স্টাফ রিপোর্টার – ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সম্পর্ক সুসংহত করে এগিয়ে যেতে চাই। সেখান থেকে শূন্য হাতে ফিরে আসিনি। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারত সফর নিয়ে বুধবার বিকেলে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা একথা বলেন। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনানো শুরু করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার প্রেক্ষিতে দীর্ঘ তিন বছর বিরতির পর আমার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ভারতীয় শীর্ষ পর্যায় থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি যে ভালোবাসা লক্ষ্য করেছি, তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। শেখ হাসিনা বলেন, ভারত সফর বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্তের সূচনা। সম্পর্ক সুসংহত করে এগিয়ে যেতে চাই। তিনি বলেন, একটা দেশের সঙ্গে সমস্যা থাকতেই পারে, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। আমাদের নীতি সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়।
ভারতের কাছ থেকে আমরা কী পেলাম- জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে বাংলাদেশের চারদিকে কিন্তু ভারত। সেই বন্ধুপ্রতীম দেশ থেকে সবদিক দিয়ে যে সহযোগিতা…আমরা পাইপ লাইনের মাধ্যমে কিন্তু তেল নিয়ে আসছি। রিফাইন করা তেল সহজেই পাবে। উত্তরাঞ্চলের তেল সহজেই পাওয়া যাবে। পণ্য আমাদের আমদানি করতে হয়। সব জায়গায় অনেক সময় সমস্যা দেখা দেয়, সেটা নিয়েও কথা হয়েছে। ভারতের কাছ থেকে যাতে এলএনজি আনতে পারি..এরকমভাবে যদি চিন্তা করেন, অনেক কিছু পেয়েছে। শূন্য হাতে ফিরে আসিনি।
সফরে দেশটির আন্তরিকতা কেমন ছিল- এমন প্রশ্নে সরকারপ্রধান বলেন, ভারতের আন্তরিকতা সবসময়ই ছিল। বাংলাদেশের বিষয়ে ভারতের সব দলমত এক থাকে। একাত্তরে যেমন এক হয়ে সমর্থন দিয়েছিল। আবার ছিটমহল যখন বিনিময় করি ভারতের সংসদে যখন এটা পাস হয়, তখন সেখানকার সব দল কিন্তু সমর্থন দিয়েছিল। একটা দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে। তবে সেসব আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি অন্তত পরিষ্কার- কারও সাথে বৈরিতা নয়, সকলের সাথে বন্ধুত্ব। ’৯৬ সালের পর আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা নিয়ে কেউ কথা-ই বলেনি। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। তবে এতে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনও ফাটল ধরেনি।
কুশিয়ারা নদীর পানি পাওয়ার বিষয়ে ও সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী কবে নাগাদ পানি পাওয়া যাবে- জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ও ইন্ধিরা গান্ধীর সময়ে যে চুক্তিগুলো হয়েছিল; সেগুলো বাস্তবায়ন হলে দু’দেশ অনেক এগিয়ে যেতো। সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়েছে, সব জলাভূমির নাব্যতা ফিরিয়ে এনে জলাধার সংরক্ষণ করা। সেচের খালগুলো নতুন করে মেরামত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যৌথ নদী কমিশনের মিটিং হয়ে গেছে। দ্রুতই এই সমঝোতা বাস্তবায়ন হবে। এখানে যেহেতু পানিটা পাব, আমরা এটা দ্রুত করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়ে যারা সমালোচনা করেছে, তারা কী করেছে? আমরা তো ঋতু বদলের মতো সব ভুলে যাই। খালেদা জিয়া যখন ভারত সফরে গেল, সেখান থেকে ফিরে এসে বললো; গঙ্গা নদীর পানির কথা বলতে ভুলেই গিয়েছিল। অর্থাৎ গঙ্গায় পানির অধিকার নিয়ে কথা বলতে, নিজের অধিকার নিয়ে কথা বলতে ভুলে যায়। এটা আপনারা একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন না। তারা তো ভুলে গিয়েছিল, আমরা কিন্তু ভুলি নাই। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গা চুক্তি করে এসেছি। দেশের স্বার্থের কথা তারা (বিএনপি) ভুলে যায়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর ভারতের পণ্য যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে, শুল্ক তুলে দিয়েছিল। ভারতের পণ্য বাংলাদেশে সয়লাব হয়ে গিয়েছিল। সাইফুর রহমান সবকিছু ওপেন করে দিল। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কী যাবে, সেটা কিন্তু কিছু করেনি। নতুন প্রজন্মের কাছে এগুলো জানানো উচিত।
উল্লেখ্য, গত ৫ সেপ্টেম্বর চার দিনের সফরে ভারতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক হয়। এ ছাড়া ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের সঙ্গেও পৃথক সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন শেখ হাসিনা। সফরে যেসব বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে- অভিন্ন নদী কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহার, ভারতে বাংলাদেশের রেলকর্মীদের প্রশিক্ষণ, বাংলাদেশ রেলওয়ের আইটি সিস্টেমে ভারতের সহযোগিতা, ভারতে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল অফিসারদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা বৃদ্ধি কর্মসূচি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে ভারতের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ও বাংলাদেশের কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে সমঝোতা, মহাকাশপ্রযুক্তিতে সহযোগিতা এবং প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) মধ্যে সম্প্রচার সহযোগিতা। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য সম্পর্ক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সহযোগিতা, নিরাপত্তা সহযোগিতা, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, মাদক চোরাচালান ও মানবপাচার রোধ-সংক্রান্ত বিষয়গুলো অগ্রাধিকার পায়।