স্টাফ রিপোর্টার- মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডধারীদের একাউন্টের তথ্য নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারণা চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর গোয়েন্দা গুলশান বিভাগ।
গ্রেফতারকৃতরা হলো মোঃ সোহেল মীর, মোঃ নাজমুল হোসেন, পারুল ও মোঃ তারা মিয়া।
শুক্রবার ও শনিবার রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভার এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের গুলশান জোনাল টিম।
শনিবার ডিএমপির ডিবি কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার)।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যেকোনো দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ একাউন্টে টাকা লোডও করা যায়। আর এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়ে এসকল কার্ড ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল একটি প্রতারক চক্র। এধরণের কয়েকটি ঘটনায় গুলশান, বনানী এবং হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা রুজু হয়। গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মাহবুবুল হক সজীবের টিম মামলাগুলির ছায়া তদন্ত শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়। পরব্তীতে রাজধানী ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে সোহেল, নাজমুল, পারুল ও তারা মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তিনি বলেন, এ চক্রের এক সদস্য বিভিন্ন কার্ডধারীদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে গ্রেফতারকৃত নাজমুল ও সোহেলের কাছে পাঠায়। সোহেল ও নাজমুল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্রাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে ভিসা এবং মাস্টার কার্ড ব্যবহারকারীদের নাম্বারে ফোন দিয়ে তথ্য হালনাগাদ, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের পরিবর্তে ছয় ডিজিট ও ইমেইল আপডেট না করার কারণে কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে মর্মে জানায়। অনেক কার্ডধারীর একাউন্টে বড় অংকের ব্যালেন্স থাকায় আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে প্রতারকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এভাবে সংগৃহীত তথ্য থেকে ১৬ ডিজিটের নাম্বার, কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, কার্ডের বিপরীত পাশে উল্লিখিত ৩ ডিজিটের সিকিউরিটি পিন নাম্বার সংরক্ষণ করে। পরবর্তীতে গ্রাহকদের নিকট ওটিপি কোড প্রেরণ করে। কৌশলে প্রেরিত ওটিপি কোড সংগ্রহ করে বিকাশ এ্যাপে ঢুকে ‘কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করে।
তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বিকাশ একাউন্ট হ্যাক করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটলেও মাস্টার কার্ড অথবা ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সাথে প্রতারণার বিষয় নতুন হওয়ায় অনেক ব্যবহারকারী প্রাথমিকভাবে সন্দেহ প্রকাশ করেন না। অনেকেই কার্ড স্থায়ীভাবে সাসপেন্ডে হয়ে যাওয়া ও কার্ডে জমা অর্থের ক্ষতির আশঙ্কায় প্রতারকদের বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যেই তথ্য দিয়ে দেয়।
মাস্টার কার্ড বা ভিসা কার্ড প্রতারণায় একাধিক ধাপে কয়েকটি তথ্যের প্রয়োজন হয়। যেমন- কার্ড নাম্বার, মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, নিরাপত্তা পিন নাম্বার, ওটিপি কোড ইত্যাদি। এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও নিজের পাসওয়ার্ড ও ওটিপি কোড কখনোই কোন ব্যক্তির সাথে এমনকি সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথেও শেয়ার না করার জন্য কার্ড ব্যবহারকারীদের অনুরোধ জানান তিনি।
গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ড আবেদনসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এচক্রের অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলেও জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।