Search
Close this search box.

সন্দেহের বসত অটোরিকশা চালকে জবাই করে হত্যা!

স্টাফ রিপোর্টার- গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানার গোসাত্রা এলাকায় অটোরিকশা চালকের গলা ও পুরুষাঙ্গ কেটে হত্যার ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

র‌্যাব বলছে, নিহত আজাদ (১৬) ও ঘাতক নাহিদ হোসেন (২২) পেশায় অটোরিকশা চালক। দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকায় বসবাসের সূত্রে তাদের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। ঘাতক নাহিদের অটোরিকশার ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ৫০ হাজার টাকা লোন তোলে ৷ সেই টাকা নিয়ে ব্যাটারি কিনতে যাওয়ার সময়ে ছিনতাইয়ের শিকার হন নাহিদ। এই ঘটনায় আজাদ জড়িত সন্দেহে তাকে পূর্বপরিকল্পিত স্থানে নিয়ে হত্যা করে নাহিদ।

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।

তিনি জানান, গত ৫ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার গোসাত্রা এলাকার সবজি খেত থেকে অজ্ঞাত একটি খন্ডিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরবর্তীতে মরদেহটি নিজের ছোট ভাইয়ের বলে শনাক্ত করেন গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার হালিম মিয়ার ছেলে রাজু মিয়া।

র‌্যাবকে রাজু জানান, তার ছোট ভাই আজাদ (১৬) গত ৪ ফেব্রুয়ারি বিকালে নিজের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা নিয়ে বের হয়। এরপর থেকে সে নিখোঁজ ছিল। এর একদিন পর সবজি খেত থেকে আজাদের গলা, পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কাটা অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ সময় নিহতের মাথার নিচ থেকে স্টিলের রক্তমাখা চাকু উদ্ধার করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। এই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আব্দুল্লাহ আল মোমেন আরও জানান, মামলা দায়েরের পরে ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব-১ এর গাজীপুর ক্যাম্প। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ (৮ ফেব্রুয়ারি) সকালে কালিয়াকৈর থানার হরিণহাটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘাতক নাহিদকে গ্রেফতার করা হয়।

এ সময় তার কাছ থেকে নিহত আজাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, নগদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা ও একই এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে নিহতের অটোরিকশাটি উদ্ধার করা হয়। নাহিদ টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার আতাউর মন্ডলের ছেলে।

গ্রেফতার  নাহিদ হত্যার কথা স্বীকার করে র‌্যাবকে জানিয়েছে, সে দুই বছর আগে হরিণহাটি এলাকায় এসে ভ্যান গাড়িতে করে কাঁচা সবজির ব্যবসা শুরু করে। এই সবজি পরিবহনের সূত্রে নিহত আজাদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। পরে ব্যবসা বাদ দিয়ে নাহিদ অটোরিকশা কিনে চালানো শুরু করে। কিন্তু গত জানুয়ারি মাসে তার রিকশার ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। এই ব্যাটারি কেনার জন্য মানিকগঞ্জের আমতলী এলাকার আলোর প্রত্যাশা সমবায় সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা কিস্তি তুলে আনে। এই টাকা নিয়ে ব্যাটারি কিনতে যাওয়ার পথে আজাদের সঙ্গে তার দেখা হয়।

এই সময় আজাদ তার গাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে। আজাদের অটোরিকশায় সফিপুর থেকে আনসার একাডেমি হয়ে নির্জন জঙ্গলের মাঝখানের রাস্তায় গেলে গাড়ি থামিয়ে প্রাকৃতিক ডাকে দিতে যায়। এই সময় জঙ্গল থেকে দুই ব্যক্তি গাড়িতে থাকা নাহিদকে ভয় দেখিয়ে তার সঙ্গে থাকা ৫০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। ঘটনায় নাহিদ মনে মনে ভিকটিম আজাদের সংশ্লিষ্টতার সন্দেহে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গত (৪ ফেব্রুয়ারি) নাহিদ আবারও কাঁচা তরকারির ব্যবসা করবে জানিয়ে সবজি পরিবহনের জন্য আজাদকে ডাকে। এই সময় হত্যার উদ্দেশ্য সফিপুর বাজারের ফুটপাত থেকে ৩০ টাকা দিয়ে একটি চাকু কিনে। পরে অটোতে করে কাঁচা তরকারি আনার জন্য রওয়ানা হয়ে কালিয়াকৈর থানার গোসাত্রা সবজি খেতে নিয়ে প্রথমে আজাদকে গলা টিপে ধরে মাটিতে ফেলে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য চাকু দিয়ে জবাই করার পরেও ঘাতক নাহিদের মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়। এরপর নিহতের পুরুষাঙ্গ ও অন্ডকোষ কেটে ফেলে। পরবর্তীতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকুটি ফেলে আসে নিহতের রিকশা, টাকা ও মোবাইল নিয়ে চলে যায়। এরপর থেকেই আত্মগোপনে ছিল নাহিদ।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ