Search
Close this search box.

ব্যর্থ বিএনপি, সফল আওয়ামী লীগ

বিএনপি সাংসদদের পদত্যাগ বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না

 জনগণের পাশে দাঁড়াতে বিএনপিকে নির্বাচনমুখী হওয়ার পরামর্শ

শাহনাজ পারভীন এলিস 

সরকারের পতনসহ বিভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে গেলো ১০ ডিসেম্বরে ঢাকায় গণসমাবেশে বিএনপি তার কাক্সক্ষতি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অপরদিকে বিএনপির এই গণসমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিলো, সরকার তা শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে মোকাবিলা করতে সফল হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা। একই সাথে গণসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী সংসদ থেকে বিএনপির সাংসদের পদত্যাগের পরও বর্তমান জাতীয় সংসদে তা বড় ধরনের সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন সংবাদ সারাবেলাকে বলেছেন, সরকার পদত্যাগের দাবিতে বিএনপি গণসমাবেশ, দলটির নেতৃবৃন্দের দশ দফা দাবি ঘোষণা রাজনৈতিক কূটকৌশল মাত্র। বলা যায়- নতুন বোতলে পুরনো মদ ঢালা। তাদের পদত্যাগের নাটকীয়তাও বর্তমান সরকার, সংসদ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারবে বলে মনে করেন না তিনি। কারণ তারা বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণকে আস্থায় নিতে পারেনি। নির্বাচনের রাজনীতি বাইরে থেকে সরকার পতনের স্বপ্ন না দেখে দলটির নেতাদের নির্বাচনমুখী হওয়ার পরামর্শ দিলেন তিনি।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলছেন, সভা-সমাবেশ করা প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার। সরকারের ব্যর্থতার সমালোচনা হতে পারে। কিন্তু গণসমাবেশেরে নামে জনভোগান্তি সৃষ্টি আর যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি কোনভাবেই কাম্য নয়। আধিপত্যবাদ ও প্রচারণার খেলায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে মোকাবিলা করতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে থাকলে চলবে না। সংসদ থেকে পদত্যাগ নয়, বরং সংসদে থেকেই সরকারের সমালোচনা করে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, আগামী এক বছর পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমাবেশ গণসংযোগ করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সমাবেশের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা, সরকার পতনের ঘোষণা দেশের মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে। এসব না করে এপর্যায়ে সব রাজনৈতিক দলের জনগণের আস্থা অর্জন এবং জনসমর্থন বাড়ানো পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। কারণ বর্তমান সরকারের শাসনামলে এমন কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, সরকার পতনের জন্য ডাকা বিএনপির কোন আন্দোলনে জনগণ সাড়া দেবে। তাই এ ধরনের উদ্ভট চিন্তা দলটির নেতাদের মাথায় না আনার পরামর্শ দেন তিনি। আর সংসদ থেকে বিএনপির সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ সেটা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তবে সরকারের সমালোচনা সংসদ থেকে তারা যেভাবে করতে পারতেন, বাইরে গিয়ে সেটা করা তাদের জন্য খুব বেশি ফলপ্রসূ হবে বলে তিনি মনে করেন না।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, কয়েকটি বড় ধরনের সমাবেশ, রাজনৈতিক শ্লোগান দিয়ে সরকারকে উত্তেজিত করা গেলেও সরকারের পতন ঘটানো যায় না। বিএনপির রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা রয়েছে, তাদের আরও সংগঠিত হওয়া প্রয়োজন। গণসমাবেশে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী সংসদ থেকে বিএনপির সাংসদের পদত্যাগে বর্তমান জাতীয় সংসদে কিছুটা সংকট তৈরি হলেও সংখ্যাতাত্ত্বিক বিবেচনায় তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন তিনি। এদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওইসব রাষ্ট্রদূতের শিষ্ঠাচার বহির্ভূত কথাবার্তার জবাব দিতে হলে আমাদের বিদেশ নির্ভরতা, বিদেশি ঋণগ্রস্ততা এবং নতজানু পররাষ্ট্রনীতি থেকে সরে আসতে হবে।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদ (জানিপপ) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, বিএনপি বিভাগীয় পর্যায়ে গেলো দু’মাসব্যাপী সভা-সমাবেশ করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনার তৈরি করলেও দশ ডিসেম্বরের সমাবেশে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য পূরণে সফল হতে পারেনি। কারণ আন্দোলনের আড়ালে দলটির নেতাদের রাজনৈতিক কিছু উদ্দেশ্য ছিলো, যা আন্দোলন চলাকালে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা না আসায় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কারণ অসংগঠিত কোন দলের রাজনৈতিক আন্দোলন সফল হয় না। এছাড়া বিএনপির দাবিগুলো কতটা যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য- তা জনগণের কাছে প্রমাণ করতেও তারা ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপির গণসমাবেশকে ঘিরে সারাদেশে জনমনে যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিলো, ক্ষমতাসীন সরকার তা শান্তিপূর্ণ ও সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারায় বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হয়নি। অন্যদিকে ঘোষণা অনুযায়ী সংসদ থেকে বিএনপির সাংসদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির সাংসদের পদত্যাগে জাতীয় সংসদের বৈধতা প্রশ্নে কিছুটা সংকট তৈরি হবে এটা ঠিক। তবে সংখ্যাতাত্ত্বিক বা আসনগত বিবেচনায় তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। তবে বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসেবে এই পদত্যাগকে বিএনপি’র সবশেষ ট্রাম্পকার্ড হিসেবে মনে করছেন এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ