স্টাফ রিপোর্টার- জাতীয় সংসদ নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী প্রস্তাব মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উঠছে। মন্ত্রিসভার অনুমোদন পেলেই এটি সংসদে উপস্থাপন করা হবে। আর আরপিও সংশোধন হলেই যেকোনো পর্যায়ে নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা পাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
জানা গেছে, আরপিও সংশোধনের খসড়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটারের আঙুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত ভোটের সুযোগ সর্বোচ্চ ১ শতাংশের বিষয়টি রাখা হয়নি। এ ছাড়া নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কেন্দ্র থেকে যেকোনো পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী রাখার সময় আরও ১০ বছর বাড়িয়ে আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত করার প্রস্তাব করেছে ইসি। সংসদে পাস হলে এটি যুগান্তকারী আইন হবে এবং এতে প্রার্থী, সমর্থক সবার আচরণগত পরিবর্তন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আরপিওর ১৫ থেকে ১৭টি ধারা-উপধারায় কমবেশি সংশোধনী আসতে পারে। মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন কৃষি ও ক্ষুদ্রঋণ এবং বিলখেলাপিরা তাদের খেলাপি টাকা পরিশোধ করলেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। বিদ্যমান আইনে সাত দিন আগে এসব পরিশোধের বিধান রয়েছে।
এ ছাড়া সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ২৫-এ ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তি প্রভাব বিস্তার করলে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে নির্বাচন বন্ধ করে দেয়ার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচন কর্মকর্তা কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচন বন্ধ করবেন তার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
অনুচ্ছেদ ৩১ ও ৩৬-এ ব্যালট পেপারের পেছনে অফিসিয়াল সিল ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তার স্বাক্ষর না থাকলে তা গণনায় আনা যাবে না- এমন বিধান স্পষ্ট করা হয়েছে। অনুচ্ছেদ ৩৬(১১)-এ ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার এজেন্টকে দেয়ার বিষয়টি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
৭৮(২) অনুচ্ছেদে ভোটগ্রহণ শুরুর আগের ৪৮ ঘণ্টা ও পরের ৪৮ ঘণ্টায় কেউ বিশৃঙ্খলামূলক আচরণ, অস্ত্র ও পেশিশক্তি প্রদর্শন এবং ভোটগ্রহণ কাজে নিয়োজিতদের ভয় দেখালে সর্বোচ্চ সাত বছর ও সর্বনিম্ন দুই বছর জেল-জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
সংশোধনীর ৮৪এ ও ৮৪বি অনুচ্ছেদে ভোটার, পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং পেশিশক্তির বিস্তার বন্ধে সাজার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আরপিও সংশোধনের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, ‘২৮ মার্চ মন্ত্রিপরিষদে উঠবে। মন্ত্রিপরিষদে পাস হলে সংসদে যাবে। আরপিও সংশোধন হলে এটি যুগান্তকারী আইন হবে এবং এতে প্রার্থী, সমর্থক সবার আচরণগত পরিবর্তন হবে। আইনটি পাস হলে কমিশন, কমিশনের যারা ফিল্ডে কাজ করবে প্রত্যেকের জন্য খুব ভালো একটা কাজ হবে।’
ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশ হয়ে গেলেও ভোট বাতিলের ক্ষমতা আপনারা (ইসি) পাচ্ছেন- বিষয়টি নজরে আনলে কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে উঠবে। আমি তো মনে করি পরের অধিবেশনে এটি জাতীয় সংসদে উঠতে পারে। আমরা যে রকম প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম মোর অর লেস ওই রকমই আছে। আমাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে আইন মন্ত্রণালয়। দেখা যাক। সংসদে যাওয়ার আগে কেবিনেট অনুমোদন করবে। আরও কয়েকটি স্টেপ বাকি আছে। কেননা আরও হায়েস্ট বডি আছে। কাজেই এই কথাগুলো বলার মনে হয় এখন উপযোগী পরিবেশ নয়।’
এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কমিশনার রাশেদা সুলতানা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নির্বাচন সম্পন্ন হয়ে ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করা হলেও প্রয়োজনে সেই ভোট বন্ধ করার ক্ষমতা রেখে আরপিও সংশোধন চেয়েছে ইসি। এতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ সম্মতি দিয়েছে। আর ইভিএমে আঙুলের ছাপ যে মেলে না, এতে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারিত করে দিতে চেয়েছিল কমিশন। মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে সেটি থেকে সরে এসেছে কমিশন। তাই বিষয়টি আরপিও থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এই বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ হচ্ছে- এটা বিধিমালা দিয়ে কাভার করা সম্ভব।
ইসি সূত্র জানায়, এর আগে আরপিও সংশোধনের অগ্রগতি জানতে তিনবার চিঠি দিয়েও মন্ত্রণালয় থেকে কোনো জবাব না পাওয়ায় গত ২৭ নভেম্বর শেষবারের মতো চিঠি দেয় কমিশন। এতে জবাব দেয়ার জন্য ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়। এই চিঠি দেয়ার দুই দিনের মাথায় ২৯ নভেম্বর কমিশনের চিঠির ব্যাপারে সাড়া দেয় মন্ত্রণালয়। আরপিও সংশোধনে ইসির দেয়া চিঠির জবাবে জানানো হয়- পরীক্ষানিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে।