মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
শোকের মাসে জন্মদিনের কথা বলা হৃদয়ের রক্তক্ষরণ। তবু বলতে হবে আগামী প্রজন্মের স্বার্থে। আমি যাদের কথা বলা শুরু করেছি তারা একজন মহিয়সী বঙ্গনারী বংগমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিব আরেকজন তার ৫ সন্তানের দ্বিতীয় এবং তিন পুত্রের জ্যেষ্ঠ প্রজন্মের তারুন্যের প্রতীক বীর মুক্তিযোদ্ধা ভার্সেটাইল জিনিয়াস শেখ কামাল।
বঙ্গমাতার জন্ম ১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট এবং শেখ কামালের জন্ম ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট। উভয়ের জন্ম গোপালগঞ্জ জেলার টুংগিপাড়া গ্রামে বনেদী শেখ পরিবারে। এ বাড়িতে বঙ্গমাতার জীবনসঙ্গী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং আমাদের প্রিয় আরেক ভার্সেটাইল জিনিয়াস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্ম। একেবারেই আবহমান বাংলা। একদিকে কলকল মধুমতি আরেকদিকে বাঘিয়া (স্থানীয় ভাষায় বাইগার নদী) এই দুই নদীর সংযোগ খালের পাড়ে শেখ বাড়ি। প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো। সে সময়কার পাকা দালান আজো বিদ্যমান। গ্রাম মানে গ্রামই, চারদিকে ফসলের মাঠ, চরাচর, হাটার মত রাস্তাও ছিলনা তবে পুরো গ্রামটি ছিল সবুজে সবুজে ফুলে ফলে ভরা এক ছায়া সুনিবিড় ছোট্ট বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কারনে সপরিবারে ঢাকায় এলে তারাও জন্মভিটা ছেড়ে চলে আসেন। বঙ্গমাতা, শেখ কামাল, শেখ হাসিনা সেই ছোটবেলার বাঙালিয়ানাকে এখনো ধারন করেন। অথচ তাদেরই হত্যা করা হলো ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। কাকতালিয়ভাবে বেঁচে যাওয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে দেখলে শেখ পরিবারের বাঙালিয়ানার পরিচয় পাওয়া যাবে। এতো কষ্টের মধ্যেও দুজন যেভাবে জাতির সেবা করে যাচ্ছেন তা এক অনন্য উদাহরণ।
গত ৫ আগস্ট শেখ কামালের জন্মদিনের ওপর আমি দৈনিক পথে প্রান্তরে একটি কলাম লিখেছি, যা চাঁদপুর থেকে প্রকাশিত চাঁদপুর প্রবাহেও ছাপা হয়েছে একইদিনে। আজ আমি বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে কলাম লিখতে বসেছি। চোখের সামনে ভাসছে বুকে আগলে রাখা আদরের সন্তান শেখ রাসেলের ছবি। দুজনই সমস্ত শরীর রক্তাক্ত হয়েছে বর্বর পশুদের গুলিতে গুলিতে। এতোটুকু মানবিক মূল্যবোধও খুনীদের মধ্যে ছিলনা। ততোক্ষনে খুনী মিলিটারী জিয়া ও খুনী মুনাফিক মুশতাকের ভাড়াটিয়া সশস্ত্র কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশীদ, মেজর হুদা, রিসালদারের হিংস্র পশুদের দল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জ্যেষ্ঠপুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালকে হত্যা করেছে। যখন মুয়াজ্জিন ফজরের আজান দিচ্ছিলেন “হাইয়ো আলাস চলাহ” (নামাজের জন্যে জেগে ওঠ) এবং “আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম” (নিদ্রার চেয়ে নামাজ উত্তম) ধ্বনি সারা ঢাকা শহরের মসজিদে মসজিদে ধ্বনিত হচ্ছিল তখনই খুনীরা এক এক করে সবাইকে হত্যা করতে শুরু করে। বঙ্গমাতা তখন কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলকে বুকের মধ্যে লুকিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকেন। খুনীরা সেখানেই তাদের দুজনকে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। বঙ্গমাতা কিংবা শেখ রাসেলের কাকুতি তাদের মনে এতোটুক দাগ কাটলনা। অথচ খুনীরা নাকি তথাকথিত ‘ইসলামী বিপ্লব’ করেছিল। ইসলামের শত্রু আর কারে কয়?
আগেই বলেছি আমার সামনে বঙ্গমাতা বেগম মুজিবের রক্তাক্ত দেহ। (অর্থাৎ আমার মনো জগতে এমন চিত্র আকা রয়েছে)। এ অবস্থায় বঙ্গমাতার জন্মদিন আলোচনা করছি। জন্মদিন আনন্দের ব্যাপার। এ লেখায় সেই আনন্দ-বেদনার ভাষা দেবার চেষ্টা করব।
বঙ্গমাতার জন্মও শেখ পরিবারে। খুব ছোট বেলায় বাবা-মা দুজনকে হারানোর পর বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফুর রহমান এবং মাতা শেখ সায়েরা খাতুনের কাছে বড় হন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর তাদের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বিবাহ দেন। শুরু হয় বঙ্গমাতার কঠিন জীবন সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই জেলে থাকতেন। তখন বঙ্গমাতাই সব সামলাতেন। বঙ্গমাতার ডাক নাম ছিল রেনু। বঙ্গবন্ধু রেনু বলে ডাকতেন। এই রেনু কেবল বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী কিংবা সন্তানদের মানুষ করা সংসার ধর্ম পালনকারিই ছিলেন না, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক পরিবার তথা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগকেও বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে পরিচালনা করতেন। বর্তমান আওয়ামীলীগের প্রবীন নেতা আমির হোসেন আমু এমপি এবং তোফায়েল আহমেদ এমপির কাছে শুনেছি বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে তখন ছাত্রলীগের আন্দোলনের জন্যে অর্থের দরকার। বঙ্গমাতা তাদের ডেকে টাকার ব্যবস্থা করতেন। এই টাকা তিনি সংগ্রহ করেন নিজের সোনার গহনা বিক্রী করে। গোলার ধান বিক্রী করেও টাকা দিতেন। এই ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুর জেল জুলুম ফাঁসির হুকুমেও এতোটুকু বিচলিত হতেননা। বরং অত্যন্ত ধীরস্থির এবং দূরদর্শিতার সাথে পরিস্থিতির মুকাবিলা করতেন। কারাগারে বসে লেখাপড়া করার জন্যে তিনিই বঙ্গবন্ধুকে খাতাকলম দিয়ে আসতেন কারাগারে, যার ফলশ্রুতিতে আমরা “অসমাপ্ত আত্নজীবনী” এবং “কারাগারে রোজনামচা” দুখানা অমূল্য সম্পদ পেয়েছি। পেয়েছি নয়াচীন ভ্রমেনের কাহিনী।
রমনা রেসকোর্স বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর একাত্তরের ৭ ই মার্চের ভাসনের ব্যাপারে কেউ কেউ এই পরামর্শ ঐ পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে দাবী করেন। কেউ এমন দাবীও করেন যে তারা বঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবীর পকেটে চিরকুট দেয়েছিলেন এবং তাতে নাকি কী বলতে হবে তার বর্ননা ছিল। আসলে সব ভুয়া। একটু ক্রেডিট নেবার জন্যে এসব বলেছেন। অল্প দিনেই আসল সত্য বেরিয়ে আসে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে প্রকৃত সত্য ও তথ্য আবিষ্কৃত হতে বেশিদিন লাগেনি। বঙ্গবন্ধু ৫ মার্চ থেকে তার ধানমন্ডি বাসভবনে রাজনৈতিক ছাত্র, শ্রমিক, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, বুদ্ধিজীবী তথা বিভিন্ন পেশার প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করেন। ৭ ই মার্চ ১৯৭১ বেলা ১১ টা পর্যন্ত আলোচনা করেন। ১১ টার দিকে বঙ্গমাতা তাকে দোতালায় ডেকে নেন এবং কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে বলেন। ঐ সময় শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর পা টিপ ছিলেন এবং বঙ্গমাতা মাথা টিপে দিচ্ছিলেন। তারপর সময় হলে গোসল করে কিছু খেয়ে কাপড় পড়ে রেসকোর্সের দিকে যাবার প্রস্তুতি কালে বঙ্গমাতা বললেন, “অনেকে অনেক পরামর্শ দেবে, তুমি কারো কথা শুনবে না। সারা জীবন রাজনীতি করেছ, কারাভোগ করেছ, মানুষ ছিল তোমার রাজনীতির বিষয়। রাজনীতির জীবনে তোমার মনোজগতে তা আঁকা আছে। তাই তোমার মন যা বলবে তাই তুমি বলে দেবে”। বঙ্গবন্ধু তাই করেছিলেন। আমরা সেদিন মঞ্চের কিছু দূরে ছিলাম। আমরা দেখিনি কেউ কোন পরামর্শ দিতে বা কারো চিরকুটের জন্য পকেটে হাত দিতে। বরং ১৯ মিনিটে ১০৯৫ শব্দের মহাকালের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দেন।
একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকি মিলিটারি জান্তা যখন ট্যাংক কামান নিয়ে ঢাকাস্থ বিভিন্ন শহরে নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যা শুরু করে। জান্তারা বঙ্গবন্ধুর ৩২ নং বাড়িও ঘেরাও করে এবং গুলি বর্ষণ শুরু করে। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন যা তৎকালীন ইপিআরের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচারিত হয়। রাত দেড়টার দিকে জান্তা বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে এবং পাকিস্তানের কারাগারে নিয়ে যায়। বঙ্গমাতা সন্তান নিয়ে অন্য বাড়িতে চলে যান। সেখান থেকে জান্তা তাদের গ্রেপ্তার করে ধানমন্ডি ১৮ নং এর একটি বাড়িকে সাব জেল ঘোষনা করে তাতে থাকতে দেয়। তার আগেই দুই ছেলে শেখ কামাল ও শেখ জামালকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ভারত পাঠিয়ে দেন। বঙ্গমাতার সাথে ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা শেখ হাসিনা ও তার স্বামী অণুবিজ্ঞানী ডক্টর এম ওয়াজেদ আলী মিয়া, শেখ রেহেনা ও শেখ রাসেল। বাজার করতে পারছেন না, টাকা পয়সা ছিল না, তাই চাল ডাল এর খিচুড়ি বানিয়ে জীবন ধারণ করেছেন। ঐ বন্দি অবস্থায়ই শেখ হাসিনার ছেলে জয়ের জন্ম হয়। ১৬ ডিসেম্বর দেশ শত্রুমুক্ত হলে বঙ্গমাতাদের মুক্ত করেনি পাকি মিলিটারী জান্তা। পরে ভারতীয় মেজর তারার নেতৃত্বে একদল কমান্ডো ১৮ ডিসেম্বর তাদের মুক্ত করে।
শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিবের জীবন দর্শন শাশ্বত বাঙালি নারীর প্রতিকৃতি। তুলনা হতে পারে কেবল অপর মহিয়সী নারী বেগম রোকেয়া সাখাওয়াতের। বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত অবরোধবাসিনী নারীদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে সংসার ধর্মের বাইরেও যে সমাজে রাষ্ট্রে নারীদের করণীয় আছে তার পথ দেখিয়েছেন, শেখ ফজিলাতুন্নিসা মুজিবও বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক সংসার এবং রাজনৈতিক সংসার দু’টিই সমভাবে সামলেও যে গণমানুষকে পথ দেখানো যায়, সাধারণ গৃহবধূ হয়েও আন্দোলন সংগ্রামের পতাকা তুলে ধরা যায় তার অনুকরণীয় উদাহরণ সৃষ্টি করে গেছেন। বঙ্গবন্ধু জীবনের বেশির ভাগ সময়ই কারাগারে কাটিয়েছেন। বেগম মুজিব কখনও তাঁকে পিছু টানেননি। বরং শত দুঃখ কষ্টের মধ্যেও যেমন ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন তেমনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সংসার ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগকেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে ছাত্রলীগ নেতাদের দিকনির্দেশনার পাশাপাশি অর্থেরও জোগান দিয়েছেন। সংসারের ধান-চাল বেঁচেও। নিজে যেমন বাঙালি মুসলমান গৃহবধূর মত সাদামাটা জীবন যাপন করেছেন। পোশাক-আশাকও তেমনি এবং রুচিসম্মত। এক মুহুর্তের জন্যেও মাথার কাপড় সরতো না। অনেক সময় অর্থাভাবে ছেলে মেয়েদের খাবার থালার খিচুড়ির বাইরে কিছু দিতে পারেননি। ঐ পরিবারে এ জন্যে কোনো আফসোস ছিল না। বরং লেখাপড়ার পাশাপাশি সংস্কৃতি চর্চায় মনোনিবেশ ছিল ঐতিহ্য। এমনকি বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির অবিসংবাদী নেতা বাঙালির জাতি রাষ্ট্রের পিতা বা রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী হবার পরও অর্থাৎ রাষ্ট্রের সর্বাধিনায়ক হবার পরও বেগম মুজিবের পোশাক পাল্টায়নি, গায়ে বিদেশী শিপন ওঠেনি। বিদেশ থেকে মে-কাপ ওম্যান এনে চেহারা চুল সাজাননি। ঠিক একইভাবে দেখা গেছে তাঁদের আদরের প্রথম সন্তান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে আসতেন সাধারণ সূতি শাড়ি পরে। শেখ কামালকেও কখনো শার্ট ইন করে ক্যাম্পাসে আসতে দেখা যায়নি। ওপেন ফুলহাতা শার্ট, প্যান্ট আর পায়ে সাধারণ স্যান্ডেল। কোনদিন স্যূট পরতে দেখা যায়নি। কেবল একবার দেখা গেছে বিয়ের সময়। ছাত্রলীগ করতেন কিন্তু কোনদিন নেতৃত্বের আসনে বসেননি। পরিবারের ঈঁষঃঁৎব ছিল ‘ঝরসঢ়ষব ষরারহম যরময ঃযরহশরহম’।
বেগম ফজিলাতুন্নিসা মুজিব গোপালগঞ্জ মিশন হাই স্কুলে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত পড়েছেন- এই ছিল তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, কিন্তু বাসায় ধর্ম, দর্শন, মহাপুরুষদের জীবনী পড়তেন। শুনেছি বার্ট্রান্ড রাসেল পড়তে পড়তে ‘রাসেল’ শব্দটি পছন্দ হয় এবং এইভাবেই ছোট ছেলের নাম রাখেন শেখ রাসেল। রাজনৈতিক সচেতনতার বিষয়টি যেমন নিজের জীবনের উপলব্ধি দিয়ে শানিত করেছেন তেমনি ছেলেবেলা থেকেই মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়াদী; তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, পল্লী কবি জসিম উদ্দিন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, জহুর হোসেন চৌধুরী, ফয়েজ আহমেদ, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, এম আর আখতার মকুল, এবি এম মূসা প্রমুখকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন। শেখ হাসিনাসহ সন্তানরাও এভাবেই বড় হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর মত কালজয়ী ব্যক্তিত্ব তো ঘরেই রয়েছেন। আজকাল একজন নেত্রী নামের পেছনে ‘আপোষহীন’ শব্দটি ব্যবহার করেন। অথচ বেগম মুজিব আন্দোলনে-সংগ্রামে কতখানি আপোষহীন, দেশের প্রতি কতখানি বিশ্বস্ত থেকেছেন তার একটি উদাহরণ – বঙ্গবন্ধু তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার অভিযোগে ক্যান্টনমেন্টে বন্দী। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করারও ষড়যন্ত্র চলছে। তৎকালীন মিলিটারি স্বৈরাচার আইয়ুব খাঁ পশ্চিম পাকিস্তানে নেতাদের বৈঠক আহবান করলেন এবং বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বৈঠকে যোগদানের আমন্ত্রণ জানালেন। কেউ কেউ এও বলেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবন রক্ষা হোক চাইলে প্যারোলে মুক্তি দরকার। নেতাদের অনেকেই এ প্রস্তাবে রাজী ছিলেন কিন্তু বেগম মুজিব এত বড় আপোষহীন দূরদর্শী ও দেশপ্রেমিক ছিলেন যে স্বামীর জীবন ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও প্যারোলের বিপক্ষে দাঁড়ালেন এবং প্যারোলে মুক্তি না নেওয়ার জন্যে চিঠি লিখে কন্যা শেখ হাসিনা ও জামাতা ওয়াজেদ মিয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর কাছে বার্তা পাঠালেন। সমাজ বিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক গবেষকগণ তাঁকে বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সহযোদ্ধা হিসেবে মনে করেন। বঙ্গমাতার সাথে আরো দুজন বঙ্গনারীর সাজুয্য লক্ষ করা যায়, একজন বেগম সুফিয়া কামাল অন্যতম লাকসাম পশ্চিম গাঁ নবাব বাড়ির নবাব ফয়েজুন্নেসা চৌধুরানী। নবাব ফয়েজুন্নেসা বেগম রোকেয়ার আগেই নারী শিক্ষা প্রসারের ব্রত নিয়ে সংসার ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। কুমিল্লা ফয়েজুন্নেসা গার্লস হাইস্কুল, পশ্চিম গাঁও ফয়েজুন্নিসা কলেজসহ বহু স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সাহিত্যচর্চাও করতেন। তার গ্রন্থগুলি এখন আর বাজারে পাওয়া যায় না।
লেখক- সংসদ সদস্য, এডভাইজার এডিটর দৈনিক পথে প্রান্তরে।