Search
Close this search box.

আনন্দ-বেদনার কাব্য

আনন্দ-বেদনার কাব্য

মুহম্মদ শফিকুর রহমান এমপি

১৬ ডিসেম্বরঃ আনন্দ-বেদনার কাব্য। এই কাব্যের রচনাকার বাঙালির জাতি-রাষ্ট্রের পিতা মহাকালের ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাতায় পাতায় যেমন রয়েছে বীরত্ব গাঁথা, তেমনি রয়েছে বেদনার অশ্রু। মাত্র নয় মাসে ৩০ লাখ শহীদ আর ৫ লাখ নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের অপমান আর যন্ত্রণার কাহিনী। জীবন বাঁচাতে এক কোটি মানুষের দেশান্তরী হবার যেমন কথা আছে তেমনি দেশভ্যন্তরে তিন কোটি মানুষ প্রাণ মান বাঁচাতে আজ এ বাড়িতো কাল ওবাড়ি, খাবার নেই, মাথার উপর এতোটুকু ছাদ নেই, কি অবর্ননীয় কষ্ট। এমনকি বিজয়ের দুদিন আগে দেশের ৩১৩ জন বরেণ্য বুদ্ধিজীবীকে চোখ বেঁধে বদ্ধভূমিতে নিয়ে গুলি আর ব্যায়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। বর্বর পাকিস্তানি মিলিটারি জান্তা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তান বাঁচাতে পারবে না। বাংলার বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সহযোদ্ধাদের কাছে তাদের অনিবার্য পরাজয় তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও যাতে মেধাশুন্য থাকে সে লক্ষ্যেই দেশের প্রখ্যাত শিক্ষক সাংবাদিক লেখক কবি বিজ্ঞানী, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিল্পীদের হত্যা করে। এত কষ্ট এত ত্যাগের পরও ১৬ ডিসেম্বর পাকি মিলিটারি জান্তার পরাজয় এবং নিঃশর্ত আত্মসমর্থন কম আনন্দের নয় এবং হাজার বছরের বাঙালি জাতির জীবনেও তা একবারই এসেছিল। অনেক কষ্ট যন্ত্রণা বেদনার মাঝে সেই আনন্দ যেমন কোনোদিন ম্লান হবার নয়, তেমনি কষ্টের কাহিনীও কোনদিন মুছে যাবার নয়। তারপরও ১৬ ডিসেম্বও রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা আত্মসমর্পনের আনন্দও হাজার বছরের অপেক্ষার ফসল।

মনে পড়ে আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের কথা। প্রফেসর ডক্টর মুনির চৌধুরী, প্রফেসর ডক্টর জিসি দেব, প্রফেসর ডঃ মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, প্রফেসর ডক্টর আনোয়ার পাশা, প্রফেসর ডক্টর আবুল কালাম আজাদ, প্রফেসর গিয়াসউদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন, সাংবাদিক শহিদুল্লাহ কায়সার, সাংবাদিক আনম গোলাম মোস্তফা, সাংবাদিক শহীদ সাবের, সাংবাদিক চিশতি শাহ হেলালুর রহমান, ডাক্তার আলীম চৌধুরী, সাংবাদিক সেলিনা পারভিন, লেখক চলচ্চিত্রকার জহির রায়হান, একুশের গানের সুরকার আলতাফ মাহমুদ এসব বুদ্ধিজীবীদের শূন্যস্থান আজও পূর্ণ হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীরা ছিল বেইমান মুনাফিক গোলাম আযম, মওলানা মান্নান এবং জামাতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসঙ্ঘ তথা বর্তমান ছাত্রশিবির দ্বারা গঠিত কিলিং স্কোয়াড আলবদর আলসামস বাহিনীর সদস্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আইন পাস করে বিচারের ব্যবস্থা করলে অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছিল। ওই আলবদর আল সামসদের ফাঁসি হয়েছিল গোলাম আজমের সাজা অবস্থায় মৃত্যু এবং ফাঁসি কার্যকর হয় মতিউর রহমান নিজামী, সাকা চৌধুরী, কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, কামরুজ্জামান, কাদের মোল্লা এবং ফাঁসির দন্ড মাথায় নিয়ে লন্ডন নিউইয়র্কে পলাতক চৌধুরী মঈনুদ্দিন (ফেনী থেকে যত জন ঢাকায় এসেছে তাদের ৮০% এর নামের শেষে একটা ভুয়া চৌধুরী লাগানো আছে) আশরাফুজ্জামান খান। এমনিভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মধ্যে ফাঁসির দন্ড নিয়ে যারা এখনো আমেরিকা-বৃটেনসহ দেশে দেশে পলাতক আছে তাদেরই মত মইনুদ্দিন আশরাফুজ্জামান পলাতক রয়েছে। ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাদের দেশে এনে দন্ড কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে ওই সব মানবতার ধ্বজাধারী দেশের সরকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে চলেছে। বলা হচ্ছে তাদের দেশে ফাঁসির সাজা নেই তাই। এদিকে আরেক যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী আমরণ কারা ভোগ করছে।

যখন দেখি ইউটিউব এবং তথাকথিত অনলাইন টেলিভিশনে বসে বিশ্বের ১০ জন সফল রাষ্ট্রনেতার অন্যতম এবং তিনজন সৎ সরকার প্রধানের মধ্যে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নোংরা ভাষায় গালাগাল করে তখন বুঝতে হবে ওরা রাজাকার আলবদর আলশামসের বাচ্চা। অনেকগুলোর চেহারা দেখলে মনে হবে ওগুলো এইমাত্র কোন বেশ্যালয় থেকে বেরিয়ে এসেছে। চেহারায় কথাবার্তায় কুৎসিত অশিক্ষিত তো বটেই বরং ওদের ধমনীতে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ত বইছে। নিউইয়র্ক কানাডায় বসে এদের পেট্রোনেজ করছে কিছু পলাতক সাংবাদিক শিক্ষক সামরিক কর্মকর্তা তাজ হাশমি, মেজর দেলোয়ার, কনক সারোয়ার, ইলিয়াস, সাগর আরো অনেকে।

দুঃখজনক ঘটনা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু একাত্তরের রাষ্ট্র বিরোধী জামাত মুসলিম লীগ, নিজামী ইসলাম পার্টি তথা ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করেছিলেন একই সঙ্গে মদ-জুয়া,হাউজিসহ তাবৎ অসামাজিক কাজও নিষিদ্ধ করেছিলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার (দুই কন্যা শেখ হাসিনা শেখ রেহেনা বিদেশে থাকায় বেঁচে যান) পর খুনি মিলিটারি জিয়া বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানি ধারায় নিয়ে যাবার জন্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক সব রাজনৈতিক দল পুনর্জীবিত করেন এবং নাগরিকত্বহারা বা পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আজমদের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানি ধারার রাজনীতি করার সুযোগ করে দেন। খুনি মিলিটারি জিয়া একই লক্ষ্যে একই এজেন্ডা নিয়েই ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতায় বসেই রেডিও বাংলা টেলিভিশনে এমনকি সংবাদপত্রেও হুমকি দিয়ে আমাদের রণধ্বনি ‘জয় বাংলা’ ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ নিষিদ্ধ করেন। পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদকে পাকিস্তানি আদলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার চক্রান্ত শুরু করেন। চক্রান্তের মাধ্যমে বিমান বাহিনীকে অফিসার শূন্য করার এবং শত শত সিপাই কে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর ২০০৪ এর ২১ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিয়তে সিরিজ গ্রেনেড হামলা চালিয়ে শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করে। মিলিটারি জিয়া পুত্র তারেক রহমানের হাওয়া ভবনে বসে এর পরিকল্পনা করা হয়। মহান আল্লাহ পাকের অশেষ কৃপায় একটি গ্রেনেড বিস্ফোরিত না হওয়ায় ট্রাকে দাঁড়ানো শেখ হাসিনাসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বেঁচে যান। গ্রেনেডটি পড়ে ট্রাকটির নিচে কিন্তু বিস্ফোরিত হয়নি। তারপরও খুনির দল থেমে থাকেনি। শেখ হাসিনাকে বহনকারী গাড়িটি লক্ষ্য করে অসংখ্য গুলি বর্ষণ করে। গাড়িটি ছিল বুলেট প্রুফ। ইউরোপ আওয়ামীলীগ গাড়িটি নেত্রীকে উপহার দিয়েছিল। শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য অন্তত বিশ বার হামলা চালানো হয়েছিল। এমনকি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনেও হামলা চালানো হয় দুইবার। আল্লাহ পাক তাকে রক্ষা করে চলেছেন বলেই আজ ভয়াবহ কোভিড-১৯ বা করোনার ছোবল বা রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ কিংবা তাইওয়ান নিয়ে চীন আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ ইত্যাদির কবলে টালমাটাল বিশ্বেও বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে ভালো আছে। বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে, বিশেষ করে জ্বালানি তেল গ্যাসের ক্রাইসিসের জন্য আমাদের দেশেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে এটা যেমন ঠিক এর চেয়েও হলো সরকার সবকিছু মোকাবেলা করে এগিয়ে চলেছেন যা বিশ্বের বিস্ময় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য কোন কোন দ্রব্যমূল্য শতকরা ৬০ ভাগ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, দেদার ছাটাই করছে এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে যেখানে হাউজ বিল্ডিং লোনের ইন্টারেস্ট ৩% থেকে সাড়ে ৬ পার্সেন্ট করেছে। জ্বালানি তেল, খাদ্য সামগ্রীর দামও বেড়ে গেছে। তুলনায় বাংলাদেশে বরং কমই বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন কোনো মানুষ না খেয়ে থাকে না। সরকার ভিজিএফ কার্ড, ১৫ টাকা কেজিতে ওএমএস, টি আর কাবিখার মাধ্যমে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখে এবং বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষকে খাদ্য কেনার সক্ষমতা করে দিচ্ছেন।

পাশাপাশি গৌরবের পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং চট্টগ্রাম ও ঢাকার অসংখ্য ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, এলিভেটর এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ চট্রগ্রামে কর্ণফুলি ট্যানেলের কাজ সম্পন্ন করে চলেছেন। অন্যান্য শহরেও একইভাবে নির্মাণ কাজ চলছে। পাশাপাশি রূপপুর পরমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বাঁশখালী বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর সহ দেশব্যাপী শত শত পুল কালভার্ট নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে চলেছেন।

অথচ আমাদের দেশে একটি রাজনৈতিক দল আছে যার নাম বিএনপি (বাংলাদেশ নাজি পার্টি) এবং তাদের লেজুর জামাত-শিবির রয়েছে যারা কিছুই দেখেনা। কেবল সংকট দেখেন। যখন ওই সব কথা বলেন তাদের পরনে থাকে বিদেশি ব্র্যান্ডের শার্ট, প্যান্ট বা শাড়ি। ওয়ানম্যান পার্টি আছে যেমন মাহমুদুর রহমান মান্না, নুরু, জুনায়েদ সাকি, প্রমুখ নেতারা যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাফালাফি করেন ভয় হয় পড়ে গিয়ে ল্যাংড়া না হয়ে যান।

মির্জা ফখরুল (রাজাকার চখা মিয়ার পুত্র) আমানুল্লাহ আমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, শ্যামা ওবায়েদ, ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা এবং আরও এক্স ওয়াই জেড প্রতিনিয়ত যেভাবে গণতন্ত্র মানবাধিকার এবং দুর্নীতির কথা বলে চিৎকার করছেন টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন কথা বলার স্বাধীনতা নেই। একে ইংরেজিতে বলে হিপোক্র্যসি এবং ইসলামের ভাষায় বলে মুনাফিক।

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এবং তার পুত্র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান উভয়েই দুর্নীতির দায়ে সাজা খাটছেন। প্রথমজন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় জেলের বদলে নিজ বাড়িতে এবং দ্বিতীয় জন সাজা প্রাপ্ত হওয়ার পর মুচলেকা দিয়ে বিদেশে পালিয়েছেন, এই দুই নেতা কি কোন কাউন্সিলে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার দলের ভারপাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। খালেদা জিয়াকে ভাইস চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হয়। একদিন হঠাৎ দলের দুই মিলিটারি জেনারেল মেজর মাজেদুল হক এবং কর্নেল জাফর ইমাম সশস্ত্র অবস্থায় বিচারপতি সাত্তরের ধানমন্ডি বাসভবনে উপস্থিত হন এবং অস্ত্রের মুখে বিচারপতি সাত্তারকে তার পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর করিয়ে খালেদাজিয়াকে চেয়ারপারসন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। প্রশ্ন হল খালেদা জিয়াতো লেখাপড়ায় ক্লাস ৮, জনগণ কি এটা মেনে নেবে। তাই জনগণকে মানাবার জন্য খালেদা জিয়ার পদবীকে চেয়ারপারসন এবং তাকে ম্যাডাম বলে ডাকা শুরু হয়। ম্যাডাম শব্দটার মধ্যে একটা ইংরেজি আমেজ রয়েছে তেমনি চেয়ারপারসন শব্দেও। ব্যাপারটা কাকের মাথায় ময়ূর পুচ্ছ গুজার মত অবস্থা।

দলটির মূল ব্যক্তির গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ কী? তিনি কোন গণতন্ত্রের প্রসেসে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসে ছিলেন?

এই ভদ্রলোক মানে মিলিটারি জিয়া ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন এটা মিথ্যা নয় কিন্তু তার দল তাকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর জন্য আজও চেষ্টা করে চলেছে। তবে এখন আওয়াজ ক্ষীনও হয়ে আসছে। মিথ্যে দিয়ে কতদিন চলা যায়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন মরণপন সংগ্রাম আর ১৩ বছরের জেল জীবনের পর পাকিস্তানিদের পদানত করিয়ে তবেই স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে

গ্রেফতার হবার পূর্ব মুহূর্তে-

“This may be my last message, from today Bangladesh is Independent. I call upon the people of Bangladesh wherever you might be and with whatever you have, to resist the army of occupation to the last. Your fight must go on until the last soldier of the Pakistan occupation army is expelled from the soil of Bangladesh and final victory is achieved”

জাতির পিতা এই ঘোষণা আগেই রেকর্ড করে রেখেছিলেন এবং ওই রাত থেকেই বিডিআর বর্তমান বিজিবি এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। অর্থনীতিবিদ ডক্টর আতিউর রহমান তার রচিত “শেখ মুজিব বাংলাদেশের আরেক নাম” গ্রন্থে ১১৭ থেকে ১২৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দালিলিক প্রমাণসহ বিস্তারিত আলোচনা দেয়া আছে। তবে চতুর মিলিটারি জিয়া প্রথমেই নিজের নামে ঘোষণা করার চেষ্টা করলে চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের ধমক খেয়ে বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষণাটি পাঠ করান-

“I, major ziaur rahman do here by declare independence of Bangladesh on behalf of our great national leader bangabandhu sheikh mujibur Rahman”

মিলিটারি জিয়ার মৃত্যুর পর থেকে বিএনপি জিয়াকে ঘোষক বানানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে করে এখন মনে হয় ক্লান্ত পরিশ্রান্ত। কে জানে জাতির পিতার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২৪ বছরের (১৯৪৭-১৯৭১) আন্দোলন বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু ১৩ বছর জেল জীবন এবং অন্তত দুইবার ফাঁসির মঞ্চ থেকে ফিরে এসে স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দেন। কে না জানে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হয় এবং মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুজিবনগর বিপ্লবী সরকার গঠিত হয় এবং তার প্রেসিডেন্টও ছিলেন বঙ্গবন্ধু, তাঁর অনুপস্থিতিতে (পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি) অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ এবং জাতীয় চার নেতা যাদের পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় অর্জিত হয়। বাঙালির এই কালজয়ী মানুষগুলোকেই ১৯৭৫ এর ১৫ই আগস্ট এবং ৩রা নভেম্বর নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। আমাদের সংবাদপত্র এবং সচেতন জনগনের উচিত বিএনপিকে প্রশ্ন করা যে ওই মানুষগুলো কি আওয়ামী লীগ নেতা ছিলেন না? তাছাড়া ১৯৭০ এর সাধারন নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সাংবিধানিক বৈধ এখতিয়ার কেবল বঙ্গবন্ধুরই ছিল এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতে তাঁর নামে ও নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন মুজিবনগর সরকার। মিলিটারি জিয়া ছিলেন মুজিবনগর সরকারের অধীনে একজন কর্মচারী জেড ফোর্স কমান্ডার। প্রশ্ন করা উচিত মিলিটারি জিয়ার কি স্বাধীনতা ঘোষনার সাংবিধানিক এখতিয়ার ছিল?

এসব তথ্য অন্তত হাজার বার লেখা হয়েছে। বলা হয়েছে তবুও বিএনপির মীর্জা ফখরুল (রাজাকার চখা মিয়ার পুত্র) বা বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা (স্বাধীনতা যুদ্ধে না যাওয়া রাজনৈতিক অলি আহাদের কন্যা) একই কথা অর্থাৎ ঘোষক ঘোষক মালা জপছেন ঘরে বাইরে।

বিএনপি নামক এই দলটির প্রতিষ্ঠাতা মিলিটারি জিয়া জাতির পিতার খুনের সাথে জড়িত। সেই দলের নেতারা যদি মানবাধিকারের কথা বলে তাহলে পুরনো ঢাকার ঘোড়াও হাসবে। বরং জিয়া পত্নী খালেদা জিয়া (দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত) ১৫ আগস্ট নিজের ভুয়া জন্মদিন বানিয়ে ৫০/৬০/৭০ কেজি কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর প্রতি পরিহাস করেছেন দীর্ঘদিন। সাম্প্রতিককালে মনে হয় বোধদয় হয়েছে। তারপরও কিছু আনাড়ি সমর্থক আছে এখনো সেই ভূয়া জন্মদিন উদযাপন করছে আড়ালে আবডালে। প্রশ্ন করা উচিত ওই সব বর্বর হত্যাকান্ডও কি মানবাধিকার লঙ্ঘন নয়? ১৯৭৭ সালের ২রা অক্টোবর ক্যুর নামে বিমান বাহিনিকে অফিসার শূন্য করা বা শত শত জোয়ানকে ফাঁসিতে ঝোলানো কোন মানবাধিকার?
বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ কিন্তু এখানে জমির মালিকানায় কোন সমতা নেই। একজনের হয়তো শত বিঘা আবার অনেকের এক বিঘাও নেই। এসব চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সমবায়ের মাধ্যমে চাষাবাদ এবং ফসলের ভাগাভাগির পদক্ষেপ নেন। এর জন্য জাতীয় সরকার দরকার। তাই তিনি আওয়ামী লীগসহ সব রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামীলীগ (বাকশাল) নামে জাতীয় দল ও সরকার গঠন করেন। এ দলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল দলের প্রতিনিধিত্ব ছাড়াও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের সদস্যদের বাকশালের সদস্য। মিলিটারি জিয়া একে ওকে ধরে বাকশালের যোগদান করেছিলেন। একেই বলে মুনাফেকি বা হিপোক্র্যাসি।

অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর সেই অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাতিল করে দেয়া হয়। বহুমুখী গ্রাম সমবায়টি যদি বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের স্তর পেরিয়ে উন্নত অর্থনীতির দেশের দিকে এগিয়ে যেত। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে দেশটাকে ৫০ বছর পিছিয়ে দেয়া হলো। আল্লাহ পাকের শুকরিয়া যে শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বলেই এবং জনগণ তার হাতে রাষ্ট্রের দায়িত্ব দেয়ায় আজ বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ তথা উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হয়ে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে চলেছে। আগেই বলেছি আমরা আরও অনেকটুকু এগিয়ে যেতে পারতাম যদি না কোভিড-১৯ বা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অথবা তাইওয়ান নিয়ে চীন আমেরিকার স্নায়ুযুদ্ধ বিশ্বকে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ভাবে লন্ডভন্ড করত। কি যে ক্ষতি বিশ্বের সাথে সাথে আমাদের বাংলাদেশেরও হয়েছে সে কেবল সংবেদনশীল মানুষই বুঝতে পারবেন। মির্জার দল মনে প্রানেই সহিংস এবং প্রতিহিংসা পরায়ণ যে কারণে জাতি তাদের কাছে কিছু আশা করে না।
সামরিক শাসকদের রাজনীতি যতটুকু এ জীবনে জেনেছি দেখেছি তাতে যা সামনে এসেছে তা হল প্রথমে ক্যু করে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করে। দেশবাসীর কাছে অঙ্গীকার করে এই বলে যে দেশ উচ্ছন্যে যাচ্ছিল তাই দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করতে বাধ্য হয়েছে। আমরা অল্পদিনের মধ্যেই সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চলে যাব। ওই অল্প দিন আর শেষ হয় না। তাছাড়া কত বড় হিপোক্র্যাসি ক্যুর মাধ্যমে যাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয় তারা তো জনপ্রতিনিধি ছিল। আসলে সব মিলিটারীদের ভাওতাবাজি। সে পাকিস্তান আমল থেকে আমরা দেখে আসছি। সমাজের কিচড় থেকে লোক ধরে ধরে এনে প্রথমে একটি পলিটিক্যাল জোট গঠন করে। আইয়ুব ইয়াহিয়া থেকে শুরু করে জিয়া-এরশাদ সবই একই পাড়ার বাসিন্দা এবং একই ধারার পথিক। আইয়ুব মৌলিক গণতন্ত্র নাম দিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের টাউট চেয়ারম্যান মেম্বারদের ভোটার বানিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করেন। এ প্রশ্নে দৈনিক ইত্তেফাকের একটি শিরোনাম ছিল খুব মজার। ৬০-এর দশকে আয়ুবের মৌলিক গনতন্ত্রের নির্বাচন সামনে। ফরিদপুরে এক খোদাই ষাড় (কোনো একটা ষাড় লা ওয়ারিশ হিসেবে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া) রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় তার সামনে পড়ে এক মৌলিক গণতান্ত্রিক বা ইউপি মেম্বার। খোদাই ষাড়টিকে নিরীহ মনে করে তাকে তাড়াতে গেলে সে মৌলিক গণতন্ত্রের পেটে গুঁতো মারে এবং গুতো এত জোরে ছিল ষাড়ের একটি শিং ভদ্রলোক পেটে ঢুকে যায় এবং তাতে ওই মৌলিক গণতন্ত্রী বা মেম্বারের সাহেব মারা যান। খবরটি দৈনিক ইত্তেফাকে এলে তখন ইত্তেফাকের নিউজ এন্ড এক্সিকিউটিভ এডিটর শহীদ সিরাজউদ্দিন হোসেন ওই নিউজ এর শিরোনাম করেন

“চিনিল ক্যামনে”?

মিলিটারি জিয়াও কম যাননি। ক্ষমতার দখল করে তিনি আইন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করেন। বঙ্গবন্ধু কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামাত শিবির মুসলিম লীগ নিজামে ইসলামী পার্টি পুনরায় উজ্জীবিত করে তাদের রাজনীতির অঙ্গনে ফ্রী ছেড়ে দেন। একই সঙ্গে নিষিদ্ধ গোষ্ঠী মদ জুয়া হাউজিং পুনরায় চালু করে দেন। সে সময় লাকি খানের ডান্স যুব সমাজকে আকৃষ্ট করে। গোলাম আযম, শাহ আজিজদের নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেয়া হয়। আবার বাঙালি জাতির কাঁধে পাকিস্তানি ভূত চাপিয়ে দেবার ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এবং তারা পুরোদমে রাজনীতি শুরু করে। শাহ আজিজুর রহমান জিয়াউর রহমানের সাথে যোগ দেয় এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত হয়। গোলাম আযম বিএনপির সাথে ঘাটছড়া বাঁধলেও আলাদাভাবে দল গোছাতে শুরু করে। এবং এরাই বেশকিছু জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলে। যেমন হিযবুল মুজাহিদিন, আল্লার দল, আনসার উল্লাহ বাংলা টীম, হিযবুত তাহরির। জঙ্গিরা রাজশাহীতে সশস্ত্র হয়ে প্রকাশ্যে মিছিল পর্যন্ত করে। ২০১৩, ২০১৪ এবং ২০১৫ সালে শত শত প্রেটোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে। একসঙ্গে ৬৪ জেলার ৫০০ পয়েন্টে বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাদের শক্তি জামান দেয়। সব কথার শেষ কথা হল মিলিটারি জিয়া বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর জন্য জঙ্গির উথান ঘটায়। বস্তত জিয়া মুক্তিযুদ্ধের জন্য সীমান্ত অতিক্রম করলেও কোন একটি বড় যুদ্ধ করেছেন এমন কোন তথ্য দেখা যায় না। বরং তখন থেকে তার দহরম মহরম ছিল খন্দকার মুস্তাক আহমেদ, মাহবুব আলী চাষী, তাহের উদ্দিন ঠাকুরের এমন কি একটি কথা শোনা গেছে মুক্তিযুদ্ধের মাঝে জিয়ার কাছে লেখা পাকিস্তানি জেনারেল জাঞ্জুয়ার একখানা চিঠি কলকাতায় ধরা পড়ে যাতে লেখা ছিল “major we are happy with your performance” এতে প্রমাণিত হয়না জিয়া মুক্তিযোদ্ধার আড়ালে পাকিস্তানী চর ছিল?

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আরেকটি রক্তাক্ত দিন। আওয়ামীলীগ বিরোধী দলে। সেদিন ছিল বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের বিক্ষোভ মিছিল। মিছিল বের হবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনের চত্বর থেকে। যথারীতি চত্বর মানুষে মানুষে ভরে চারদিকে উপচে পড়ছিল। আওয়ামীলীগও তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সকল কেন্দ্রীয় নেতাসহ অস্থায়ী মঞ্চ হিসাবে একটি ট্রাকে ওঠেন এবং মিছিল পূর্ব বক্তৃতা শেষে মিছিল শুরু করবেন ঠিক এ সময় একটার পর একটা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের চত্বর মৃতদেহ রক্তের ওপর ভাসতে থাকে। অন দা স্পট কেন্দ্রীয় নেত্রী আইভি রহমান সহ ২৪ জনের প্রানহানি এবং বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিন শতাধিক আহত হন। ধারণা করা হয় ১৩ টি গ্রেনেড ছোড়া হয়েছিল এবং যে গ্রেনেডটি নেত্রীকে বহনকারী ট্রাকের নিচে পড়েছিল সেটি বিস্ফোরিত হয়নি। যে কারণে শেখ হাসিনা সহ ট্রাকের উপর নেতারা বেঁচে যান। নেতারা নেত্রীকে ঘিরে মানব প্রাচীর রচনা করেন। এটি সম্ভবত আল্লাহ পাকের ইশারা। আল্লাহ নেত্রীকে বাঁচিয়ে রাখবেন মানুষের সেবায়। তারপরও আব্দুর রাজ্জাক, মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের শরীরে গ্রেনেড এর স্পিøন্টার বের করতে না পারায় পরবর্তীতে মারা যান। এখনো অনেকে এই ইসপ্লিন্টারের যন্ত্রণা নিয়ে পঙ্গুত্বের জীবন যাপন করছেন। ইন্টারেস্টিং ব্যাপার তখনকার সরকার প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এর বিচার তো করেনইনি বরং জজ মিয়া নাটক সাজিয়ে ঘটনা ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন। এক বিচারপতিকে দিয়ে সম্ভবত নাম জয়নাল আবেদীন ওয়ান ম্যান তদন্ত কমিশন করা হয় ওই বিচারপতি রিপোর্ট দেন বাইরের থেকে এসে ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ইঙ্গিতটি ভারতের দিকে। সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার ছিল বেগম খালেদা জিয়া ও তাঁর আনাড়ি কয়েকজন এমপি সংসদে বললেন শেখ হাসিনা ভেনেটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে গিয়েছিল। সঙ্গে সঙ্গে সংসদ নেতার আসনে বসা খালেদা অট্টহাসি দিয়ে টেবিল চাপড়িয়ে তাদের উৎসাহ দেন।
তবে সবকিছু ফাঁস করে দেয় কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি দুইটি শক্তিশালী মাইন পুতে শেখ হাসিনাকে হত্যা প্রচেষ্টার হোতা মুফতি হান্নান। আসল সত্য প্রকাশ করে দেয় যে তারেক রহমানসহ হাওয়া ভবনে বসে এই গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করা হয়। তৎকালীন ছাত্রদলের নেতার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন পাকিস্তান থেকে ওই আরজেস গ্রেনেড এনে সরবরাহ করে। এমনকি গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বাবর এর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়ে গোটা এলাকাধোঁয়ায় আচ্ছন্ন করে দেয় যাতে হামলাকারীরা সহজে পালাতে পারে।

সাম্প্রতিককালে তারেক ফখরুলরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে নানান ভাবে বেয়াদবি করে চলেছে। দন্ড মাথায় নিয়ে মুচলেকা দিয়ে পালিয়ে লন্ডনে বসে অনলাইন টিভিতে ভিডিও বানিয়ে প্রচার করে চলেছে দিনের পর দিন। বেয়াদবের মত বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করছে এবং মাননীয় নেত্রী সম্পর্কে যা তা বলে চলেছে। ইদানিং একটা ঘোষণা দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশের পর দেশ চালাবে খালেদা জিয়া। মির্জা ফখরুল আর আমানুল্লাহ আমান এ কথাটা বেশি বলেন। বাংলাদেশের মানুষ এতদিন শুনে আসছে খালেদা জিয়া অসুস্থ এই যায় তো এই চোখ মেলে এমন অবস্থা এবং বিদেশের চিকিৎসা না করালে তাকে বাঁচানো যাবে না। কত আন্দোলন কত বিক্ষোভ মিছিল। অথচ তাকে বিদেশে চিকিৎসাও করানো হলো না তিনি দেশ চালাবেন। তাছাড়া তিনি তো দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত (শেখ হাসিনার বদান্যতায় কারাগারে না থেকে বাসায় আছেন) তিনি কিভাবে দেশ চালাবেন। আর তারেকতো দন্ড মাথায় নিয়ে বিদেশে পলাতক। সেই বা কিভাবে দেশ চালাবে। কিন্তু কোথায় খালেদা জিয়া? ঊরং নয়া পল্টন অফিস থেকে পুলিশ কয়েতশত বস্তা চাল, ডাল, তেল উদ্ধার করা হয়।

আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা ওবায়দুল কাদের বলেছেন ডিসেম্বর মাস তো আমাদের বিজয়ের মাস। বিএনপি-জামাতের নয়। তাদের আত্নসমর্পনের মাস। বস্তত তা-ই তারা ডিসেম্বর নিয়ে গর্ব করতে পারবেনা। কারণ তারা তাদের প্রভু পাকি জেনারেলসহ ৯৩০০০ সেনা আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ও ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণকারীর কোন মান সম্মান থাকে না। এই সত্যটা মির্জা ফখরুলরা বুঝতে পারেন না। তারেক রহমান তো মায়ের মতই অশিক্ষিত তবে মারচেয়ে একটু কম। তারপরও সে কিভাবে বুঝবে। তবে অবাক হতে হয় যখন দেখি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার মত নারী বা কতিপয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক তথা শিক্ষিত লেখাপড়া জানা লোক তারেকের মতো আনাড়ীকে নেতা হিসেবে গর্ব করে।

ভুলে যাওয়া উচিত নয় বাংলাদেশের সুনাগরিক হতে হলে জাতির পিতাকে জানতে হবে। তার ১৯৪৭ সালের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেজুয়েট হয়ে ঢাকায় ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ল তে ভর্তি এবং বাংলা ভাষা আন্দোলন, ১৯৪৮ এ ছাত্রলীগ এবং ৪৯ এ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী আন্দোলন এবং এর জন্য তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্টিকেট বা বহিষ্কার, ১৯৫৪ সালের ২১ দফার নির্বাচন ও জয়লাভ, দল সংগঠনে মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ, ১৯৫৮ সালের আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ৬২ শিক্ষা আন্দোলন ও গোপন সংগঠন স্বাধীনতার নিউক্লিয়াস স্বাধীন বিপ্লবী পরিষদ গঠন ১৯৬৬ ছয় দফা এবং আগরতলা রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা ও হত্যা চক্রান্ত, ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কারা মুক্তির পর জাতির পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে ১০ লক্ষাধিক মানুষের করতালির মধ্যে তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধু উপাধি প্রদান, একাত্তরের ৩রা জানুয়ারি পল্টনে ছাত্রলীগের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা, একই বছর মার্চ মাসে দুনিয়া কাঁপানো অসহযোগ আন্দোলন, ঐতিহাসিক রেসকোর্স বা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কালজয়ী ৭ই মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতার প্রথম ঘোষণা, ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও গেরিলা পদ্ধতিতে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশ, পাকিস্তানের হাতে গ্রেপ্তার ও সেখানকার লায়ালপুর কারাগারে আটক এবং দুইবার ফাঁসির আদেশ প্রদান কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতা এবং মিসেস ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে মিত্র বাহিনী হিসেবে ভারতীয় বাহিনীর অংশগ্রহণ এবং গণহত্যার অবসান ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য মীসেস গান্ধীর ৩৭ দেশ ভ্রমণ ও জনমত গঠন, পরিশেষে সরাসরি যুদ্ধে অবতীর্ণ এবং ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজয় বরণ ও আত্মসমর্পণে বাধ্য করার মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন। এই দীর্ঘ পরিক্রমায় ১৪ বছর কারাগারে ছিলেন। এই গেল একদিক আরেক দিক হলো স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনঃগঠন অল্প সময়ে বিশ্বের অন্যতম সেরা সংবিধান প্রণয়ন, ১৯৭৩ এর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে ৭৩-এর নির্বাচন ও সংবিধান অনুমোদন, বিদেশের চক্রান্তে একটি দুর্ভিক্ষ মোকাবেলা করে দেশকে স্বল্প উন্নত দেশে রূপান্তর।

তারপর চরম ট্রাজেডি। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট স্বাধীনতার শত্রুদের সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ড জাতীয় চার নেতার হত্যা বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর চক্রান্ত।

আরেক দিক হলো ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান এবং জেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা দলের এবং দেশের নেতৃত্ব গ্রহণ করায় বাংলাদেশ বিশ্বের বিস্ময় মাধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ। এরপর আর বিস্তারিত বলার প্রয়োজন নেই।

পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গনহত্যার কিছু বিবরন পাওয়া যায় আমেরিকান কবি এলেন সিন্সবার্গের কবিতায়

Ò September on Jessore roadÓ (সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড)

ÒMillions of babies watching the skies

Bellies swollen, with big round eyes

On Jessore Road–long bamboo huts

Noplace to shit but sand channel ruts

Millions of fathers in rain

Millions of mothers in pain

Millions of brothers in woe

Millions of sisters nowhere to go..

আমেরিকান কবি ALLEN GINSBERG ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পশ্চিম বাংলা থেকে যশোর রোড দিয়ে বাংলাদেশে আসার চেষ্টা করেন। পথে পথে রিপোজির সারি এবং যশোর রোডের দুপাশে ঝুপড়িতে বসবাসকারী মানুষের কষ্ট দেখে কবিতাটি লেখেন “September on Jessore Road”.

সিন্সবার্গ কবিতাটি প্রথম আবৃতি করেন জর্জেস ইপিসকোপলে চার্চে একটি আবৃতি প্রোগ্রামে। পরে ঐতিহাসিক বাংলাদেশ কনসার্টে সুর দিয়ে গানটি সংগীতজ্ঞ বব ডিলন পরিবেশন করেন, যে কনসার্টের অন্যতম উদ্যোক্ত ছিলেন পন্ডিত রবিশংকর।

এরপরও যদি কেউ না দেখে সে অন্ধ। আমি শিরোনাম দিয়েছি-

“১৬ ডিসেম্বর আনন্দ-বেদনার কাব্য”

“যেন ভুলে না যাই”

ঢাকা- ১৬ ডিসেঃ ২০২২

লেখক- বীর মুক্তিযোদ্ধা, প্রধান সম্পাদক, দৈনিক পথে প্রান্তরে

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ