স্টাফ রিপোর্টার – জাতীয় গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২৫ মার্চ গণহত্যার স্বীকৃতি যেন আদায় হয় তার জন্য জাতিসংঘসহ বিশ্বের সকলের কাছে আবেদন করব। শনিবার দুপুরে আওয়ামী লীগের সংদীয় মনোনয়ন বোর্ড সভায় স্বাগত বক্তব্যে এই স্বীকৃতি দাবি করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের এ সভা হয়। সেখানে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময় যেভাবে তারা নিরস্ত্র ও ঘুমন্ত বাঙালির ওপর হামলা চালায়। যে বীভৎসভাবে দিনের পর দিন দীর্ঘ ৯ মাস হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিলা। ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়। সমস্ত ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়ায় তিন লাখ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। সাড়ে ৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে তিন কোটি মানুষই ছিল গৃহহারা। এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নেয়। রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লাশ পড়ে ছিলো। মানুষ দেখেছে, মানুষের লাশ শিয়াল-কুকুরে খেয়েছে। মেয়েদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, কাজেই আমরা বাংলাদেশে ও আন্তর্জাতিকভাবেও ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাক সেটাই চাই। এ ক্ষত নিয়েই আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। লাখো শহীদের রক্ত বৃথা যেতে পারে না।
ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম গণহত্যা হলেও জাতিসংঘে বা আন্তর্জাতিক প্রাতিষ্ঠানিক কোনো দলিলে এর স্বীকৃতি এখনো নেই। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে আর তার ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হয়নি।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছিল। প্রায় ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা চালায় বাংলাদেশে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিয়ে ২০১৮ সাল থেকে জাতীয়ভাবে দেশে ২৫ মার্চ ‘গণহত্যা দিবস’ পালিত হচ্ছে।
স্বাধীনের পর থেকে গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের বিষয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, গণহত্যা জাদুঘরসহ নানা সংগঠনের প্রচেষ্টায় গত কয়েক দশকে গণহত্যার স্বীকৃতির দাবি জোরালো হয়। বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষও গণহত্যায় শহিদদের স্মরণে দেশে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে হাতে হাত দিয়েছিলেন। স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তিনি, চার জাতীয় নেতাসহ অসংখ্য শহীদের আত্মত্যাগে এই দেশ। শহীদের রক্ত বৃথা যায় না। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। শহীদদের কাছে অঙ্গীকার করছি, দেশকে উন্নত করে গড়ে তুলব।’