Search
Close this search box.
রাজধানীর অভিজাত এলাকার ঈদ মার্কেট

আলো ঝলমলে শপিংমল, রাতভর চলছে কেনাকাটা

আলো ঝলমলে শপিংমল, রাতভর চলছে কেনাকাটা

শাহনাজ পারভীন এলিস

রবিবার রাত সাড়ে ১০টা। অথচ রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকার পল্টন টাওয়ার এলাকার আলো ঝলমলে পরিবেশ দেখে যে কারোরই মনে হবে মাত্র সন্ধ্যা নামলো। কারণ সেখানকার শপিংমলগুলো তখনও ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনায় মুখর। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। ঈদের শপিংয়ের জন্য বিত্তবান ও শৌখিন ক্রেতাদের প্রতি লক্ষ্য রেখে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পোশাক ও অলঙ্কারে সাজানো হয়েছে অভিজাত এসব এলাকার শপিংমল। দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি পশ্চিমা বিশ্বের হাল ফ্যাশনের তৈরি পোশাকও শোভা পাচ্ছে অত্যাধুনিক শপিংমলগুলোতে।

সিটি হার্ট শপিং কমপ্লেক্সে গিয়ে কথা হয়ে মতিঝিল থেকে কেনাকাটা করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী আরিফ হোসেনের সাথে। তিনি সংবাদ সারাবেলাকে বলেন, ‘পরিবার নিয়ে সেগুনবাগিচায় এক আত্মীয়ের বাসায় ইফতারের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফেরার পথে মার্কেটে আসলাম। দিনে অফিস থাকায় সময় হয় না, তাই রাতেই কেনাকাটা করতে হয়। রাতের আলো ঝলমলে শপিংমলে কেনাকাটার আমেজও একটু আলাদা মনে হয়। স্ত্রীর জন্য শাড়ি, মেয়ের জন্য জামা দেখছি, এরপর পল্টন টাওয়ারে গিয়ে আমার ও ছেলের জন্য পাঞ্জাবি কেনার ইচ্ছা আছে।’ এবার জিনিসপত্রের দাম কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনে হচ্ছে বৈশি^ক অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থার প্রভাব পড়েছে। বেশিরভাগ পণ্যেরই দাম এবার বেশি। বিশেষ করে বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। ’

নগরীর অভিজাত এলাকাখ্যাত ধানমণ্ডি, গুলশান, বনানী উত্তরা এলাকার মার্কেট ও শপিংমলগুলোতে চলছে জমজমাট ঈদের বিকিকিনি। ক্রেতা আকর্ষণে দোকানে দোকানে শোভা পাচ্ছে আধুনিক রুচির লাখ টাকা দামের পোশাক। অভিজাত এলাকার শপিংমলগুলো বিভিন্ন দেশ থেকে পোশাকের সংগ্রহ বাড়িয়েছে। রয়েছে জুতা ও কসমেটিকসসহ নামি-দামি বিদেশি ব্রান্ডের হরেক রকম পণ্য। বিক্রেতারা জানান, রমজানের শুরুতে বেচাকেনা গতিমন্থর থাকলেও এখন জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। এসব এলাকার বিত্তবান ক্রেতাদের কাছে দাম কোন সমস্যাই নয়, পছন্দটাই আসল। নগদে কিংবা ক্রেডিট কার্ডে ধনাঢ্য ক্রেতারা কিনছেন আভিজাত্য আর লেটেস্ট ডিজাইনের বাহারি সব পোশাক। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পর্যায়ে শাড়ি, পাঞ্জাবি, মেয়েদের পোশাকের দোকান এবং নতুন কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে জুতা ও কসমেটিকসের দোকানগুলোয় ক্রেতার তুলনামূলক বেশি।

গুলশান ও বনানীর বড় ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে জারা ফ্যাশন, ভাসাবি, শপার্স ওয়ার্ল্ডসহ বিভিন্ন হাউসে বিদেশি কাপড়ের প্রাধান্যই বেশি। শার্ট, প্যান্ট ও ব্লেজারসহ থান কাপড়ের পুরোটাই বিদেশি। বিক্রেতারা জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয় হিন্দি সিনেমা বা টিভি সিরিয়াল ও তারকাদের নামে ভারতে তৈরি থ্রি-পিস ঢাকাসহ সারা দেশের ঈদের বাজারে বেশ চাহিদা। এর ব্যাপক কাটতি দেখে প্রতি বছরই এ ধরনের পোশাকের সরবরাহ বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এসব মার্কেটের বিক্রেতারা জানালেন, ভারতীয় বলিউডের নামকরা ডিজাইনারদের তৈরি শিফন, লেইজ, নেটের কাপড়ের উপরে সুতা, স্টোন বা জাদৌজির জমকালো কাজ এসেছে নারীর পোশাকে।

গুলশানের পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্সের গুলশান শাড়ি মিউজিয়ামের সেলস এক্সিকিউটিভ মাহবুব হোসেন জানান, ঈদ সামনে রেখে এবং বিত্তশালী ক্রেতাদের চাহিদা প্রাধান্য দিয়ে শাড়ির কালেকশন বাড়ানো হয়েছে। বিক্রিও ভালো বলে জানালেন তিনি। এ শপিংমলের অন্যান্য ব্যবসায়ীরাও জানান, এক্সক্লুসিভ সব ধরনের টি-শার্ট, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা আনা হয়েছে বিদেশ থেকে। এসব কাপড় ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা। গুলশানের জারা ফ্যাশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, এবার বিত্তশালীদের পছন্দকে প্রাধান্য দিয়েই ঈদে পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো হয়েছে।

অভিজাত এসব এলাকায় দেশীয় পোশাকের পাশাপাশি বিদেশি পোশাকের দোকানও রয়েছে প্রচুর। কাকলী মোড় থেকে শুরু করে কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, বনানী ১১ নম্বর রোড হয়ে গুলশান-১ ও ২ নম্বরজুড়ে রয়েছে পোশাকের দোকান। এরমধ্যে দেশীয় পোশাকের শোরুমগুলোর মধ্যে রয়েছে- বুটিকশপ কে-ক্র্যাফট, ক্যাটস আই, দর্জিবাড়ি, কুমুদিনী হ্যান্ডি ক্রাফট, লুবনান, আড়ং, মায়াসি, সাজ ফ্যাশন, রঙ, বিবিয়ানা, দেশাল, নাগরদোলা, অন্যমেলা, সাদাকালো, বাংলার মেলা, অন্যরকম, জয়নব, কীত্তনখোলা, ট্রেন্ডস, মাচমোরের পাশাপাশি আছে রেমন্ডসহ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিক্রয় কেন্দ্র। শোরুমগুলোতে জমে উঠেছে ঈদের বেচাকেনা। বিভিন্ন বয়সী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে আনা হয়েছে নিত্যনতুন ডিজাইনের পোশাক।

এছাড়াও গুলশান শপার্স ওয়ার্ল্ড, নাভানা টাওয়ার, মনি ক্যাপিটাল সেন্টার, পিংক সিটি শপিং কমপ্লেক্স, বসুজা স্টিচ, রূপায়ণ গোল্ডেন এজ, জব্বার টাওয়ারসহ অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, রাজনীতিবিদ, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, মিডিয়া তারকা, সরকারি-বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা পরিবার-পরিজন নিয়ে মার্কেটে আসছেন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি মার্কেটের সামনে গাড়ির বিশাল জটলাই বলে দেয় ক্রেতার উপস্থিতি।
ধানমণ্ডির কিউরিয়াস শপিং মলে গিয়ে কথা হয় আফরোজা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছি। কিন্তু মনে হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে আছি। এক তো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়, অন্যদিকে দামের উত্তাপ। নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির মতো জামা-কাপড়ও সমান তালে দাম বেড়েছে।’ আরেক ক্রেতা আফজাল হোসেন জানান, ‘আমার স্ত্রী ও সাত বছরের সন্তানকে নিয়ে ঈদের শপিং করতে এসেছি। ঘুরে ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলে শাড়ি-পাঞ্জাবিসহ আমার বাচ্চার জামা-কাপড় কিনবো।’

ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিজাত এসব এলাকায় দিনের চেয়ে রাতেই ক্রেতার ভিড় বেশি থাকছে। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় সারারাতই শোরুমগুলো খোলা রাখছেন তারা। ক্রেতা-দর্শনার্থীদের প্রাণবন্ত উপস্থিতি বিক্রি নিয়েও তারা সন্তুষ্ট। ঈদের আগে চাঁদরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের ভিড় থাকবে এমন আশাবাদ জানান তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ