স্টাফ রিপোর্টার- বিএনপিকে দেশে গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত আদর্শ বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায় হিসেবে চিহ্নিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী রাজনীতির কারণেই এদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বার বার হোঁচট খেয়েছে।
সোমবার (২৭ মার্চ) আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সই করা এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন তিনি। এতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ‘নির্লজ্জ মিথ্যাচার, অপপ্রচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্যের’ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের বলেন, বন্দুকের নলের মুখে অবৈধ ও অসাংবিধানিক উপায়ে ক্ষমতা দখলের মধ্য দিয়ে গঠিত অবৈধ দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুখে গণতন্ত্র এবং ভোটাধিকারের কথা ভূতের মুখে রাম নাম ছাড়া কিছু নয়। যে দলের প্রতিষ্ঠাতা অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী সামরিক স্বৈরশাসক, যে দলের প্রতিষ্ঠা হয়েছে মিলিটারি ডিক্টেটরের পকেট থেকে সেই দল দেশের জনগণকে কী গণতন্ত্র দেবে? তাই বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা ও আন্দোলন জাতির সঙ্গে পরিহাসের শামিল। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমনই এক দলের মহাসচিব যে দলের সর্বশেষ সম্মেলন কবে হয়েছে সেটি বোধ হয় তিনি নিজেই ভুলে গেছেন! যে দলের অভ্যন্তরেই গণতন্ত্র নেই তারা আবার দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে কীভাবে?
তিনি বলেন, অবৈধভাবে সেনাপ্রধান, প্রধান সামরিক আইন কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রপতির পদ দখল করে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ-না ভোটের নামে দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান। ১৯৭৮ সালের ৩ জুন একই সাথে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে থেকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আয়োজন করে গণতন্ত্রকামী জনগণের সঙ্গে নির্মম তামাশা করেছিল স্বৈরাচার জিয়া। যদি মির্জা ফখরুলকে প্রশ্ন করি, স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান কোন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল?
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিচারপতি সায়েমকে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদ দখল করেছিল। জিয়ার গণতন্ত্র ছিল কারফিউ মার্কা গণতন্ত্র। স্বৈরাচার জিয়া পরিকল্পিতভাবে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করেছিল, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছিল। স্বৈরাচার জিয়ার হাতে প্রতিষ্ঠিত বিএনপি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে নস্যাৎ করার ভাবাদর্শগত রাজনৈতিক উত্তরাধিকার ধারণ করে চলেছে। বিএনপিই এদেশে গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত আদর্শ বাস্তবায়নের প্রধান অন্তরায়।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, মির্জা ফখরুলসহ বিএনপি নেতারা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেন! নির্বাচনে না গিয়ে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি তীব্র সমালোচনা আর মিথ্যাচারের তীর ছুঁড়ে এবং দলীয়ভাবে আপাদমস্তক অগণতান্ত্রিক চর্চা অব্যাহত রেখে তারা না-কী দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে! জনগণ কী তা বিশ্বাস করে? জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাগুরা ও মিরপুর মার্কা উপ-নির্বাচন, ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন জাতিকে উপহার দিয়েছিল বিএনপি।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচনে কারচুপি করে ক্ষমতাদখলের পাঁয়তারায় আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন গঠন এবং ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার সৃষ্টি কারা করেছিল তা দেশবাসীর অজানা নয়। এদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, গণতান্ত্রিক কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করেছে বিএনপি। বিএনপির গণতন্ত্রবিরোধী রাজনীতির কারণেই এদেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা বার বার হোঁচট খেয়েছে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জনগণের ক্ষমতায়ন ও গণতান্ত্রিক চেতনাকে সমুন্নত রাখতে বদ্ধপরিকর। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকার গণতন্ত্রকে ক্রমান্বয়ে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে এ দেশের জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সে ভোটাধিকার সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগই সর্বোচ্চ ভূমিকা পালন করে আসছে। আমরা প্রত্যাশা করি, অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে এবং জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রক্ষমতা পরিবর্তন হবে।