স্টাফ রিপোর্টার \ জিমনেসিয়াম ব্যবসার আড়ালে সাধারণ মানুষদের আটক রেখে মুক্তিপন আদায়কারী চক্রের মূলহোতাসহ ৫ জনকে ফেনী থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
র্যাব বলছে, সুনর্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে র্যাব-৭ এর একটি আভিযানিক দল শুক্রবার রাতে ফেনী মডেল থানার মহিপাল এলাকা থেকে অপহরণের সাথে জড়িত মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল (৩৪), আনোয়ার হোসেন (২৫), আব্দুল্লাহ আল মামুন (২৬), জাহিদ হোসেন (১৫) এবং রফিকুল ইসলাম আরিফ (২১) দেরকে গ্রেফতার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে লোহার রড, জিআই পাইপ, প্লাস, ছুড়ি অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
র্যাবের দাবী, গ্রেফতারকৃতরা দীর্ঘদিন যাবৎ মুক্তিপনের জন্য মানুষকে অপহরণ করে পরবর্তীতে তাদের জিম্মি করে পরিবার পরিজনের নিকট থেকে মুক্তিপন আদায় করে আসছিল।
র্যাব জানায়, গত ২৫শে আগষ্ট কুমিল্লার একটি বেসরকারী কোম্পানীতে কর্মরত একজন ভুক্তভোগী র্যাব-৭ কার্যালয়ে এসে লিখিত অভিযোগ দেন। ঘটনার বিবরনে তিনি উল্লেখ করেন, গত ২৪ আগস্ট আনুমানিক দুপুর ১২টায় তিনি ফেনীর ট্রাংক রোডে অফিসের কাজ শেষে মদিনা বাস স্ট্যান্ড থেকে চৌদ্দগ্রাম এর উদ্দেশ্যে দুপর ১২.৪৫ মিনিটে রওয়ানা দেন। বাস ছাড়ার আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর বিসিক রাস্তার মোড়ে দুই জন স্টুডেন্টসহ তিনজন ব্যক্তি ওই বাসকে সিগন্যাল দিয়ে থামিয়ে তাকে গাড়ী থেকে নামতে বলেন। তিনি গাড়ী থেকে নামার পর তারা তাকে একটি চায়ের দোকানের ভিতরে নিয়ে যায় এবং তার পকেটে থাকা ২,২০০/টাকা এবং মোবাইল ফোন জোরপূর্বক কেড়ে নেয়। পরবর্তীতে তাকে সিএনজির মাধ্যমে ফেনী মডেল থানার একটি জিম সেন্টার এর নিচ তলার রুমে নিয়ে আটকে রাখে এবং তাকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি ও চর-থাপ্পর দেয় এবং তার কাছে এক লক্ষ টাকা মুক্তিপন দাবী করে এবং টাকা না দিলে জীবন নাশের হুমকি দেয়।
পরবর্তীতে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল হতে অপহরণকারীরা তার স্ত্রীর কাছে ফোন করে এক লক্ষ টাকা দাবী করে এবং উক্ত টাকা না দিলে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হবে বলে ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। তখন ভিকটিমের স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে ভয়ে তাৎক্ষনিভাবে বিকাশের মাধ্যমে তিন হাজার টাকা প্রেরণ করে। অল্প টাকা পেয়ে অপহরণকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ভিকটিমের সাথে একটি মেয়ের আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ফোনের মাধ্যমে ধারন করে এবং ভিকটিমকে এসএস পাইপ দিয়ে পিটিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত করে এবং তার স্ত্রীকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বলে ‘‘যেখান থেকে পারেন টাকা এনে দেন, টাকা না দিলে আপনার স্বামীকে ফেরৎ পাবেন না, এবং টাকার সাথে আপনার স্বামীর এনআইডি কার্ড এবং ডিবিবিএল এটিএম কার্ড সাথে নিয়ে আসবেন।
এই কথা শুনে ভিকটিমের স্ত্রী কোন উপায় না পেয়ে ২৫ আগস্ট রাত ১ টায় নগদ ২৫,০০০/- টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড নিয়ে ঘটনাস্থলে নিয়ে আসে। তখন অপহরণকারী মোঃ ইমতিয়াজ উদ্দিন তোফায়েল উক্ত টাকা এবং এনআইডি কার্ড, এটিএম কার্ড বুঝে নিয়ে পরবর্তীতে আরো পঁঞ্চাশ হাজার টাকা দাবী করে সাদা কাগজে ভিকটিমের স্বাক্ষর নেয় এবং ওই টাকা না দিলে এবং কোন প্রকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানালে ধারনকৃত সাজানো ভিডিও চিত্রগুলো সোস্যাল মিডিয়ায় ছেড়ে দিবে বলে হুমকী প্রদান করে ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়।
র্যাব-৭ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো: নুরুল আবসার জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগ পাওয়া পরপর র্যাব আসামীদের গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে এবং এই জঘন্যতম অপকর্মের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতদের পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।