স্টাফ রিপোর্টার- কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচরে গলা কেটে অটোরিকশা চালককে ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল আসামীসহ তার দুই সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
র্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শনিবার গভীর রাতে রাজধানীর চকবাজার এলাকা থেকে মোঃ নিলয় মিয়া (২০) মোঃ ইব্রাহিম মিয়া ওরফে বাদল (১৯) মোঃ হৃদয় মিয়া (২৩) কে গ্রেফতার করে।
র্যাব-৩ এর টিকাটুলী কার্যালয়ে অয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অধিনায়ক লে.কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, ভিকটিম শরীফ মিয়া (২৮) কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলার পৌরশহরের চন্ডিবের মহল্লার মুক্তার মিয়ার ছেলে। সে পেশায় একজন মিশুক গাড়ি চালক। সে প্রতিদিনের মতোই গত ১৩ অক্টোবর বিকেলে তার মিশুক গাড়িটি নিয়ে ভাড়ায় চালানোর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু উক্ত দিন সে আর বাড়ি না ফিরলে তার পরিবারের লোকজন তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে তার পরিবারের সদস্যরা লোকমুখে জানতে পারে যে, কুলিয়ারচর থানাধীন ছয়সূতী ইউনিয়নের মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে এক অজ্ঞাত যুবকের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে।
পরবর্তীতে তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে লাশটি কুলিয়ারচর থানা পুলিশ উদ্ধার করে ময়নাদন্তের জন্য কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেছে। পরবর্তীতে তারা হাসপাতালে গিয়ে মৃতদেহটি নিখোঁজ শরীফ মিয়ার লাশ বলে সনাক্ত করে। এ প্রেক্ষিতে ভিকটিম শরীফ মিয়ার ভাই মোঃ শিপন মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
অধিনায়ক আরিফ জানান, ভিকটিম শরীফের স্ত্রীর সাথে গ্রেফতারকৃত আসামী নিলয়ের দীর্ঘদিনের প্রেমের সর্ম্পক ছিল। পরবর্তীতে শরীফের সাথে বিয়ে হয়ে যাওয়ায় নিলয় এবং তার প্রেমিকার মধ্যে দূরত্বের সৃষ্টি হয়। ফলসূতিতে ভিকটিম শরীফের প্রতি ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে গ্রেফতারকৃত আসামী নিলয়, হৃদয় এবং বাদল মিলে তাকে খুন করার পরিকল্পনা করে।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় তারা একটি মাজারে যাওয়ার কথা বলে ভিকটিম শরীফের মিশুক গাড়িটি ভাড়া করে একত্রে যাত্রা শুরু করে। তারা ভিকটিম শরীফকে মাটিকাটা গ্রামের শান্তিপুর বাঘমারার বন্দ নামক স্থানে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে গ্রেফতারকৃত আসামীরা ভিকটিমকে তার মিশুক গাড়িটি তাদেরকে দিয়ে দিতে বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং তার স্ত্রীকে তালাক দিতে বললে ভিকটিম শরীফ অস্বীকৃতি জানায়। এরপর ভিকটিম শরীফকে তারা বেধড়ক মারপিট করে। মারামারির একপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত হৃদয় এবং নিলয় ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম শরীফকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে এবং গ্রেফতারকৃত বাদল ভিকটিমের বুকের উপর চড়ে বসে ধারালো ছুরি দিয়ে ভিকটিম শরীফকে জবাই করে। ভিকটিম শরীফের মৃত্যু নিশ্চিত হলে তার ব্যবহৃত মোবাইলফোন এবং মিশুক গাড়িটি নিয়ে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
তারা মোবাইলফোনটি তাদের জনৈক বন্ধু মুরছালিনের কাছে বিক্রি করে এবং মিশুক গাড়িটি বাঁশগাড়ি এলাকায় বাদলের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে তিনজন একযোগে ভৈরব হতে বাসযোগে ঢাকায় পালিয়ে আসে।
র্যাব জানিয়েছে,গ্রেফতারকৃত বাদল ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে। ২০১২ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাদল তার দুলাভাইয়ের সাথে ঢাকায় এসে একটি জুতার কারখানায় কাজ করে। সেখান থেকে মারামারি করে সে নিজ এলাকায় ফিরে যায় এবং বর্তমানে সেখানে জুতার কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত।
গ্রেফতারকৃত অপর আসামী হৃদয় নিরক্ষর। সে কখনো স্কুলে যায়নি। ছোটবেলা থেকে সে রাজধানীর লালবাগ এলাকায় একটি জুতার ফ্যাক্টরীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। গ্রেফতারকৃত নিলয় একটি মাদ্রাসা থেকে নুরানী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। ২০১৫ সালে তার বাবার সাথে ঢাকায় এসে লালবাগে একটি জুতার ফ্যাক্টরীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। হত্যাকান্ডের পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে নিলয় এবং হৃদয় বেশ কিছুদিন যাবৎ এলাকায় গিয়ে অবস্থান করে এবং বাদলকে সাথে নিয়ে তাদের হত্যাকান্ডের নীলনকশা চুড়ান্ত করে। ঘটনার পর তিনজনই ঢাকার উদ্দেশ্যে পালিয়ে আসে এবং লালবাগে তাদের প্রাক্তন কর্মস্থল জুতার ফ্যাক্টরীতে আশ্রয় গ্রহণ করে। এভাবেই তারা ঘটনার পর থেকে লালবাগ এলাকায় আত্মগোপনে ছিল।
পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আসামীদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।