পথে প্রান্তরে ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এটি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য। আফ্রিকাজুড়ে এখন ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর হিড়িক পড়েছে। সাধারণ মানুষের মাধ্যমে এইসব ভুয়া তথ্য উসকে দিচ্ছে বর্ণবাদ, সহিংসতা, নারীবিদ্বেষ এবং অভিবাসীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব। এর মাধ্যমে অনলাইন কনন্টেটের ওপর মানুষের আস্থা কমছে।
আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, গত সাত বছরে মহাদেশটির ৩০ কোটি মানুষ সামাজিক মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে এবং আফ্রিকার ৬০ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সামাজিক মাধ্যম থেকে সংবাদ সংগ্রহে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।
আফ্রিকা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে মহাদেশজুড়ে ১৮৯টি বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচারণার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। ২০২২ সালের তুলনায় যা ৩০০ শতাংশ বেশি। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের দিক থেকে আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে নাইজেরিয়া এবং কেনিয়া। পাশাপাশি তারা ভুল তথ্য সম্পর্কিত শীর্ষ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে রয়টার্স ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের ডিজিটাল নিউজ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
এ থেকে উত্তরণের জন্য এআই টুল (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুল) ও কিছু কৌশল নিয়ে কাজ করছে সাব-সাহারা আফ্রিকার বেশকিছু সাংবাদিকতা প্রতিষ্ঠান, যা ফ্যাক্ট-চেকিং ও অনুসন্ধানী রিপোর্টিংকে আরও জোরালো করবে।
মাইএআইফ্যাক্টচেকার টুল
গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে সঠিক খবরের তুলনায় ভুয়া খবর ছয় গুণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যা মোকাবিলার জন্য, একটি দল মাইএআইফ্যাক্টচেকার (MyAIFactChecker) নামে একটি টুল তৈরি করা হয়েছে। যা ব্যবহারকারীদের দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সংবাদ, সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট এবং অন্যান্য ডিজিটাল কন্টেন্ট যাচাই করতে সহায়তা করে।
এই এআইটুলটি তৈরি করেছে ব্রেইন বিল্ডারস ইয়ুথ ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভের (বিবিওয়াইডিআই) নাইজেরিয়ার ফ্যাক্টচেকিং শাখা ফ্যাক্টচেকআফ্রিকা। ২০২৪ সালে টুলটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। টুলটির উন্নত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ভুয়া তথ্য বিস্তারের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতেও সক্ষম।
দুবাওয়া এআই চ্যাটবট ও অডিও টুল
২০২৪ সালের মে মাসে নাইজেরিয়ার সেন্টার ফর জার্নালিজম ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (সিজিআইডি) দুবাওয়া প্রকল্পের অধীনে ফ্যাক্ট-চেকিং কার্যক্রমকে জোরদার করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাচালিত চ্যাটবট ও অডিও প্ল্যাটফর্ম চালু করে। দুবাওয়া চ্যাটবটটি এমনভাবে বানানো হয়েছে যা দ্রুত নির্ভুল তথ্য খুঁজে বের করে সাংবাদিকদের পাশাপাশি অন্যদের অনুসন্ধানে সহায়তা করে।
দুবাওয়া চ্যাটবটটি হোয়াটসঅ্যাপের সাথে সংযুক্ত এবং ওয়েব থেকে সর্বসাম্প্রতিক তথ্য সংগ্রহে সক্ষম। আর দুবাওয়া অডিও প্ল্যাটফর্মটি রেডিও প্রোগ্রাম মনিটরের মাধ্যমে অডিও ট্রান্সক্রাইব করে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ করে। তবে এ ফিচারটি লাইভ রেডিওর তথ্য যাচাইয়ে খানিকটা চ্যালেঞ্জে পড়ে। যেমন অপ্রমাণিত দাবি (তথ্য)- যা সাধারণত যাচাই করা কঠিন। কারণ এ নিয়ে কোনো লিখিত রেকর্ড নেই। লাইভ সম্প্রচারের সময় যখন কোনো বক্তা এ ধরনের অপ্রমাণিত তথ্য দেন, তখন তা যাচাই করাটা জটিল হয়।
নুবিয়া এআই স্টোরি ক্রিয়েশন টুল
২০২২ সালে নরওয়ের সংবাদপত্র ফেদ্রেলান্দসভেন্নেনের সঙ্গে মিলে মিডিয়া গবেষণা ও ডেটা অ্যানালিটিকস প্রতিষ্ঠান ডেটাফাইট নাইজেরিয়া নিয়ে আসে এআই টুল নুবিয়া। টুলটি প্রথমে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চালিত সংবাদ বিতরণ প্ল্যাটফর্ম (সংবাদ সংগ্রহ, বিশ্লেষণ করে ব্যবহারকারীর কাছে দ্রুত ও নির্ভুলভাবে পৌঁছে দেওয়া) হিসেবে তৈরি করা হয়। যেটির কাজ ছিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবাদ বা তথ্য বিতরণ।
পরবর্তীতে, ওয়েবক্যাম (যেমন, লাইভ ভিডিও ফুটেজ), ভূ-স্থানিক ডেটা (যেমন, স্যাটেলাইট বা ম্যাপ সম্পর্কিত তথ্য) এবং সামাজিক-অর্থনৈতিক ডেটা (যেমন, জনসংখ্যা, অর্থনৈতিক অবস্থা) সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্যভিত্তিক সতর্কতা (ডেটা-ড্রিভেন অ্যালার্ট) এবং প্রতিবেদন তৈরি করা।
নুবিয়ার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিবেদন তৈরি ও ব্যবস্থাপনা দক্ষতা। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রতিবেদন লেখার সাথে টেমপ্লেট তৈরি করতে পারে। ব্যবহারকারীরা সরাসরি এর ইন্টারফেসে কনটেন্টগুলো দেখতে ও কাস্টমাইজ করতে পারেন।