স্টাফ রিপোর্টার – র্যাব দেশের মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতার জায়গা করে নিয়েছে। এটা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) কর্মকাণ্ডের ওপর কোনো প্রভাব ফেলেনি। বলেছেন, র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। বুধবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
র্যাব ডিজি বলেন, আমার দুই বছর দায়িত্ব পালনের সময় মাদক চোরচালান বন্ধে অনেক উদ্যোগ নিয়েছি। এই সময়ে ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাদকের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ তা বৈশ্বিক যুদ্ধ। সারা বিশ্বই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। কারাগারে থাকা বন্দীদের মধ্যে অধিকাংশই মাদক মামলার আসামি।
আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমার সন্তানের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া আমার দায়িত্ব, আমাদের শিক্ষকের দায়িত্ব রয়েছে, জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব রয়েছে।
ডিজি বলেন, মাদক অভিযানের সময়ে আমরা আইননুযায়ী দায়িত্ব পালন করি। আইনের বাইরে কোনো কিছু প্রয়োগ করি না। প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেখানে যেটুকু শক্তি প্রয়োগ করা প্রয়োজন, সেখানে সেটুকু শক্তি প্রয়োগ করে র্যাব। অপরাধী আক্রমণ করলে নিজেদের আত্মরক্ষার্থে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেন তারা।
আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তোমরা এদেশের পুলিশ, এদেশেরই নাগরিক। আমাদের দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কেন আমরা দাঁড়াব। যখন আমরা আক্রান্ত হই, মাদক, অস্ত্র উদ্ধার, মানবপাচারকারী যখন আমাদের ওপর আক্রমণ করে তখন আমরা প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। আইনে যে ক্ষমতা র্যাবকে দিয়েছে তা আমরা ক্রস করি না।
র্যাবের ডিজি বলেন, তার সময়ে ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সারাদেশ থেকে আমরা ২৩ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার ও ৭৭ হাজার বোতল মাদকের চালান জব্দ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ৩৬ হাজার মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করেছি। সারাদেশ থেকে আমরা ২৩ কোটি টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছি। ৭৭ হাজার বোতল মাদকের চালান জব্দ করতে পেরেছি। র্যাব ডিজি বলেন, মাদকদ্রব্যের পাশাপাশি আমরা ৩ হাজারের বেশি অস্ত্র উদ্ধার করেছি। গত দুই বছরে ৮ শতাধিক মানবপাচারকারীকে গ্রেপ্তার করেছি। ৬ হাজার নারী নির্যাতনকারী ও ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছি।
র্যাব ডিজি হিসেবে দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময় দায়িত্ব পালন শেষে আইজিপি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে যোগ দেওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক এম খুরশীদ হোসেনকে র্যাব মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এম খুরশীদ হোসেন ১২তম বিসিএস (পুলিশ) ব্যাচের কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি পুলিশ সদরদপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরে বন্দুকযুদ্ধ কমেছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে র্যাব মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, প্রয়োজন হলেই শক্তি প্রয়োগ করা হয়। না হলে করি না। যখন আক্রান্ত হয়, পাল্টা আঘাত তখনই করে র্যাব। আইনের লিমিট ক্রস করে না।
আসন্ন নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা এবং ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে কাজ করার যে অভিযোগ রয়েছে, সে বিষয়ে কীভাবে পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে র্যাব ডিজি বলেন, পুলিশ নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকে। তাদের নির্দেশনা মেনে পুলিশ চলবে। এ বিষয়ে বাহিনীর দীর্ঘদিনের যে অনুশীলন তা মেনে চলব। এবং সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করব।
মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে র্যাব। কিন্তু মাদক বাড়ছে, মাদকসেবীও বাড়ছে। তাহলে মাদকের বিরুদ্ধে র্যাবের অভিযান ব্যর্থ কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা যে যুদ্ধ করছি সেটা বৈশ্বিক যুদ্ধ। এই যুদ্ধ শুধু আমরা নই, বিশ্বজুড়েই চলছে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ল’ এনফোর্সম্যান্টের কাজের কারণে কারাগারে যে আসামি তার বেশিরভাগই মাদকের। প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের পর যেখানেই মাদক সেখানেই সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। শুধু র্যাব নয়, সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীই ধরছে।
মাদকের বিষয়টায় সবার ঘর থেকেই সচেতনতা দরকার উল্লেখ করে র্যাব ডিজি বলেন, সন্তান কোথায় যাচ্ছে সেটার খেয়াল রাখতে হবে অভিভাবকদের। ডিমান্ড অ্যান্ড সাপ্লাই একটার সাথে আরেকটা জড়িত। এটা বন্ধে আমরা কাজ করছি। মাদক নিয়ন্ত্রণে নেই এটা বলার অবকাশ নেই। যখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। আমরা যদি মাদকের বিরুদ্ধে ব্যর্থই হতাম তাহলে কারাগারে এতো মাদকের আসামি থাকতো না। আমরা সবাই সোচ্চার হলে অচিরেই মাদকমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা দেখতে পাব বলে বিশ্বাস করি।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে র্যাবের বিদায়ী মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, মাঝেমধ্যে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। তবে কেউ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে, দায়ী পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, অপরাধীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় র্যাবের সদস্যরাও আহত হন। তাঁদের অঙ্গহানি হয়, প্রাণহানিও ঘটে। চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে র্যাবকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। কোনো র্যাব সদস্য সক্ষমতা হারিয়ে ফেললে তাঁর চাকরি চলে যায়।