Search
Close this search box.
মসজিদ, মাদ্রাসায় অনুদানের নামে অর্থ সংগ্রহ

জঙ্গিরা প্রশিক্ষন, রসদ ও অস্ত্র কিনতে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল –র‌্যাব

রাকিব হাসান- দূর্গম পাহাড়ে প্রশিক্ষনে যাওয়া জ‌ঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র সদস্যদের জন্য প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে র‌্যাব। মসজিদ, মাদ্রাসার উন্নয়ন অনুদান হিসেবে সাধারন মানুষের কাছ থেকে তারা এসব অর্থ সংগ্রহ করত। এছাড়াও তাদের এ/বি/সি ক্যাটাগরীর কিছু অর্থ দাতার তালিকাও র‌্যাবের হাতে রয়েছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন তালিকা অনুযায়ী তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে । ইতিমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের অভিযানে সংগঠনটির অর্থ শাখার উপ প্রধানসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। আমরা যে তথ্য পেয়েছি এতে তাদের ডোনার শাখার একাধিক শাখা ছিলো। দেশে ও বিদেশে তাদের বেশকিছু ডোনার সদস্য রয়েছেন। মুলত সংগঠনটি সদস্যরা মসজিদ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক ভালো কাজে অর্থ খরচ করার নামে তারা এই অর্থ সংগ্রহ করেন। আমাদের অভিযানে অর্থ শাখার হাবিবুল্লাসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের সময়ে সাত লাখ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়। যে টাকা তারা কুকিচং থেকে পেয়েছিলো অস্ত্র কেনার জন্য। তারা এই অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তি ও স্বজনদের কাছ থেকে মানবিক কাজের জন্য সংগ্রহ করেছিল। পরে যা অস্ত্র কেনাসহ নিজেদের বিভিন্ন প্রস্তুতির জন্য খরচ করছিলেন। সর্বশেষ তথ্য মতে এ পর্যন্ত তারা প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করেছিল ।

সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আরও ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় র‌্যাব -৭ এই অভিযান চালায়। গ্রেফতারকৃত আল আমিন ওরফে মিলদুকের কাছ থেকে উদ্ধার করা মোবাইল ফোনে থেকে জ‌ঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র আমির আনিছুর রহমান এবং দাওয়াতী শাখার প্রধান আব্দুল্লাহ মাইমুনের সদস্য ও অর্থ সংগ্রহ বিষয়ক এবং উগ্রবাদী বক্তব্যের একটি ভিডিও কন্টেন্ট উদ্ধার করে র‌্যাব।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে র‌্যাব। ওই ভিডিও পর্যালোচনায় পাওয়া ত‌থ্যের বিষ‌য়ে  র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার  প‌রিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ২২ জানুয়ারী এই সংগঠনের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের সময় তার মোবাইল ফোন থেকে ৮ মিনিটের একটি ভিডিও উদ্ধার করা হয়। ভিডিওতে মোট ২৯ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়। গত বুধবার উদ্ধার হওয়া ৭ মিনিটের আরও এক ভিডিওতে আরও ২৩ জন জঙ্গিকে শনাক্ত করে র‌্যাব।

কমান্ডার মঈন বলেন, এই ২৩ জনের মধ্যে ১৯ জন জঙ্গি ২২ জানুয়ারী উদ্ধার হওয়া ভিডিওতেও ছিলেন। নতুন এই ভিডিওতে আরও ৪ জন জঙ্গির উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তারা হলেন, শেখ আহমেদ মামুন ওরফে রমেশ, শামিম মিয়া ওরফে বাকলাই ওরফে রাজান, নিজাম উদ্দিন হিরন, ডা. জহিরুল ইসলাম ওরফে আহমেদ ।

র‌্যাবের পর্যালোচনা বলছে, গত ২৩ জানুয়ারী প্রকাশিত ভিডিও এবং বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ভিডিওতে সর্বমোট শনাক্ত জঙ্গিদের মধ্যে র‌্যাব এখন পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে। ২টি ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েস দিয়েছেন আল আমিন ওরফে বাহাই নামের এক জঙ্গি এবং ভিডিও এডিটিং করেছেন পাভেল নামের এক জঙ্গি ।

ভিডিওটির এডিট ও ভয়েসের বিষয়ে তিনি বলেন, নিখোঁজ তরুণ আবু বক্করের মা আম্মিয়া বেগম ছেলের সন্ধান চেয়ে আকুতি জানিয়েছিলেন। সেই আবু বক্কর তারই শিক্ষক আল আমিনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই ভিডিওর ব্যাকগ্রাউন্ডে আল আমিনের ভয়েস ভিডিও ব্যবহার করা হয়। ভিডিওটি এডিট করেন আরেক জঙ্গি নিখোঁজ তরুণ পাভেল। যিনি বাড়ি ছাড়া ৫৫ জনের তালিকায় রয়েছেন। এই ভিডিও তৈরির উদ্দেশ্য ছিলো অর্থ সংগ্রহ ও সদস্য সংগ্রহ করার ক্ষেত্রে ছড়িয়ে দেয়া।

নন-মুসলিম পার্থকুমারের জঙ্গিবাদে জড়ানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন পার্থ কুমার দাস। পরে তিনি কাকরাইল এসে পেশাগত কাজ করছিলেন। এই সময়ে সিরাজ নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ান। এই সিরাজের মাধ্যমে অনেকেই এই সংগঠনে জড়াতে উদ্ধুদ্ধ হন। সে বর্তমানে পলাতক । সিরাজ পার্থকে বিদেশে চাকরিসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার প্রলোভন দেখান। পরে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে যান এবং প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন।

জঙ্গি সংগঠনটির তৈরি করা ভিডিও কতদূর ছড়িয়েছে জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন সাংবা‌দিক‌দের বলেন, আমরা গ্রেফতার চারজনের মোবাইল থেকে চারটি ভিডিও পেয়েছি। যা গত বছরের ২৯ নভেম্বর তাদের কাছে এসেছে। তবে ভিডিওটি তাদের নিজেদের মধ্যেই ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ায়নি। আমরা যতটা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পেয়েছি, ভিডিওটির কাজ চলমান ছিলো। নিজেদের মধ্যেই ছিলো। অভিযান শুরু হওয়ায় কাজ শেষ করতে পারেনি।

ড. আহমেদ নিহতের বিষয়টি তারা নিজেদের ভিডিওতে রেখেছে। তিনি ২০২২ সালের ৬ জুন নিহত হন। তারা ভিডিওতে দেখিয়েছেন, অন্য একটি পাহাড়ি সংগঠনের সঙ্গে সশস্ত্র লড়াইয়ের সময়ে তিনি নিহত হন। তার নামে একটি ক্যাম্পের নামকরণ করা হয়।

কুকি চিং ন্যাশনাল নিজেদের স্বার্থের জন্যই এই সংগঠনটিকে তারা আশ্রয় ও রশদ দিয়েছে। প্রশিক্ষন ও রসদ বাবদ তিন লক্ষ টাকার চুক্তি হয়েছিল তাদের সাথে। কেএনফের স্বশস্ত্র সদস্য সংখ্যা প্রায় ২০০। সেখানে নতুন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়েছে। তারা অবস্থান করেছে। এতে তাদের সাংগঠনিক স্বক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। এর বাইরে কোনো স্বার্থ রয়েছে কি না সেটি তদন্ত চলমান রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ