মিথুন আশরাফ – বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) নবম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ইমরুল কায়েসের কুমিল্লা ভিক্টোারিয়ান্স। মাশরাফি বিন মর্তুজার সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতে কুমিল্লা। টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা।
মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিলেটের করা ১৭৫ রানের জবাবে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারে ১৭৬ রান করে জিতে কুমিল্লা। জনসন চার্লসের ৫২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় করা অপরাজিত ৭৯ রান, লিটন কুমার দাসের ৫৫, মঈন আলীর অপরাজিত ২৫ রানে ৪ বল বাকি থাকতে জিতে যায় কুমিল্লা। রুবেল হোসেনের একটি ক্যাচ মিস এবংনিজের শেষ ওভারে ২৩ রান দেয়ার খেসারত দেয় সিলেট।
ম্যাচটিতে টস জিতে কুমিল্লা ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। আগে ব্যাট করে সিলেট। মুশফিকুর রহিমের ৪৮ বলে করা অপরাজিত ৭৪ ও ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্তর করা ৬৪ রানে ৭ উইকেটে ২০ ওভারে ১৭৫ রান করে সিলেট। কুমিল্লার সামনে জিততে ১৭৬ রানের টার্গেট দেয় সিলেট। প্রথম দুই উইকেট দ্রুত পড়ে গেলেও তৃতীয় উইকেটে মুশফিক ও শান্ত মিলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিই দলকে আশা দেখায়। শান্ত ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রান করে আউট হলেও মুশফিক অপরাজিত থেকে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়ে মাঠ ছাড়েন। ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় অপরাজিত ৭৪ রান করেন মুশফিক। জিম্বাবুয়ের রায়ান বার্ল তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৩ রান করতে পারেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, মুশফিক ও শান্ত যদি হাফসেঞ্চুরি না করতেন, তাহলে এত রান করতে পারতনা সিলেট।
জবাবটা ভালোই দেয় কুমিল্লা। লিটন কুমার দাস (৩৯ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৫৫ রান) যতক্ষন উইকেটে ছিলেন, কুমিল্লা সহজেই জিতে যাবে, তা ভাবা হয়। যেই দলের ১০৪ রানে লিটনকে আউট করে দেন রুবেল হোসেন, খেলা ঘুরে যাওয়ার সম্ভাবনা জাগে। কিন্তু ৮ রানে ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের জনসন চার্লস ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। দলের ৪৮ রানে চার্লসের সহজ ক্যাচটি রুবেল ধরতে পারেননি। সেই চার্লস কুমিল্লার নিয়ন্ত্রণে ম্যাচ রাখেন। লিটনের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের মঈন আলীর সঙ্গে ৫০ রানের উপরে জুটিও গড়ে ফেলেন।
যে রুবেল ক্যাচ হাতছাড়া করেন, তার শেষ ওভারে ২ ছক্কা, ১ চারও হাকান চার্লস। ৪১ বলেই হাফসেঞ্চুরি করে ফেলেন। রুবেল নিজের শেষ ওভারে ২৩ রান দেন। শেষ ৪ ওভারে জিততে ৫২ রান লাগে। সেখান থেকে শেষ ৩ ওভারে জিততে ২৯ রানে নিয়ে আসেন চার্লস। ১২ বলে জিততে ২১ রান লাগে। ৬ বলে জিততে লাগে ৩ রান। ১৯.২ ওভারে জিতে যায় কুমিল্লা। শিরোপা ঘরে তোলে। চার্লস অপরাজিত ৭৯ রান ও মঈন অপরাজিত ২৫ রান করেন। দুইজন মিলে চতুর্থ উইকেটে অবিচ্ছিন্ন ৭২ রানের জুটি গড়েন। তাতেই জয় মিলে যায়।
কুমিল্লা যদি শিরোপা জিতত, তাহলে চতুর্থ শিরোপা জয় হতো। আর সিলেট জিতলে প্রথমবার শিরোপা জিতত। কুমিল্লা শিরোপা জিতলেই অধিনায়ক হিসেবে ইমরুলের তৃতীয়বারের মতো শিরোপা জয় হতো। আর মাশরাফি জিতলে পঞ্চমবারের মতো শিরোপা জয় হতো। বাজিমাত করল ইমরুলই। কুমিল্লাই।
বর্তমান চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা আবারও ফাইনালে উঠে। এরআগে তিনবার কুমিল্লা শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচ খেলে। তিনবারই চ্যাম্পিয়ন হয়। ২০১৫ সালে তৃতীয় আসরে প্রথমবার, ২০১৯ সালে ষষ্ঠ আসরে দ্বিতীয়বার ও সবশেষ ২০২২ সালের আসরে তৃতীয়বার শিরোপা জিতে কুমিল্লা। সবশেষ ইমরুল কায়েসের নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা। এরআগে ২০১৯ সালে যখন চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা, তখনও ইমরুলই ছিলেন কুমিল্লার অধিনায়ক। শুধু ২০১৫ সালে প্রথমবার যখন চ্যাম্পিয়ন হয় কুমিল্লা, তখন মাশরাফি ছিলেন অধিনায়ক। এবার মাশরাফির দলের বিপক্ষেই ফাইনালে খেলে কুমিল্লা। জিতে চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়।
মাশরাফি এবার সিলেটকে ফাইনালে ওঠান। প্রথমবার সিলেট ফাইনালে খেলে। চ্যাম্পিয়ন হলে প্রথমবারের মতো বিপিএলের শিরোপা জিততো সিলেট। তবে মাশরাফি এরআগে চারবার শিরোপা উচিয়ে ধরেন। শিরোপা জয়ের স্বাদ পান। এবার পারলেন না মাশরাফি শিরোপা উচিয়ে ধরতে। ইমরুল শিরোপার স্বাদ পেলেন।
অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলের প্রথম আসরেই ২০১২ সালে চ্যাম্পিয়ন হন মাশরাফি। তখন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্সকে শিরোপা জেতান। যে দলটি দ্বিতীয় আসরেও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বাদ পায়। এবারও মাশরাফির নেতৃত্বেই চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। টানা দুইবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরই ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স ম্যাচ গড়াপেটার দায়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি হারায়। একবছর বিরতিও পড়ে বিপিএলে। নতুনভাবে বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজি নেয়া হয়।
তৃতীয় আসরেও ২০১৫ সালে মাশরাফিই শিরোপা উচিয়ে ধরেন। এবার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে প্রথমবারের মতো শিরোপা জেতান মাশরাফি। হ্যাট্রিক শিরোপা জেতেন মাশরাফি। চতুর্থ আসরে আর শিরোপা জিততে পারেননি মাশরাফি। পঞ্চম আসরে ২০১৭ সালের বিপিএলে আবার মাশরাফি শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন। এবার রংপুর রাইডার্সকে শিরোপা জেতান। এরপর তিন আসর গেছে, কিন্তু মাশরাফি ঝুলিতে আর শিরোপা যায়নি। এবার তার সামনে পঞ্চম শিরোপা জেতার সুযোগ থাকে। সুযোগটি কাজে লাগানো যায়নি।
কুমিল্লা ও মাশরাফি যতবারই ফাইনাল খেলেছে ততবারই শিরোপা জিতেছে। কুমিল্লা তিনবার ও মাশরাফি চারবার ফাইনালে খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়। এবার কুমিল্লা চতুর্থবারের মতো শিরোপা জিতে।
বিপিএলের ফাইনালের বল মাঠে গড়ানোর আগে সুরের মূর্ছনায় মিরপুর স্টেডিয়াম মাতান বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের কিংবদন্তি রকস্টার নগরবাউল জেমস। এছাড়া সমাপনী অনুষ্ঠানে মঞ্চ মাতান বাংলাদেশের জনপ্রিয় ব্যান্ড দল মাকসুদ ও ঢাকা, ওয়ারফেজ।
প্রথমে মঞ্চে ওঠেন মাকসুদ ও ঢাকা ব্যান্ড। তাদের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে মঞ্চ মাতান তারা। মাকসুদ ও ঢাকার পর মঞ্চে ওঠে ওয়ারফেজ। তাদের জনপ্রিয় গানগুলো গেয়ে আনন্দে ভাসান স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকদের।
সবার শেষে পারফর্ম করতে মঞ্চে আসেন নগরবাউল জেমস। বিকেল পাঁচটা নাগাদ মঞ্চে উঠেন জেমস। কবিতা, তুমি স্বপ্নচারিনী হয়ে খবর নিও না… গান দিয়ে মিরপুরের মঞ্চ মাতানো শুরু করেন জেমস। ভক্তদের কাছে গুরু হিসেবে খ্যাত জেমস তার দরাজ কণ্ঠে স্টেডিয়ামের দর্শকদের বিমোহিত করে রাখেন। ফাইনালের মহারণ শেষে দর্শকদের জন্য থাকে চমক। ফাইনালে শেষ হওয়ার পর মিরপুরের আকাশে দেখা যায় আতশবাজির ঝলকানি। সঙ্গে থাকছে বিম শো। পুরস্কার বিতরণের পর শুরু হয় বিম শো।