Search
Close this search box.
বান্দরবানের টংকাবতী’তে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান

শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ কমান্ডার চম্পাইসহ ৯ জন গ্রেফতার, অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার

শারক্বীয়া’র প্রশিক্ষণ কমান্ডার চম্পাইসহ ৯ জন গ্রেফতার,

স্টাফ রিপোর্টার- বান্দরবানের টংকাবতী এলাকায় সাড়াঁশি অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়ার’র পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার দিদার হোসেন ওরফে চম্পাইসহ পাহাড়ে হিজরতের উদ্দেশ্যে হিজরতকারী ৯ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) । তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ।

সোমবার সকালে র‌্যাব লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বান্দরবন র‌্যাব ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, রবিবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা এবং র‌্যাব-১,১১ ও ১৫ এর যৌথ অভিযানিক দল বান্দরবানের টংকাবতী এলাকায় সাড়াঁশি অভিযান পরিচালনা করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হয়েই রবিবার রাতে আকস্মিক অভিযানে নামে র‌্যাব। অভিযানটিতে ৯ জন দূধর্ষ জঙ্গিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমান অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃতরা হলো পার্বত্য অঞ্চলের প্রশিক্ষণ কমান্ডার  মোঃ দিদার হোসেন ওরফে মাসুম ওরফে চাম্পাই (২৫), আলআমিন সর্দার ওরফে আব্দুল্লাহ ওরফে বাহাই (২৯), সাইনুন  ওরফে রায়হান ওরফে  হুজাইফা (২১), তাহিয়াত চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ ওরফে রিতেং (১৯), মোঃ লোকমান মিয়া (২৩), মোঃ ইমরান হোসেন ওরফে সাইতোয়াল ওরফে শান্ত (৩৫), মোঃ আমির হোসেন (২১), মোঃ আরিফুর রহমান ওরফে লাইলেং (২৮) , শামিম মিয়া ওরফে রমজান ওরফে বাকলাই (২৪)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৬টি দেশীয় বন্দুক, একটি বিদেশী পিস্তল, ৫ রাউন্ড পিস্তলের কার্তুজ, ২টি ম্যাগজিন, বিভিন্ন বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও একটি ছুরি।

তিনি আরও জানান,  র‌্যাবের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এযাবৎ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ৬৮ জন জঙ্গিকে গ্রেফতারও ৭২ জঙ্গি সদস্যকে শনাক্ত করা হয়েছে। বান্দরবানে প্রশিক্ষণরত জঙ্গি সদস্যদের প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহায়তাকারী পাহাড়ের বিছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ১৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে ৪৪ জন জঙ্গি ও কেএনএফের ১৭ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা র‌্যাবকে জানিয়েছে, তারা নিকটাত্মীয়, স্থানীয় পরিচিত ব্যক্তি বা বন্ধু বান্ধবের মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যুক্ত হয়। বিভিন্ন সময়ে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যরা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন-নিপীড়নের ভিডিও দেখানো, রাজনীতি, সমাজ ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিভিন্ন অনিয়ম, ধর্মীয় অপব্যাখ্যা ও বিভিন্ন তাত্তিক জ্ঞান প্রদান করার মাধ্যমে তাদেরকে সশস্ত্র হামলার প্রস্তুতি নিতে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার বিষয়ে উৎসাহী করে তুলত। তথাকথিত হিজরতের প্রথমে তাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের তত্তাবধানে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শারীরিক কসরত, জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, তাত্তিক ও মনস্তাত্তিক জ্ঞান প্রদান করা হত।

প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে বিভিন্ন সময়ে তাদেরকে সমতল থেকে পাহাড়ে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য প্রেরণ করা হয়। পার্বত্য অঞ্চলে তারা বিভিন্ন ধরণের অস্ত্র চালনা, অন্যান্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণ ও প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে চম্পাই পাহাড়ে প্রশিক্ষণের কমান্ডার ছিল বলে জানা যায়। গ্রেফতারকৃতরা আরও জানায়, বিভিন্ন সময় কেএনএফ এর নাথান বম, বাংচুং, রামমোয়, ডিকলিয়ান, পাহল এবং কাকুলীসহ অনেকেই প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে আসত। প্রশিক্ষণের জন্য অস্ত্র ও অন্যান্য রসদ তারা অর্থের বিনিময়ে কেএনএফ এর সদস্যদের নিকট থেকে সংগ্রহ করত এবং কেএনএফ এর সদস্যরা বিভিন্ন সময়ে উক্ত জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণ প্রদান করত বলে জানা যায়।

পরবর্তীতে পার্বত্য অঞ্চলে র‌্যাবের অভিযান শুরু হলে তারা সংগঠনের আমীর মাহমুদের নির্দেশে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য রামজুদান থেকে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে প্রথমে সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। এরপর পাইন্দূ খাল, ক্যাপলং পাড়া, দুর্নিবার পাড়া, রামধার পাড়া, ওয়াই জংশন হিল, ১৬ মাইল বাজার, ব্রিকফিন্ড বাজার এলাকা হয়ে গত ৩-৪ দিন যাবত টংকাবতী এলাকায় আত্মগোপনে করেছিল।

রবিবার রাতে র‌্যাবের অভিযান টের পেয়ে আরও  ৫/৬ জন জঙ্গি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

র‌্যাব জানায়, গ্রেফতারকৃত দিদার হোসেন ওরফে চাম্পাই  ২০১৮সালে  স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে সংগঠনের আমীর মাহমুদ এবং হানজালার মাধ্যমে সে সংগঠনে যোগদান করে এবং বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যক্তির তত্তাবধানে থেকে জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিভিন্ন তাত্তিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংগঠনের আমীর মাহমুদের সাথে বান্দরবানের থানচী ও বাকলাইপাড়া হয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে। পাহাড়ে আসার পর সে সব ধরণের অস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। প্রশিক্ষণকালীন কার তার দক্ষতা ও আনুগত্যের জন্য তাকে আমীর মাহমুদের নির্দেশনায় পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তার নেতৃত্বে ৩২ জনের একটি দলে বিভক্ত হয়ে পার্বত্য অঞ্চলের সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।

গ্রেফতারকৃত আল আমিন ওরফে বাহাই নারায়ণগঞ্জ এর বাসিন্দা । সে নারায়ণগঞ্জের একটি কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে কাতারে যায়। সে কাতার প্রবাসী থাকা অবস্থায় এক ব্যক্তির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িত হয়। পরবর্তীতে কাতার থেকে দেশে ফিরে এসে পুনরায় বিদেশ যাওয়ার নাম করে সরাসরি পাহাড়ে চলে যায়। গ্রেফতারকৃত আল আমিন বিভিন্ন সময়ে ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে আবু বক্কর, রনি এবং ওমরসহ আরো কয়েকজনকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত সাইনুনকে মোটিভেশন করার জন্য তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সে পাহাড়ে দ্বিতীয় ব্যাচের সাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। ইতিপূর্বে উদ্ধারকৃত ভিডিও চিত্রে আলআমিন ওরফে বাহাইয়ের কন্ঠ শোনা যায়।

গ্রেফতারকৃত সাইনুন ওরফে রায়হান কামরাঙ্গির চরের বাসিন্দা। সে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে প্রবাসী থাকা অবস্থায় তার এক সহকর্মীর মাধ্যমে জঙ্গিবাদে অনুপ্রাণিত হয়। পরবর্তীতে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে এসে পরিবারকে না জানিয়ে কুমিল্লায় সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের সাথে সাক্ষাত করে। পরবর্তীতে রাকিবের মাধ্যমে বান্দরবান হয়ে কেটিসিতে যায়। সে পাহাড়ে আলোচিত তনচঙ্গা হত্যাকান্ডে জড়িত চার জনের মধ্যে সে অন্যতম। তারা মূলত সংগঠনের উর্দ্ধতনদের নির্দেশে এই হত্যাকান্ডটি ঘটায়। সে পাহাড়ে প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় ব্যাচের মধ্যে একজন ছিল। জঙ্গিদের প্রকাশিত ভিডিওতে তার বিভিন্ন কার্যক্রম দেখা যায়। ইতোপূর্বেও সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।

গ্রেফতারকৃত তাহিয়াদ চৌধুরী ওরফে পাভেল ওরফে হাফিজুল্লাহ সংগঠনের শূরা সদস্য সামরিক শাখার উপ-কমান্ডার মানিক এর মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যুক্ত হয়। পূর্বে সে আনসার আল ইসলাম সংগঠনের সাথেও যুক্ত ছিল। সে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে ও বিভিন্ন সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। এছাড়াও সে পাহাড়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মিডিয়া সংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করত।

সে পাহাড়ে জঙ্গিদের প্রশিক্ষণের প্রকাশিত ভিডিওসহ বিভিন্ন ধরণের ভিডিও ধারণ ও এডিটিং এর কাজ করেছে বলে জানা যায়। সে আনসার আল ইসলামে থাকাকালীন সময়েও পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল।

গ্রেফতারকৃত লোকমান মিয়া সিলেটের সুনামগঞ্জের বাসিন্দা। সে প্রাথমিকভাবে সংগঠনের শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার উপ-প্রধান মানিক এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে সংগঠনে যুক্ত হয়। পরবর্তীতে সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রণবীর এর তত্তাবধানে ছিল। সে দীর্ঘদিন কুমিল্লায় অবস্থান করে এবং পূর্বে গ্রেফতারকৃত হাবিবুল্লাহ এর সাথে কুমিল্লার একটি মহিলা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে। সেখানে সংগঠনের আমীর মাহমুদও তাদের সাথে বেশ কয়েকবার সাক্ষাত করে। পরবর্তীতে সে সংগঠনের শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে পাহাড়ে গমন করে এবং পাহাড়ে প্রশিক্ষণের দ্বিতীয় ব্যাচের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। সেও পাহাড়ে আলোচিত তনচঙ্গা হত্যাকান্ডে জড়িত চার জনের মধ্যে সে অন্যতম।

গ্রেফতারকৃত ইমরান হোসেন ওরফে সাইথওয়াল পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে এই সংগঠনে যোগদান করে। সে মূলত সংগঠনের আমীর মাহমুদ এর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে দায়িত্বপালন করত। সে মোটরসাইকেল চালনায় পারদর্শী থাকায় বিভিন্ন সময় সংগঠনের আমীর মাহমুদকে বিভিন্ন স্থানে মোটরসাইকেলের মাধ্যমে নিয়ে যেত। আমীর মাহমুদ যখন পাহাড়ে গমন করত সেও তার সাথে পাহাড়ে গমন করত বলে জানা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সংগঠনের বিভিন্ন শূরা সদস্যদের কেরানিরহাট অথবা আলীকদম থেকে আমীরের বাসায় নিয়ে যাওয়ার কাজ করত। পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে সে বেশকিছুদিন আমীর মাহমুদের বাসায় অবস্থান করে। বিভিন্ন সময় সংগঠনের কিছু সদস্য ভুল বুঝতে পেরে জঙ্গি সংগঠন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাইলে গ্রেফতারকৃত ইমরান তাদের বিভিন্ন ধরণের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আমির হোসেন ওরফে তারপং কুমিল্লার একটি মসজিদে ইমামতি করত। সে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করে। সংগঠনে যোগ দিয়ে বেশ কিছুদিন কুমিল্লার নেয়ামত উল্লাহর মাদ্রাসায় অবস্থান করে। সেখানে অবস্থানকালীন সময়ে সংগঠনের নেতৃস্থানীয় সদস্যদের সাথে তার সাক্ষাত হয়। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ব্যাচের সাথে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে। পার্বত্য অঞ্চলে তারপং নামক খালের নাম অনুসারে তার সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয় তারপং।

গ্রেফতারকৃত আরিফুর রহমান বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন উগ্রবাদী কন্টেন্ট এবং বিভিন্ন দেশে  মুসলমান নির্যাতনের ভিডিও কন্টেন দেখে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে ২০১৯ সালে এই সংগঠনে যুক্ত হয়। ২০২১ সালের মার্চ মাসে চাকুরীর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সরাসরি পাহাড়ে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর সে একে-৪৭ সহ বিভিন্ন অস্ত্র চালনা, বোমা প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তারা সাইজামপাড়া, মুন্নুয়াম পাড়া, রোয়াংছড়ি, পাইক্ষং পাড়া, তেলাং পাড়াসহ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে।

গ্রেফতারকৃত শামীম ওরফে বাকলাই রাজধানীর বংশাল এলাকায় এক শিক্ষক এর মাধ্যমে উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগ দেয়। ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে শুরা সদস্য রাকিবের মাধ্যমে সে বান্দরবান ও কেটিসি হয়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের জন্য পাহাড়ে গমন করে। পাহাড়ে গমনের পর বিভিন্ন অস্ত্র চালনা ও অন্যান্য সামরিক কৌশল বিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে পাহাড়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান শুরু হলে তারা প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছেড়ে বিভিন্ন পাহাড়ে আত্মগোপন করে।

উল্লেখ্য, গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে ৮ জন তরুণের নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। উক্ত নিখোঁজের ঘটনায় নিখোঁজ তরুণদের পরিবার কুমিল্লার কোতয়ালি থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। নিখোঁজদের উদ্ধারে গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সামনে আসে “জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া নামক একটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের। গোয়েন্দারা জানতে পারে  এই সংগঠনের সদস্যরা পার্বত্য চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সহায়তায় পাহাড়ে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে।

পরবর্তীতে পার্বত্য এলাকায় গত ৩ অক্টোবর থেকে অভিযানে নামে র‌্যাব সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গত  ২০ অক্টোবর রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের ৭ জন এবং পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এর ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের নিকট থেকে  প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব  বিভিন্ন সময়ে রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। গত ১১ জানুয়ারি বান্দরবানের থানচি ও রোয়াংছড়ি থেকে পাহাড়ে প্রশিক্ষণরত ৫ সদস্যকে, গত ২৩ জানুয়ারি কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকা উক্ত সংগঠনের শূরা সদস্য ও সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশারকে, গত ৭ ফেব্রুয়ারি বান্দরবানের থানচির রেমাক্রী ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি ও বিদেশি অস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, গোলাবারুদ ও নগদ ৭ লক্ষাধিক টাকাসহ জঙ্গি সংগঠনের ১৭ জন এবং পাহাড়ী বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ২০ জন এবং গত ১ মার্চ চট্টগ্রামের গহীনে সশস্ত্র প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া ৪ জঙ্গিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

বিভিন্ন সময়ের অভিযানে র‌্যাব উদ্ধার করে সংগঠন সস্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ভিডিও কন্টেন্ট। যা তারা নতুন সদস্য সংগ্রহ ও অর্থ সংগ্রহের জন্য তৈরি করেছিল। তবে সেগুলো প্রচার কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার আগেই উদ্ধার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

র‌্যাব আরও জানায়, এই সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, দাওয়াতী কার্যক্রমের প্রধান মাইমুন, সংগঠনের উপদেষ্টা শামীম মাহফুজ, অর্থ ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান রাকিব এবং ইতিপূর্বে গ্রেফতারকৃত অর্থ বিষয়ক প্রধান সমন্বয়ক মুনতাছির, দাওয়াতী ও অন্যতম অর্থসরবরাহকারী হাবিবুল্লাহ, সামরিক শাখার প্রধান রনবীর ও বোমা বিশেষজ্ঞ বাশার।

সংগঠনের আমীর আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ এর সাথে কেএনএফ এর প্রধান নাথান বমের সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। পরবর্তীতে নাথাম বমের সাথে তাদের অর্থের বিনিময়ে চুক্তি হলে, তারা পাহাড়ে আশ্রয়, অস্ত্র ও রশদ সরবরাহ এবং সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শুরু করে।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ