন নতুন অনুষঙ্গ যুক্ত হওয়ায় খরচ বেড়েছে। ইতিমধ্যে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রোরেল সম্প্রসারণে জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া শুরু হয়েছে।

মেট্রোরেল প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে উত্তরা-আগারগাঁও অংশের কাজ শেষ হবে।

পরিবেশবীদরা বলছেন, গোটা বিশে^র মধ্যে দূষিত নগরীর তালিকায় প্রথম সারিতে রয়েছে রাজধানী ঢাকার নাম। এ প্রকল্প চাল হলে যানবাহনের উপর চাপ কমবে। তাছাড়া বিদ্যুতে চলবে ট্রেন। ফলে দূষন কমনে রাজধানীর।

জানা গেছে, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন যেখানে বেশি যাত্রী ওঠানামা করে, এমন মেট্রোস্টেশন যেমন ফার্মগেট, সচিবালয় ও কমলাপুর স্টেশনে যেন পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী আরও নির্দেশনা দেন, ফরিদপুরসহ ওই এলাকার ট্রেন যেন কমলাপুর রেলস্টেশনের পরিবর্তে বিমানবন্দর রেলস্টেশনে গিয়ে থামে। পাশাপাশি মেট্রো প্রকল্প এলাকার মধ্যে যেখানে হাসপাতাল রয়েছে সেখানে শব্দ নিরোধীক যন্ত্র বসানোরও নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে ঢাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্য নিয়ে চলমান মেট্রো রেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশটি আগামী ডিসেম্বরে উদ্বোধনের আগে লাল-সবুজের স্টেশনগুলোতে চলছে শেষ পর্যায়ের কাজ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, এই অংশের নয়টি স্টেশনের শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। দৃষ্টি নন্দন স্থাপত্য শৈলী আর সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে সাজানো হচ্ছে যাত্রী ব্যবস্থাপনা।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার অংশে কাজের অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৯৪ শতাংশ। রেল লাইন বসানোর কাজও প্রায় শেষ হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ট্রায়ালও দেওয়া হয়েছে।

ঢাকাবাসীর স্বপ্নের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার এবং পরের বছর ডিসেম্বরের মধ্যে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৮ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মেট্রোরেল চালু করা যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।

জানতে চাইলে ডিএমটিসিএল এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত নয়টি স্টেশনের সকল ফিটিংস স্থাপন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ইতোমধ্যে সকল স্টেশনের সিঁড়ি, লিফট, এসকেলেটর, টিকেট কাউন্টার, ভেন্ডিং মেশিন, প্রতিবন্ধী যাত্রীর জন্য আলাদা কাউন্টারসহ এক্সিট-এন্ট্রিসহ সকল ধরনের যাত্রী ব্যবস্থাপনার আয়োজন শেষ করা হয়েছে। এখন বিশ্বমানের প্রযুক্তির সমন্বয়ে সাজানো হচ্ছে ষ্টেশনগুলো। শতভাগ কাজ শেষ করার শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনের জ্যেষ্ঠ প্রকৌশলী দায়েম শাকের জানান, ওই স্টেশনের প্রায় ৯৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন বাকি আছে শুধু ক্যামেরা স্থাপন, ফেইস রিকগনিশন মেশিন আর টিকেট মেশিন স্থাপনের কাজ। এসব যন্ত্রপাতি সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। শুধুমাত্র বসানো বাকি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, উত্তরা সেন্টার আইকন স্টেশনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। তবে এই স্টেশনটির নকশা পরিবর্তন করে সৌন্দর্য্য বর্ধনের কাজ বাড়ানো হয়েছে। স্টেশনটির ‘কনসিয়ার্স’ ছাদসহ পুরো স্টেশন জাতীয় পতাকার রং লাল-সবুজের সমন্বয়ে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।
উত্তরা থেকে মতিঝিল হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ১৭টি স্টেশনের মধ্যে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর ১১, মিরপুর ১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও এই নয়টি স্টেশনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে এখন।

উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশনগুলোর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রকল্পের উপ ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, এই অংশের নয়টি স্টেশনের কাজই শেষ পর্যায়ে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ আগামী তিন মাসের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এরপর আগামী ১৬ ডিসেম্বর রেল চলাচলের জন্য উদ্বোধন করা সম্ভব হবে।বর্তমান যে নয়টি স্টেশনের শেষ পর্যায়ের কাজ চলছে তারমধ্যে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবিস্থত উত্তরা উত্তর ষ্টেশনের অগ্রগতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ উদ্বোধনের পর যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১০ সেট ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত জাপান থেকে ১৪ সেট ট্রেন ঢাকায় পৌঁছেছে জানিয়ে তিনি বলেন, একেকটি সেটে ছয়টি করে কোচ থাকবে। এই অংশের যাত্রীর চাহিদা বিবেচনা করে ট্রেন পরিচালনা করা হবে।

জানা গেছে, রেলের নিয়ন্ত্রণ এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বেশ কয়েকটি সিস্টেম থাকবে। জরুরি পরিস্থিতিতে মেট্রো রেলের ভেতর থেকে বাইরে বের হওয়ার জন্য জরুরি বহির্গমন দরজা রাখা হয়েছে।

যাতায়াতের ভাড়া

 

সম্প্রতি মেট্রো রেলের ভাড়া নির্ধারণে গঠিত কমিটির প্রাথমিক প্রস্তাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সর্বনিম্ন ২০ টাকা ভাড়া দিয়ে সর্বোচ্চ দুই স্টেশন যাতায়াত করা যাবে। এক স্টেশন পর নেমে গেলেও ২০ টাকা দিতে হবে। দেশের প্রথম উড়াল এই মেট্রো রেলে ঘণ্টায় ৬০ হাজার এবং দিনে ৫ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করতে পারবেন। মোট ৬টি কোচ নিয়ে প্রতিটি একমুখী ট্রেন ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ১৬টি স্টেশনে থেমে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩০৮ জন যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।
সরকারের এক সমীক্ষায় বলা হয়, রেলটি চালু হওয়ার পর দৈনিক ভ্রমণ ব্যয় ও সময় বাবদ প্রায় ৮ কোটি ৩৮ লক্ষ টাকা এবং যানবাহন পরিচালন বাবদ প্রায় ১ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা সাশ্রয় হবে। বিদ্যুৎ চালিত হওয়ায় মেট্রো রেলে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহার হবে না। ফলে বায়ু দূষণের কোনো সুযোগ নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ