Search
Close this search box.
ডিবি-পিবিআইয়ের যৌথ সংবাদ সম্মেলন

লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবে মারা যান দুরন্ত বিপ্লব

স্টাফ রিপোর্টার- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুরন্ত বিপ্লব (৫১) খুন হননি। মর্নিং সান-৫ নামের একটি লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাডুবিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রবিবার সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিবি পুলিশ। ডিবি লালবাগ বিভাগের উপ পুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এসময় ঢাকা জেলা পিবিআইয়ের সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ হুমায়ুন কবির উপস্থিত ছিলেন ।

ডিসি বলেন, দুরন্ত বিপ্লবকে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়নি, লঞ্চের ধাক্কায় নৌকাটি ডুবে গেলে সাঁতার না জানার কারনে তিনি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। পিবিআইয়ের ছায়া তদন্তেও এমনটাই উঠে এসেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পিবিআই সূত্রে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যুর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে—মর্নিং সান-৫  নামে একটি লঞ্চের ধাক্কায় দুরন্ত বিপ্লব যে নৌকা করে নদী পাড় হচ্ছিলেন সেটি ডুবে যায়। আর নৌকা ডুবে যাওয়ার ঘটনাতেই দুরন্ত বিপ্লবের মৃত্যু হয়েছে। তাকে কেউ হত্যা করেনি।

নৌকা ডুবির পর মাঝি শামসু ফরিদপুরে নিজ বাড়িতে চলে যান। সম্প্রতি শামসু মাঝিকে তার ফরিদপুরের বাড়ি থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শামসু নৌকা ডুবির কথা জানায়। পরবর্তীতে শামসুর দেওয়া তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে দুরন্তের একটি জুতা উদ্ধার করে পুলিশ। জুতাটি দুরন্তের বলে তার পরিবার নিশ্চিত করেছে।

ঘটনার পাঁচ দিন পর তার মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় অবহেলার কারণে মর্নি সান-৫ লঞ্চের ছয় কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের কোতয়ালী জোনাল টিম।

শনিবার রাজধানীর কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন— লঞ্চের প্রথম মাস্টার হাফেজ মো. সাইদুর রহমান (৩৮), দ্বিতীয় মাস্টার আলামিন (৩৫), ইঞ্জিনচালক মো. মাসুদ রানা (৩৮), ইঞ্জিনচালক ইমন হোসেন (২৩), সুকানী মো. সালমান (২১) ও লঞ্চের সুপারভাইজার ইব্রাহীম খলিল (২৯)।

ডিসি মশিউর রহমান বলেন, ছায়া তদন্ত করতে গিয়ে আমরা নানাভাবে জানার চেষ্টা করেছি, মৃত দুরন্তের মৃত্যু রাজনৈতিক কারণে নাকি শত্রুতাজনিত। আমরা কোনো শত্রুর সন্ধান পাইনি। আমরা জেনেছি তিনি নির্ঝঞ্জাট মানুষ। যদিও তার পারিবারিক ঝামেলা ছিল। তিনি কেরানীগঞ্জের কোনাখোলা এলাকায় একাকি থাকতেন। তার নিঃসঙ্গ জীবনযাপনের কারণে সোনামাটি এগ্রোফার্ম পরিচালনা করতেন। সেখানকার বিভিন্ন পণ্য তিনি প্রতিদিনই ঢাকায় পাঠাতেন।

নিখোঁজের দিন দুরন্ত বিপ্লব তার কর্মচারী হেলালকে সঙ্গে নিয়ে বিকেল ৪টা ৪৪ মিনিটের দিকে কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর কাছে কিছু সবজির প্যাকেট হস্তান্তর করে বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটের দিকে নূর ফিলিং স্টেশনের কাছাকাছি রাস্তায় ঢাকা থ ১১-৫৮৭৩ সিএনজি অটোরিকশাতে উঠেন। তিন-চার জন নিয়ে শেয়ারে চলা অটোরিকশাচালক বিল্লালের ভাষ্য মতে, সন্ধ্যা ৫টা ১৫ থেকে ২০ মিনিটের দিকে তাকে জিনজিরা ঘাটে নামিয়ে দেওয়া হয়।

সিসিটিভি ফুটেজ এবং ডিজিটাল মুভমেন্ট বিশ্লেষণ করে গোয়েন্দা পুলিশ নিশ্চিত হয়, জিনজিরাঘাট ও কামরাঙ্গীরচরের মুসলিমবাগ এলাকার নদীর পাড় এলাকাতে ভিকটিম বিপ্লবের সর্বশেষ অবস্থান ছিল। এখানে তিনি অবস্থান করেও কুরিয়ার সার্ভিস বয় গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে পাঠানো সবজি নিয়ে একাধিকবার কথা বলেছেন।

জিনজিরা ঘাট থেকে সোয়ারীঘাটে চলাচল করা খেয়া নৌকার মাঝি শামসু মিয়ার তথ্য মতে, মাগরিবের নামাজের আগে-পরে পাঁচ জন যাত্রীকে নিয়ে তার নৌকা মাঝ নদীতে এলে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া মর্নিং সান-৫ লঞ্চ তার নৌকাকে ধাক্কা দেয়। এতে নৌকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তলিয়ে যায়। যাত্রীরা পানিতে পড়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে অন্য নৌকা এসে কয়েকজনকে উদ্ধার করতে পারলেও একজন ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া যাত্রীই নিহত দুবন্ত বিপ্লব বলে জানা যায়।

লঞ্চের কর্মচারীদের অবহেলাজনিত দায়ের কারণে তাদের গ্রেফতারকরা হয়েছে উল্লেখ করে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, দূর থেকে নৌকার গতিবিধি দেখার কথা। নৌকা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে, লঞ্চ যাচ্ছিল সোজা। লঞ্চের তো নৌকাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মাপ তাদের জানার কথা। নৌকা লঞ্চকে ধাক্কা দিতে পারে না। লঞ্চই নৌকাকে ধাক্কা দিয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা সেটা স্বীকারও করেছে। ধাক্কা দিয়ে চলে যাওয়ার পর দূরে ইঞ্জিন বন্ধ করে দেখেছে ঘটনা আসলে কি। ততক্ষণে নৌকা তলিয়ে গেছে। নৌকা ডুবিতেই যে বিপ্লবের মৃত্যু হয়েছে তা তার জুতা উদ্ধার ও মোবাইল টাওয়ারের সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী স্পষ্ট হয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতদের লঞ্চ চালানোর অনুমোদন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনও বিআইডব্লিওটিএ’র কাছ থেকে জানতে পারিনি তাদের আদৌ অনুমোদন ছিল কি না। তবে ২১ বছরের সুকানী সালমান পূর্ণ বয়স্ক হলেও অভিজ্ঞতা তার কতটুকু ছিল একটা লঞ্চকে নিয়ন্ত্রণ করার, সেটা খতিয়ে দেখা হবে।

ময়নাতদন্তের প্রাথমিক বক্তব্যে চিকিৎসক বলেছিলেন, দুরন্ত বিপ্লব হত্যার স্বীকার হয়েছিলেন— এ ব্যাপারে ডিসি মশিউর রহমান বলেন, এ ধরনের কনক্লুশন দেওয়ার দায়িত্ব চিকিৎসকের না। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বলতে পারেন না হত্যা নাকি আত্মহত্যা। একজন ব্যক্তি ছাদ থেকে লাফিয়েও আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা যেতে পারেন। দুরন্ত বিপ্লব নৌ ডুবিতে ডুবে যান, তিনি হয়ত সাঁতারে পটু ছিলেন না বা জানতেন না। তার মরদেহ উদ্ধার করা হয় পাঁচ দিন পর। এসময়ের মধ্যে তিনি নিখোঁজ থেকে শুরু করে উদ্ধার পর্যন্ত যেকোনো পর্যায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারেন। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলতে পারেন, কিন্তু হুট করে বলতে পারেন না হত্যা, অবহেলাজনিত মৃত্যু নাকি আত্মহত্যা।

ডিসি আরও বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাবেক জিএস দুরন্ত বিপ্লব নিরহংকার মানুষ ছিলেন। তার ব্যক্তিগত শত্রু ছিল না, বিশেষ টাকা-পয়সার মানুষও ছিলেন না, ছিল না রাজনৈতিক কোনো উচ্চাভিলাষ। অনিচ্ছাকৃত অবহেলাজনিত লঞ্চের ধাক্কায় নৌকা থেকে পড়ে নিখোঁজ হয়ে মারা যান তিনি।

গত ৭ নভেম্বর কেরানীগঞ্জের নিজ খামার থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন বিপ্লব। এরপর থেকেই তার মোবাইল বন্ধ ছিল। গত  ১২ নভেম্বর বুড়িগঙ্গার পানগাঁও এলাকায় এক অজ্ঞাত পরিচয়ের মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে মরদেহটি দুরন্ত বিপ্লবের বলে শনাক্ত করেন।

নিহত দুরন্ত বিপ্লব নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলার ছোট ইলাশপুরের মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায়বিষয়ক কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ