স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর বাড্ডায় ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার’ আড়ালে ‘এমএলএম’ ব্যবসার মাধ্যমে অন্তত দেড় হাজার মানুষের কোটি টাকা লোপাট করেছেন কথিত ওই মানবাধিকার সংস্থার মালিক মো: আব্দুল কাদের। যাদের কাজই ছিল প্রতারণার মাধ্যমে দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে অর্থ হাতিয়ে নেয়া।
একজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে অবৈধ ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার’ এগারো সদস্য’কে আটক করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ।
র্যাব বলছে, চক্রের টার্গেট মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষ। তাদেরকে জামানত নিয়ে উচ্চ বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করত। ভুক্তভোগীরা জমাকৃত টাকা ফেরত চাইলে হামলা-মামলার হুমকি দেওয়া হতো।
বুধবার কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে.কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের সদস্যদেরে আটক করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- প্রতারক চক্রের মূল হোতা আব্দুল কাদের (৪৪), এবং তার সহযোগী মির্জা নাসির উদ্দিন (২৫), মাহফুজুর রহমান (৫০), এ আর আব্দুল মোমেন (৪৯), মেহেদী হাসান (২৫), আমজাদ হোসেন (৩৪), মঞ্জুরুল হাসান খান (৩৫), আব্দুল বারিক (৩৮), মোঃ রুহুল আমিন (২৫), মোছা. মুন্নি (৩০), এবং নিলুফা ইসলাম নিপা (৩৪),
এসময় তাদের কাছ থেকে ৪ টি কম্পিউটার, ৪ টি ল্যাপটপ, ১৭ টি মোবাইল, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক, ভাউচার, চুক্তিনামা,প্যাড, সীল, নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
অধিনায়ক বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থার আড়ালে এমএলএম ব্যবসার নামে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল। তারা মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০,০০০ টাকা থেকে শুরু করে মাসিক ১,২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো।
তিনি বলেন, চক্রটি এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কাছে থেকে প্রতারনা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সকল অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতারক চক্রটিকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১ ছায়াতদন্ত ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
চক্রটির মূলহোতা মো. আব্দুল কাদের কে জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে,সে ২০২০ সালে রাজধানীর বাড্ডার প্রগতি স্বরনি এলাকায় একটি বাড়ির ৬ষ্ঠ তালায় ‘বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খুলে। সে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার ও পরিবেশ উন্নয়ন সংস্থা নামক প্রতিষ্ঠানের আড়ালে বহুল প্রচলিত ‘এমএলএম ব্যবসায়ের পদ্ধতি ব্যবহার করে তার ব্যবসার প্রসার ঘটায়। সে এবং তার সহযোগীরা মূলত সমাজের নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তদের টার্গেট করে মাসিক ১০ হাজার থেকে শুরু করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সংস্থাটির দাতা সদস্য বানানোর কথা বলে, অনুদান হিসেবে জন প্রতি ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতো।
অধিনায়ক আরও বলেন, কাজের নামে দাতা সদস্যদের দিয়ে এমএলএম আদলে নতুন দাতা সদস্য সংগ্রহের কাজ করানো হতো। তাদেরকে বলা হতো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর বেতন ১০ হাজার টাকা হবে। কাজ হিসেবে বলা হত এলাকায় বাল্যবিবাহ হলে কোন দরিদ্র পরিবার অর্থাভাবে মেয়ে বিয়ে দিতে না পারলে এবং নদীতে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হলে সংস্থাটির কর্মকর্তাদের জানাতে। এমন সহজ চাকরির আশায় ৩০ হাজার টাকা দিয়ে দাতা সদস্য হবার পর তাদেরকে জানানো হতো নতুন দাতা সদস্য আনতে হবে। নতুন সদস্য আনতে না পারলে বেতন হবে না। অথচ এ চক্রটি টাকা নেওয়ার আগে লোক সংগ্রহের বিষয়ে কিছুই বলা হতো না।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান,ভুক্তভোগীরা টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়ে বেতন না পেয়ে রাজধানীর মধ্য বাড্ডার অফিসে গেলে তাদের মামলা দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করার ভয় দেখানো হতো। অধিকাংশ সদস্যই সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। এভাবে অভিযুক্ত মো. আব্দুল কাদের কয়েক হাজার গ্রাহকদের সাথে প্রতারনা করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
অধিনায়ক জানান, অভিযুক্তরা প্রতারণার সাথে জড়িত আছে বলে র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে । গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে ।