Search
Close this search box.
প্রস্তুত স্বপ্নের মেট্রোরেল

২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী

* প্রথম দফায় উত্তরা-আগারগাঁও পর্যন্ত স্টেশন থাকছে ৯টি * চলবে ১০ সেট ট্রেন, প্রতি সেটে থাকবে ৬টি বগি * চালকদলে থাকছেন দুই নারী মরিয়ম ও আসমা  * সর্বনিম্ন ভাড়া ২০, সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা * কার্ডধারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ছাড়

শাহনাজ পারভীন এলিস

বাঁচবে সময়, বাঁচবে পরিবেশ/যানজট কমাবে মেট্রোরেল’- এমন স্লোগানে বিজয়ের মাসে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বাঙালির স্বপ্নের বৈদ্যুতিক ট্রেন বা মেট্রোরেল। আগামী ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধনকরতে পারেন বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত থেকে মেট্রোরেলের প্রথম ধাপের (উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত) কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের জাতীয় সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপকমিটির সভায় তিনি এ তথ্য জানান।

এর আগে গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এমএএন ছিদ্দিক জানান, ডিসেম্বরের শেষে মেট্রোরেল উদ্বোধন করা হবে। তাই এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে উদ্বোধনের জন্য এরই মধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্তৃপক্ষ।

মেট্রোরেলের সবশেষ কাজ হিসেবে বিবেচিত ‘সিস্টেম ইন্টিগ্রেশনের’ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন পর্যন্ত যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে, তার কোনোটিতে আবার নতুন করে কিছু করতে হয়নি। ১২টি ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হলেও ১০টিতে সরাসরি যাত্রী পরিবহন করা হবে জানিয়ে এমএএন ছিদ্দিক বলেন, বাকি দুটি যেকোনও সময়ে চলাচলের জন্য ডিপোতে প্রস্তুত থাকবে। ট্রেন দুটি পরিচালনার কর্মকর্তারাও প্রস্তুত থাকবেন। যাত্রীদের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, সেদিকটি মাথা রেখে সবসময় ব্যাকআপ রাখতে হয়।

যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চর্চায় উদ্বোধনের পর প্রথমদিন থেকেই মেট্রোরেলে পরিপূর্ণভাবে যাত্রী পরিবহন করা হয় না। পর্যায়ক্রমে যাত্রী বহন বাড়াতে হবে। পরবর্তী ২-৩ মাসের মধ্যে শতভাগ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।

জানা গেছে, উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত দীর্ঘ ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলমান। এরমধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধন করা হবে ডিসেম্বরের শেষের দিকে। এই রুট চালু হওয়ার পর আগারগাঁও থেকে যাত্রী পরিবহনে মেট্রো স্টেশন এলাকায় বিআরটিসির ডিপো তৈরির কাজ চলছে। যাত্রীদের চাপ সামাল দেবে বিআরটিসির বাস সার্ভিস।

ডিএমটিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন বা মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬) এর কার্যক্রম চালু করার সব প্রস্তুতি তারা শেষ করেছেন। এখন শুধু স্টেশন ব্যবস্থাপনা এবং কারিগরি দিকগুলো পরীক্ষা-নীরিক্ষ ও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এই অংশে স্টেশন রয়েছে নয়টি। এছাড়া আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত আগামী বছরের শেষে মেট্রোরেল চালুর কাজ এগিয়ে চলছে; এই অংশে স্টেশন রয়েছে সাতটি। মেট্রোরেলের স্টেশনে লিফট, এস্কেলেটর ও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যাবে। তিনতলা স্টেশন ভবনের দ্বিতীয় তলায় কনকোর্স হল। এখানে টিকিট কাটার ব্যবস্থা, অফিস ও নানা যন্ত্রপাতি থাকবে। তিনতলায় রেললাইন ও প্ল্যাটফর্ম। শুধু টিকিটধারী ব্যক্তিরাই ওই তলায় যেতে পারবেন। দুর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের পাশে বেড়া থাকবে। স্টেশনে ট্রেন থামার পর বেড়া ও ট্রেনের দরজা একসঙ্গে খুলে যাবে। আবার নির্দিষ্ট সময় পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হবে।

প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও জানান, প্রাথমিকভাবে দুই দিক থেকেই মেট্রোরেল চলাচলের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। শুরুতে এই রেল চলবে ১০ মিনিট অন্তর; তবে পর্যায়ক্রমে এক ট্রেনের সঙ্গে অন্য ট্রেনের সময়ের পার্থক্য আরও কমে আসবে। চূড়ান্তভাবে প্রতি তিন মিনিট পরপর মেট্রোরেল চলার কথা রয়েছে। প্রথমদিকে দৈনিক এই রেলে যাতায়াত করতে পারবেন ৪ লাখ ৮৩ হাজার যাত্রী।

দেশের প্রথম মেট্রোরেল চালানোর জন্য নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জন নারীও আছেন। মরিয়ম আফিজা ও আসমা আক্তার নামে ওই দুই নারীকে প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। মেট্রোরেলের চালকের পদটির নাম ‘ট্রেন অপারেটর’। এই পদে ২৫ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন মরিয়ম আফিজা। স্টেশন থেকে ট্রেন পরিচালনায় যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে সমন্বয় করবেন স্টেশন কন্ট্রোলার। এই পদে ৩৪ জনের সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন আসমা আক্তার। তিনি ট্রেন অপারেটর কখনো কখনো স্টেশন কন্ট্রোলারের দায়িত্ব পালন করবেন। এই স্টেশন কন্ট্রোলার প্রয়োজন হলে ট্রেনও চালাবেন। মরিয়ম ও আসমাকে উত্তরার দিয়াবাড়িতে মেট্রোরেলের ডিপোতে কারিগরি ও প্রায়োগিক প্রশিক্ষণসহ চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনিং একাডেমিতে দুই মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

২০১২ সালে মেট্রোরেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হলেও এর কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের দিকে। প্রথম দিকে মেট্রোরেলে এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। মেট্রোরেলের পথ সম্প্রসারণ, স্টেশন প্লাজা নির্মাণ, কিছু স্টেশনে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ, পরামর্শকের পেছনে ব্যয় বৃদ্ধি, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বাড়তি ভ্যাটসহ বিভিন্ন উপকরণ যুক্ত হয়েছে। এর জন্য প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। বর্তমানে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা। সবশেষ যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তাতে জাইকা দেবে ১৯ হাজার ৭১৮ কোটি টাকা। সরকার খরচ করবে ১৩ হাজার ৭৫৩ কোটি টাকা। শুরুতে জাইকার দেওয়ার কথা ছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ