Search
Close this search box.

জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট! দুইজন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার \ অভিনব কায়দায় জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের মাধ্যমে বিদেশগামী সাধারণ মানুষের নিকট থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া প্রতারকচক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ সামিউল ইসলাম সজিব ও মোঃ নাইম হোসেন নিলয়। বুধবার বনানী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।

গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত ১টি ল্যাপটপ, ২টি মোবাইল ফোন ও ৭ টি সীল এবং বেশ কিছু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে এ সংক্রান্তে বিস্তারিত তুলে ধরেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ|

তিনি বলেন, কতিপয় ব্যক্তি কম্পিউটারে বিশেষ সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে আসল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের অনুরূপ নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে বিদেশগামী মানুষের নিকট থেকে প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে মর্মে সংবাদ আসে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাজ শুরু করে ডিবি-সাইবারের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এক পর্যায়ে তাদের অবস্থান শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃতদের অপরাধের কৌশল সম্পর্কে গোয়েন্দা প্রধান বলেন, তারা ২০১৯ সাল থেকে জেএসএন ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্সী নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এশিয়া, মধ্যপাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর জন্য বিদেশ গমনেচ্ছুদের সাথে চুক্তি করতো। এজেন্সির শর্তানুযায়ী, প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা অগ্রিম নিতো। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ও ক্ষেত্র বিশেষে স্বাস্থ্য পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য প্রার্থীদের কাছ থেকে আলাদা করে টাকা নিতো। তারপর অরিজিনাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট না দিয়ে কম্পিউটারে বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে আসল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের অনুরূপ নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানে সফটকপি আকারে সাবমিট করতো।

তিনি আরও বলেন, অতি সম্প্রতি তারা ৩০ জন ব্যক্তিকে রোমানিয়াতে পাঠানোর জন্য চুক্তি করে। ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার জন্য প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সাথে নকল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট জমা দেয়। সংশ্লিষ্ট কোম্পানি যাচাই করে জানতে পারে, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটগুলো ভুয়া। যার ফলশ্রুতিতে উক্ত কোম্পানি ৩০ জন ব্যক্তির ওয়ার্ক পারমিট বাতিল করে দেয়। ফলে প্রার্থীগণ ভোগান্তিতে পড়েন। এমনকি দীর্ঘ দেড় বছর অপেক্ষা করেও তাঁরা আজ পর্যন্ত তাদের প্রত্যাশিত দেশে যেতে পারেননি। টাকাও ফেরত পাননি।

তিনি বলেন, বিদেশ গমন কিংবা দেশের মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকরির ক্ষেত্রে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নিয়ে বিদেশ গেলে মহাবিপদে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি পেশাদার বা চিহ্নিত অপরাধীরাও জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশে যেতে পারে। এজন্য বিদেশ যাওয়ার পূর্বে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সঠিক কি-না তা যাচাই করে নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

উল্লেখ্য, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নকল রোধে বাংলাদেশ পুলিশ রেফারেন্স নম্বরসহ QR কোড সিস্টেম চালু করেছে। যখন অনলাইনে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের জন্য আবেদন করা হয় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ প্রার্থীর দেওয়া তথ্যসমূহ যাচাই করে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট ইস্যু করে। ইস্যুকৃত পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের উপরের বাম পাশে রেফারেন্স নম্বরসহ একটি QR কোড থাকে। এই রেফারেন্স নম্বর ও QR কোডের মাধ্যমে প্রার্থীকে শনাক্ত করা যায়। এমনকি বিভিন্ন নামে ইস্যুকৃত প্রত্যেকটি পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটের QR কোড ভিন্ন। কিন্তু জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এরকমটি পাওয়া যায় না। কেননা প্রতারকচক্র একটি QR কোড ব্যবহার করেই একাধিক জাল পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট তৈরি করে। সেজন্য যাচাই করলে একই নাম ঠিকানা আসবে। একই নাম ঠিকানা আসলেও তা পুলিশের অফিসিয়াল লিংকে শো করবে না।

বনানী থানায় রুজুকৃত মামলায় রিমান্ডের আবেদনসহ গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ