Search
Close this search box.

চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে আইনি নোটিশ এবং আমাদের গল্প বলার স্বাধীনতা

সব্যসাচী দাশ ॥ যেসব সাংবাদিক চলচ্চিত্র নিয়ে সংবাদ বা প্রতিবেদন তৈরি করেন, তারা জানেন গত দেড় দশকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের দর্শক গ্রহণ যোগ্যতা কতটা নিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। মোটকথা এই শিল্পটা এখন ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে। শেষ আঘাতটা আসে কোভিড ১৯ এর শাসন আমলে। অত:পর যখন ধীরে ধীরে সবকিছু স্বাভাবিক হতে শুরু করে, তখন চলচ্চিত্র নির্মাণে নিবেদিত প্রাণ যে কজন অবশিষ্ট আমাদের মধ্যে আছেন তারা আবার খেয়ে না খেয়ে নেমে পড়েন শিল্পের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দিতে।

এমনই শিল্পাশ্রিত চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। মুক্তির আগে এবং পরে এই চলচ্চিত্র দর্শকদের শক্তিশালি চুম্বকের মতো প্রেক্ষগৃহে টেনেছে। দর্শক দেখেছে। মুগ্ধ হয়েছে। আবার দেখেছে। গত দেড় দশকের ক্ষুদা দুই ঘন্টায় নিবারণ করেছে! এই যখন অবস্থা তখন কারও কারও এই শিল্পকর্ম হজম হয়নি। বমি করেছেন! শেষে বলে ফেলেছেন, না এই জিনিস খাওয়া যাবেনা। কিন্তু, একবারও বলেননি এই ‘হাওয়া’, খাওয়ার জন্য সবাই উপযুক্ত নয়। শেষে রাস্তা খুঁজে নিকটবর্তী গোরস্থানে নিয়ে যাওয়া হলো চলচ্চিত্রটিকে, জীবিত দাফন করার উদ্দেশে। সব যখন ঠিক-ঠাক তখন প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর ছড়িয়ে পড়ল হাওয়া হাওয়া.. এখন হজমে সমস্যা মানুষগুলোর পেট ফাঁপা দিতে শুরু করেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলন হয়। ‘বাংলা চলচ্চিত্র বা কনটেন্টে সেন্সরশিপের খড়গ-গল্প বলার স্বাধীনতা চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে নির্মাতা, শিল্পী ও কলাকুশলীরা। সভায় উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য চলচ্চিত্র শিল্পাঙ্গনের গুণী জনেরা। তাদের মধ্য থেকে জয়া আহসান দৃঢ় কণ্ঠে ‘হাওয়া’ ছবি নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। তিনি বলেন, ‘কোনো শিল্পকলা আসলেই কি কোনো শর্ত মেনে চলতে পারে? কোনো চলচ্চিত্র কি শর্তসাপেক্ষে তৈরি হতে পারে? তাহলে চলচ্চিত্র কেনো? প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে আমার নিজের একটা খাঁটি আবেগ আছে। সেই জায়গা থেকে প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে আমি যদি আরও বেশি কথা বলি। তাই বলে কি চলচ্চিত্র বন্ধ করতে হবে?

তিনি বলেন, বন উজাড় হচ্ছে, দিনের পর দিন পশুপাখির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে এগুলোর বেলায় বনবিভাগ বা প্রশাসন কোথায়? চলচ্চিত্রের বেলায় প্রশাসনের একটা চাপ কেনো? সব চরিত্র যদি নিয়ম মেপে চলতে থাকে তাহলে তো কোনো ফিকশনই তেরি হবে না। আমরা কি তাহলে চলচ্চিত্র নির্মাণ করবো না? আমরা কি তাহলে গল্প বলবো না?

এই অভিনেত্রী বলেন, ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি নিয়ে এখন কথা হচ্ছে। এটা নিয়ে আমরা অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছি। হলি আর্টিজেনের ঘটনা কি আসলে ঘটেনি? ঘটেছে তো। সেগুলো নিয়ে লেখালেখি হয়েছে। কিছুদিন আগে শাহিন আক্তার একটি উপন্যাস রচনা করলেন। সেগুলো কি আমরা আটকাতে পেরেছি। চলচ্চিত্রের বেলা কি অসুবিধা? আমার জন্মদিন ১লা জুলাই। হলি আর্টিজেনের ঘটনা নিয়ে আমি এতোটা ট্রমাটাইজ হয়ে আছি যে আমার জন্মদিনটা আমি পালন করতে পারি না। আমার মনে হয় ওই দিনটিতে একটা কাল দাগ লেগে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলাম, তারিক আনাম খান, শম্পা রেজা, আফসানা মিমি, নুরুল আলম আতিক, মাসুম রেজা, কামার আহমেদ সাইমন, অমিতাভ রেজা, পিপলু আর খান, মেজবাউর রহমান সুমন, জয়া আহসান, চঞ্চল চৌধুরী, গাউসুল আলম শাওন, ইরেশ যাকের, আজমেরী হক বাঁধন, জাকিয়া বারি মমসহ শিল্প-সংস্কৃতির অনেকে। দিন দিন আমাদেও সৃজনশীলতার সব দুয়ার বন্ধ হতে চলেছে। যে বিষয়গুলো খুব স্বাভাবিক সেগুলোকে ও আর স্বাভাবিক থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। পদে পদে প্রয়োজন হচ্ছে প্রতিবাদের। যে কারণে আমাদের নিজস্ব শিল্প , সংস্কৃতি দিন দিন পথ হারাচ্ছে- এমনটা মনে করেন সভায় উপস্থিত বক্তরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ