Search
Close this search box.

নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হবে – প্রধানমন্ত্রী

নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হবে - প্রধানমন্ত্রী

মিথুন আশরাফ – প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, গবেষণার কারণেই দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা শুধু পরিকল্পনাই করছি না, সেটা বাস্তবায়নও করছি। আরও দক্ষ বিজ্ঞানী তৈরিতে গবেষণায় জোর দেওয়া হচ্ছে। নতুন প্রজন্মকে প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ ও গবেষণা অনুদান প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি যার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুই স্থাপন করে যান। ১৯৭৫ সালের ১৪ জুন রাঙামাটির বেতবুনিয়াতে তিনি দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র স্থাপন করেন।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা এদেশের মানুষের উন্নয়ন ও মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেটা করে যেতে পারেননি। পঁচাত্তরে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সে সময়ে প্রাণ হারান আমার পরিবারের ১৮ জন সদস্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে থামলেই চলবে না। আমরা কারো থেকে পিছিয়ে থাকবো না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবো। তাহলেই গড়ে ওঠবে দক্ষ প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন স্মার্ট জনগোষ্ঠী।
গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যতবেশি গবেষণা বাড়বে ততবেশি জাতি হিসেবে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের দেশের মানুষ অবদান রাখতে পারবে। গবেষণা আমাদের সাফল্য এনে দিতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি; আমিষ উৎপাদনে আমরা সফলতা অর্জন করেছি। সবই গবেষণার ফসল।

পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে আমাদের বাধাপ্রাপ্ত হতে হচ্ছে। সেই সঙ্গে সারা দেশের মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। সব বাধা মোকাবিলা করেই আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সেটাকে মোকাবিলা করার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছি। আমরাই প্রথম ২০০৯ সালে আলাদা ট্রাস্ট ফান্ড করেছি এবং কী কী প্রজেক্ট নিতে হবে সেগুলো শুরু করি।

সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সুনীল অর্থনীতির ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। এজন্য আমাদের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সমুদ্রসীমায় আমাদের যে অধিকার সে বিষয়ে কাজ শুরু করি। মাত্র ৫ বছরে আমরা সে কাজ সম্পন্ন করতে পারিনি। কিন্তু পরেরবার ক্ষমতায় এসে আমরা সে অধিকার বুঝে নিয়েছি। জাতির পিতা শুধু করেই দিয়ে যাননি, আমাদের জন্য সবকিছুর ভিত্তিপ্রস্তর করে গেছেন তিনি।

সরকার প্রধান বলেন, একটা সময়ে বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কম ছিল। কিন্তু একটা দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও গবেষণা কতটা জরুরি তা আমরা উপলব্ধি করি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু নিজের দেশে নয়, বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে দেশের উন্নয়নেও যেন ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যবস্থাও করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
শেখ হাসিনা এসময় বলেন, নভোথিয়েটার করতে গিয়ে খালেদা জিয়া আমার নামে দুইটা মামলা দিয়েছিলেন। সেগুলো কেন এবং কী কারণে আমি জানি না। যে কাজই করতে গিয়েছি সে কাজেই আমাকে মামলা দেওয়া হতো। আমি মনে করি দেশে যত বেশি গবেষণা হবে তত বেশি উন্নয়ন হবে আমাদের। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ করব আমরা সেটা করেছি।

প্রধানমন্ত্রী হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ডাক্তারদের একটি মহল এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর চিকিৎসা চর্চা ও গবেষণা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরি অথবা রাজনীতিতে চলে যান। আর এক শ্রেণি আছেন তারা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত। একই সাথে সরকারি চাকরি এবং প্রাইভেটে প্র্যাকটিসও করেন। সরকারি চাকরি আর প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পর সেখানে কিন্তু আর গবেষণা হয় না।

আমাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা খুব দরকার। স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের গবেষণা খুবই সীমিত কয়েকজন করেন। তবে তাঁর বার বার বলার ফলে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে, আরও বেশি দরকার বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
পরিবর্তিত বিশ্বে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে সরকার প্রধান বলেন, প্রযুক্তির প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে এবং নতুন থিওরি ৪র্থ শিল্প বিপ্লব এসে গেছে। এর ফলে আমাদের লোকবল হয়তো কম লাগবে। কিন্তু প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে এবং সেজন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শ্রমঘন শিল্প করতে চাই। কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। এই দুটি মিলিয়ে আমাদের দেশকে কিভাবে আমরা এগিয়ে নিতে পারি সেই চিন্তাই সবার মাথার মধ্যে থাকতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই তাঁরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে বিদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত গবেষণা এবং অধ্যয়নের জন্য এমএস, এমফিল, পিএইডডি উত্তর প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দিচ্ছেন। ২০১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৮২ জনকে প্রায় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে। এই ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০১ জন গবেষককে প্রায় ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও ফেলোশিপ-বৃত্তি-উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা উন্নয়ন কাজে উৎসাহ প্রদানে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে বিশেষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ২০০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত ৫ হাজার ৫২১টি প্রকল্পের অনুকূলে ১৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি যারা এই গবেষণা বা ফেলোশিপের জন্য অনুদান পেয়েছেন আপনারা একটু আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। আমি জানতেও চাই আপনারা কি কি উদ্ভাবন করলেন বা তা আমাদের দেশে কতটুকু কাজে লাগবে। আসলে গবেষণার কোনো শেষ নেই।

এ বছর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ পেলেন ২১ জন। আর বিশেষ গবেষণার জন্য সম্মানিত হয়েছেন ১৬ জন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে সম্মাননা তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ