স্টাফ রিপোর্টার- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ বরণ উপলক্ষে বিকেল চারটার মধ্যে রমনায় সব অনুষ্ঠান শেষ করে স্থান ত্যাগ করতে হবে। এছাড়া রমনা বটমূলে ব্যাগ নিয়ে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, পহেলা বৈশাখে ভুভুজেলাসহ বিভিন্ন উচ্চ শব্দ করে এমন বাদ্য ব্যবহার করে নগরবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না।
বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ বরণ উপলক্ষে রমনা বটমূলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, প্রতি বছর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ রমনা বটমূলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে। আমাদের সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট আন্তর্জাতিক মানের। যদি কোথাও বোমা পাওয়া যায় তাহলে সিটিটিসির রোবোটিকস সিস্টেম ও ডগ স্কোয়াডের মাধ্যমে আইডেন্টিফাই করা যাবে। পরবর্তী সময়ে রোবটের মাধ্যমে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা যাবে। এরমধ্যে যদি কোনো দুষ্কৃতিকারী ঢুকে যায় তাহলে সোয়াত টিম সেই মহড়া দিয়েছে। তাদের সব ধরনের সক্ষমতা রয়েছে।
কমিশনার বলেন, এবারের পহেলা বৈশাখ যেন ঢাকাবাসীসহ সব বাঙালি উৎসবমুখরভাবে পালন করতে পারে সেজন্য ঢাকা মহানগর পুলিশ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা করেছে। রমনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, টিএসসি, রবীন্দ্রসরোবর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক প্রায় ২৭০০ পুলিশ কাজ করছে।
তিন স্তরের নিরাপত্তার কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, রমনাকেন্দ্রিক মোট ৯টি গেট থাকবে। এরমধ্যে চারটি গেট দিয়ে প্রবেশ করা যাবে। বাকি ৫টি গেট দিয়ে প্রবেশ-বাহির হওয়া যাবে। প্রত্যকটি গেটে পুলিশ, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকবে। প্রত্যকেককে সার্চ করে রমনায় প্রবেশ করানো হবে।
খন্দকার গোলাম ফারুক আরও বলেন, পহেলা বৈশাখে অনেক সময় দেখা যায় উঠতি বয়সী ছেলেরা ভুভুজেলাসহ বিভিন্নভাবে উচ্চ শব্দ করে নগরবাসীর দুর্ভোগ সৃষ্টি করে। এ ধরনের শব্দ না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি। ব্যাগ নিয়ে কেউ রমনা পার্কে প্রবেশ করতে পারবেন না। প্রত্যকের চেক-ইন করা হবে। তাই বাড়তি কোনো কিছু নিয়ে রমনায় আসবেন না।
রমনায় লোক সমাগম বেশি হলে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। রমনা পার্ক সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ৪টার মধ্যে সব অনুষ্ঠান শেষ করে রমনা ত্যাগ করতে হবে। চারটার পর আর কাউকে রমনায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
আদালতপাড়া থেকে দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত দশ জঙ্গিকে গ্রেফতার করেছি। পলাতক জঙ্গিরা নজরদারিতে রয়েছে, তাদেরও গ্রেফতার করা হবে। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সরাসরি কোনো জঙ্গি থ্রেট বা হুমকি নেই।
মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধ করার হুমকি দিয়ে পাঠানো উড়োচিঠির ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘জঙ্গি নয়, দুষ্টু পোলাপান চিরকুট দিয়ে হুমকি দিয়েছে। তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে।
খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘যে উড়ো চিঠি এসেছে তা দেওয়া হয়েছে দাজ্জাল বাহিনী নামে। দাজ্জাল বাহিনী নামে বাংলাদেশে কোনো জঙ্গি সংগঠন নেই। কোনো দুষ্টু পোলাপান অতি উৎসাহী হয়ে চিরকুট লিখছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বাঙালি হিসেবে মনে করি, দুই-একটা বোমা দিয়ে দমন করা যাবে না। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের দোসররা কামান-বন্দুক নিয়ে এই বাঙালিদের দমন করতে পারেনি। আর কোথাকার কোন জঙ্গি একটা-দুটা বোমা মেরে আমাদের দমন করবে- আমরা ওই রকম ভীতুর জাতি নয়। আমরা বীরের জাতি। কোনো জঙ্গি, কোনো শকুন আমাদের প্রতি নখ দেখাবে, আমরা সেই জাতি নই। এরপরও যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশ প্রস্তুত রয়েছে। কেউ কোনো ধরনের দুঃসাহস দেখাতে পারবে না।
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চারুকলা অনুষদ দেয়ালে রঙের কাজ তদারকি করার সময় প্লাস্টিক চেয়ারের ওপর সাদা কাগজ ও ৫০ টাকার নোট পাওয়া যায়। ওই কাগজে লেখা ছিল- ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা কাজটা শিরকের, এখানে এসে ক্ষতি করো না তোমাদের, হামলা হতে পারে এনিটাইম, দাজ্জালি বাহিনী পাবে না টের মোদের।
এ ঘটনায় আবতাহী রহমান (২৫) নামের এক শিক্ষার্থী শাহবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। তিনি শাহবাগ থানাধীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রা উদ্যাপন কমিটির অর্থ ও নিরাপত্তাবিষয়ক সদস্য।