Search
Close this search box.

১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও ২ প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার – বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে গুণীজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও দুই প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক-২০২৩ দিয়েছে সরকার। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গুণীজনদের হাতে একুশে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বর্তমানে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দেয় সরকার। এ বছর একুশে পদক পেলেন ভাষা আন্দোলনে অবদানের জন্য খালেদা মনযুর-ই-খুদা, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম শামসুল হক (মরণোত্তর) ও হাজী মো. মজিবর রহমান; শিল্পকলায় (অভিনয়) মাসুদ আলী খান ও শিমুল ইউসুফ, শিল্পকলায় (সংগীত) মনোরঞ্জন ঘোষাল, গাজী আব্দুল হাকিম ও ফজল-এ-খোদা (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (আবৃত্তি) জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শিল্পকলায় নওয়াজীশ আলী খান, শিল্পকলায় (চিত্রকলা) কনক চাঁপা চাকমা; মুক্তিযুদ্ধে মমতাজ উদ্দীন (মরণোত্তর), সাংবাদিকতায় মো. শাহ আলমগীর (মরণোত্তর), গবেষণায় ড. মো. আবদুল মজিদ, শিক্ষায় প্রফেসর ড. মযহারুল ইসলাম (মরণোত্তর), সমাজসেবায় মো. সাইদুল হক, রাজনীতিতে অ্যাডভোকেট মঞ্জুরুল ইমাম (মরণোত্তর) ও আকতার উদ্দিন মিয়া (মরণোত্তর) এবং ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক পেয়েছেন ড. মনিরুজ্জামান। প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে – শিক্ষায় অবদানের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবং সমাজসেবায় অবদানের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রদত্ত বেসামরিক সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার হলো স্বাধীনতা পদক। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার হলো একুশে পদক। এক্ষেত্রে ১৮ ক্যারেট মানের ৩৫ গ্রাম স্বর্ণের পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্রের সঙ্গে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় এই পদক দিয়ে থাকে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেছেন, প্রতিবছর মহান ভাষা আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মরণে একুশে পদক প্রদান আমাদের সবাইকে জাতীয়তাবোধের চেতনায় ভীষণভাবে উজ্জীবিত করে। যুগে যুগে অধিকার সচেতন বাঙালি জাতির বীরত্বগাঁথা লিপিবদ্ধ হয়েছে লড়াই-সংগ্রাম ও আত্মোৎসর্গের মাধ্যমে অর্জনের ইতিহাসে। ভাষা আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের লড়াই শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনায় পূর্ব বাংলার মানুষ একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়ে সফলতা লাভ করে। আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি যেসব বীর শহীদ আমাদের মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষা করতে প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, আজ আমি তাদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমি পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দানকারী সে সময়ের তরুণ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমানকে। একই সঙ্গে পরম শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সব ভাষা সৈনিককে। যাদের দূরদর্শী ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে এবং চরম আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের মা, মাটি ও মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, একুশের শহীদরা যেমন জাতির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তান, তেমনি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের সব গুণীজন জাতির গর্ব ও অহংকার। যদিও প্রকৃত গুণীজন পুরস্কার বা সম্মাননার আশায় কাজ করেন না। তবুও পুরস্কার-সম্মাননা জীবনের পথ চলায় নিরন্তর প্রেরণা যোগায়। একুশের চেতনাকে ধারণ করে দেশের শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির বিকাশ এবং আলোকিত সমাজ বিনির্মাণে যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভূত অবদান রাখছেন, তাদের সবার প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা গৌরবময় একুশে পদক প্রদান করছি।

তিনি বলেন, এর আগে প্রতিবছর বাংলাদেশের অল্প সংখ্যক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় পর্যায়ে তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদকে ভূষিত করা হতো। পদকপ্রাপ্তদের সম্মানি অর্থের পরিমাণও ছিল যতসামান্য। আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে পদকপ্রাপ্ত বরেণ্য ব্যক্তিদের পুরস্কার হিসেবে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ কয়েক দফা বৃদ্ধি করে গত ২০২০ সালে আমরা চার লাখ টাকায় উন্নীত করেছি। জাতীয় জীবনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পর্যন্ত মোট ৫৪৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও স্বনামখ্যাত প্রতিষ্ঠানকে একুশে পদক প্রদান করা হয়েছে। ২০২৩ সালে আমরা মোট ১৯ জন বিশিষ্ট নাগরিক ও ২টি প্রতিষ্ঠানকে এই পদকের জন্য মনোনীত করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারে আমরা ভাষা আন্দোলনে ভূমিকা রাখার জন্য তিনজন, ভাষা-সাহিত্যে একজন, শিল্পকলায় আটজন, মুক্তিযুদ্ধে একজন, সাংবাদিকতায় একজন, গবেষণায় একজন, শিক্ষায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান, সমাজসেবায় একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিতে দুইজনকে এই পদক প্রদান করছি। যারা মরণোত্তর পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তাদের আত্মার শান্তি প্রার্থনা করছি। আর যারা আজ পুরস্কার গ্রহণ করছেন তাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে গত ১৪ বছরে দেশের আর্থসামাজিক খাতের প্রতিটি ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। বাংলাদেশকে আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। বর্তমানে আমরা ২০ বছর মেয়াদি দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছি। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। আমাদের জনগণ, অর্থনীতি, সরকার ও সমাজ ব্যবস্থা পুরোটাই হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর। আশা করি, এবারের একুশে পদকপ্রাপ্ত গুণীজন এবং প্রতিষ্ঠানের পথ অনুসরণ করে তরুণ প্রজন্ম জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে সক্রিয় ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে আমাদের ভাষা ও সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে, যোগ করেন শেখ হাসিনা।
///////////////

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ