স্টাফ রিপোর্টার- সীমাহীন ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগে বিআরটিএর দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসক বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন।
সোমবার (২০ মার্চ) সিলেট জেলা পরিষদের কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সিলেট জেলা বাস মিনি বাস শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি হাজী মো. মইনুল ইসলামের সভাপতিত্ব মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বাস মিনি বাস শ্রমিক ইউনিয়ন সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মহিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মিয়া সিলেট জেলা বাস মিনি বাস শ্রমিক ইউনিয়ন, সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতি সভাপতি মো. দিলুয়াল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ।
তারা অবিলম্বে সিলেট বিদ্বেষী ও দুর্নীতিবাজ সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াজুল ইসলাম ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীকে প্রত্যাহারের দাবি করে জেলা প্রশাসন বরাবরে স্মারক লিপি জমা দেন ।
এর আগে মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বিআরটিএ একটি জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের জন্য উক্ত দুই কর্মকর্তা বেমালুম ভুলে গেছেন তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তারা টাকার মোহে নীতি নৈতিকতা বিধিবিধান উপেক্ষা করে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। যাতে করে বিআরটিএ ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটের সেবাগ্রহিতারা। বিআরটিএ সিলেট সার্কেলর সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ চ:দা:) রিয়াজুল ইসলাম ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীর সীমাহীন দুর্নীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও সেবাগ্রহিতাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে সিলেট সার্কেল কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। তাদের আচরণে বিআরটিএ অফিসে যেতে ভয় পান সেবাপ্রত্যাশীরা। মোট কথা এই দুই কর্মকর্তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সিলেটবাসী।
তারা সেবা গ্রহিতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। লাইসেন্স, মালিকান বদলি ইত্যাদি সেবাগ্রহনকালে তারা বিভিন্ন অজুহাতে সিলেটের মালিক ও শ্রমিকগণকে বিভিন্নভাবে হয়রানী করে আসছেন। অফিস চলাকালীন সময়ে এই দুই কর্মকর্তা জনগণের সঙ্গে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও উগ্র আচরণ করে থাকেন। ক্ষমতা এবং টাকার জোরে রিয়াজুল ইসলাম এবং আব্দুল বারী বার বার সিলেট এ পোস্টিং নেন।
বক্তারা জানান, গত বছরের ২ অক্টোবর পুলিশ কমিশনার ও সভাপতি এমআরটিসি (সিলেট মেট্রোপলিটন) ্ভাএর যৌথ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে, জেলার ঠিকানায় রেজিস্ট্রিকৃত সিএনজি অটোরিকশার কোনো মালিক মেট্রো এলাকার ঠিকানায় মালিকানা বদলি বা ঠিকানা পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন না। এসব সিদ্ধান্ত অমান্য করে সিলেট জেলার গাড়ি সমূহ রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে বিআরটিএ। কিন্তু সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি অটোরিক্সা মালিকরা সিলেট মেট্রো এলাকায় মালিকানা বদলী করতে পারেন না।
এই সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করেন রিয়াজুল ইসলাম। তিনি প্রতিটি সিএনজি গাড়ি থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে এমআরটিসি সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে মালিকানা বদলি করেন। মালিকানা বদলের বিষয়ে সিলেট সিএনজি অটোরিক্সার মালিক ও অন্যান্য ব্যক্তিরা এই দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পারেন। তিন মাসে আনুমানিক ১ হাজার সিএনজি অটোরিকার মালিকানা বদল করে টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছে তারা । সিলেটবাসীর কাছ থেকে এভাবেই ৫-৭ কোটি টাকা সুকৌশলে হাতিয়ে নিয়েছেন এই দুই বিতর্কিত কর্মকর্তা। এধরনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সিলেটবাসী। এই দুই কর্মকর্তা কাউকে সম্মানজনক আচরনের মাধ্যমে সেবা প্রদান করেন না। তাদের মূল উদ্দেশ্য অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন।
বিআরটিএ সিলেট সার্কেলের নানান অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গত ৯ এপ্রিল সিলেটে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। তবে সকলের অনুরোধে পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট স্থগিত করলেও শ্রমিক আন্দোলনের চাপে একই মাসে ১২ এপ্রিল বিআরটিএ এর সদর কার্যালয়ে এক আদেশে সহকারী পরিচালক ইঞ্জিনিয়ারিং সানাউল হককে সিলেট সার্কেল থেকে মাগুরা সার্কেলে বদলি করা হয়। আর সেই সুযোগে রিয়াজুল ইসলাম চলতি দায়িত্ব পান। তিনি দায়িত্ব নেয়া পর তারই বিশ্বস্থ মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারীকে তদবির করে কুষ্টিয়া থেকে সিলেটে বদলী করে নিয়ে আসেন।
তারা জানান, সহকারী পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম ও মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী মিলে সিলেট সার্কেলকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন, তারা দায়িত্ব নেয়ার পরেই বিআরটিএ সবধরনের কাজ যেমন- গাড়ীর ফিটনেস, রেজিস্ট্রেশন, রুটপামিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স এ ঘুষের রেইট অত্যাধিক বাড়িয়ে নেন। এর আগেও তারা সিলেট সার্কেল এ চাকুরি করার সুবাদে সিলেটের সকল দালালদের সাথে গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের নির্দিষ্ট দালাল ছাড়া সাধারণ জনগণ এবং পরিবহন শ্রমিকরা কোন কাজই করতে পারে না। সিলেট জেলায় সিএনজি অটোরিক্সা রেজিস্ট্রেশনের জন্য রিয়াজুল ইসলাম এবং আব্দুল বারী তাদের নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে প্রায় ২ হাজার ফাইল এবং প্রায় ২.৫কোটি টাকা সংগ্রহ করছেন, যা বিগত ১৬ই নভেম্বর ২০২২ জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
জানা যায়, অত:পর সিলেট জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপে তাদের এ বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যায়। সিলেট বিআরটিএতে প্রতি সপ্তাহে দুইদিন ড্রাইভিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়, মোটরযান পরিদর্শক আব্দুল বারী তার নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে প্রতি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। টাকা না দিলে পরীক্ষায় পাশ করলেও ফেল করিয়ে দেন।
এসব বিষয়েই শ্রমিক নেতারা জেলা প্রশাসকের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।