মিজানুর রহমান- একটি গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও গ্রিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারলে দেশের পোশাক রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। একই সঙ্গে শিল্পটিতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে আরও দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
রবিবার রাজধানীর উত্তরায় তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কমপ্লেক্সে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থার সভাপতি ফারুক হাসান। এসময় তিনি বিজিএমইএ’র উদ্ভাবন, দক্ষতা উন্নয়ন, পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের’ উদ্বোধন করেন।
অনুষ্ঠানে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়ানোর সঙ্গে আমাদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি বাড়াতে হবে। আমরা যদি ক্রেতাদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও গ্রিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারি, শিল্পকে টেকসই করতে পারি, তাহলে আমাদের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। শিল্পটিতে প্রত্যক্ষভাবে আরও এক কোটির বেশি এবং পরোক্ষভাবে আরও ৪০-৫০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হবে। ইনোভেশন সেন্টার এ বিষয়ে আমাদের সহায়তা করবে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের জন্য একটি পথনকশা তৈরি করবে।
ফারুক হাসান বলেন, বর্তমান বোর্ড দায়িত্ব গ্রহণের পর গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পোশাকশিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে যেটি উল্লেখযোগ্য ছিল। এ কারণে গত অর্থবছরে এ শিল্পখাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪২.৬ বিলিয়ন ডলার। এ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে, জুলাই-আগস্টে প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। কিন্তু গত দুই মাসে আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ক্রয়াদেশ ক্রমশ কমছে।
এ সময় তিনি ইপিবিএর সর্বশেষ পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ৭.৫২ শতাংশ কমেছে, যেখানে নিটওয়্যারে কমেছে ৯ শতাংশ এবং ওভেন রপ্তানি কমেছে ৫.৬৬ শতাংশ। অক্টোবরে প্রবৃদ্ধি আরও কমবে। আমাদের আশঙ্কা, নভেম্বর মাসে এটি আরও কমবে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফিতি এবং খুচরা বাজারে প্রভাবের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমছে।
তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট চলছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের প্রভাব আমাদের পোশাকশিল্পেও পড়ছে। এতে করে শিল্পে ব্যয় বাড়ছে দুই ভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানায় ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। অন্যভাবে অধিক সময় জেনারেটর চালানোর কারণে এগুলো ঘনঘন বিকল হচ্ছে। এতে করে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধ রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক। সেই সঙ্গে আমাদের আরেকটি অনুরোধ, আমাদের উৎসে কর যা এ বছর ১ শতাংশ করা হয়েছে, সেটি পূর্ববর্তী বছরের ন্যায় একই পর্যায়ে রাখা হোক।
বিজিএমইএ সভাপতি আরও বলেন, আগামী ১২-১৬ নভেম্বর বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর সহযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল অ্যাপারেল ফেডারেশন (আইএএফ) ‘ট্রান্সফরমেশন ফ্যাশন টুগেদার’ প্রতিপাদ্যে ঢাকায় র্যাডিসন ব্লু ওয়াটার গার্ডেনে ৩৭তম আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশনের আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ১৬ ও ১৭ নভেম্বর কনভেনশনে আসা প্রতিনিধিদল কারখানা ও আমাদের ঐতিহ্যবাহী দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। এ সম্মেলন ৪০টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী পোশাকশিল্প সমিতি, নেতৃস্থানীয় ব্র্যান্ড এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারসহ আইএএফের সদস্যদের একত্র করবে।
তাছাড়া বিজিএমইএর উদ্যোগে আগামী ১২ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক’ ইভেন্ট আয়োজনের প্রস্তুতির কাজ চলছে। মেইড ইন বাংলাদেশ উইকের অংশ হিসেবে ঢাকা অ্যাপারেল সামিট হচ্ছে এবং এই সামিট উপলক্ষে ৯টি সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। মেইড ইন বাংলাদেশ উইক, ইভেন্টের আওতায় চারটি প্রতিযোগিতাভিত্তিক অ্যাওয়ার্ড প্রোগ্রাম আযোজন রয়েছে।