Search
Close this search box.

নিউ মার্কেটে আগুন- পুড়েছে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন

স্টাফ রিপোটার- রাজধানীর নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুনে ২৫০টি দোকান পুড়ে গেছে। সেই সাথে পুড়ে গেছে ব্যবসায়ীদের স্বপ্ন । শনিবার ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে সেখানে আগুন লাগে। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টার পর ফায়ার সার্ভিসের ৩০টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঈদের বিক্রি যখন জমে উঠেছে ঠিক সেই সময় ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে নিউ সুপার মার্কেটে। এই আগুনের ঘটনা ঘটায় নিউমার্কেটর আশপাশের মার্কেটগুলোত বন্ধ রয়েছে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেখানে যোগ দেয় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনাস্থলে র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন স্বেচ্ছাসেবীরাও। ৯টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

নিউ সুপার মার্কেটে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঢাকা কলেজের পুকুর বড় ভূমিকা রেখেছে। এই পুকুর থেকে পানির জোগান পাওয়া না গেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা আরও কঠিন হতো বলে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। শুরু থেকেই অগ্নিনির্বাপনে নেওয়া হয় ঢাকা কলেজের পুকুরের পানি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা বলছেন, কাছাকাছি পানির অন্য কোনো উৎস না থাকায় ওই পুকুর থেকে পানি নেওয়া হচ্ছে। তারা মনে করেন, ঢাকা কলেজে পুকুর না থাকলে আজকের আগুন নেভাতে আরও বেগ পেতে হতো।

আগুন লাগার পর পরই ঢাকা কলেজের মূল ফটক এবং টিচার্স কোয়াটার সংলগ্ন গেট খুলে দেওয়া হয়। এ দুটি গেইট দিয়েই পুকুর থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করে ফায়ার সার্ভিস। এছাড়া ঢাকা কলেজের দক্ষিণ দিকের প্রাচীরের কিছু অংশ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সেসব অংশ দিয়ে পানি নেওয়া হচ্ছে। সকাল থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণ কাজে ফায়ার সার্ভিসকে সহায়তা করেন ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরাও।

ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, আগুন লাগার খবরে আমাদের কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা, বিএনসিসি, রোভার, রেড ক্রিসেন্টসহ সবাই উদ্ধার তৎপরতায় এগিয়ে এসেছে। এখানে পুকুর না থাকলে আগুনের ব্যাপ্তি আরও ভয়াবহ হতো। ঢাকা কলেজ সবসময় মানবিক দৃষ্টান্ত দেখিয়ে থাকে।

আগুন লাগার পরপরই ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো হয় একঝাঁক তরুণ কনস্টেবল। ভয়াবহ এ আগুন উপেক্ষা করে সিঁড়ি বেয়ে মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় উঠে যান পুলিশ কনস্টেবলরা। পরে বড় বড় কাপড়ের বস্তা অক্ষত অবস্থায় নিজেদের কাঁধে করে নামিয়ে এনে নিরাপদ স্থানে ব্যবসায়ীদের কাছে বুঝিয়ে দেন।

কথা হয় কনস্টেবল শান্তর সঙ্গে। তিনি বলেন, ৬টার দিকে জরুরি খবর পেয়ে ডিএমপি কন্ট্রোল রুম থেকে ছুটে আসি এখানে। এসে দেখি তখনও অনেক ব্যবসায়ী আসেননি। তাদের মালামাল রক্ষার্থে নিজের কাঁধে করে বস্তা নিচে নামিয়ে আনি। আমার সঙ্গে আরও দুইজন কনস্টেবল ছিলেন। আমরা প্রায় দেড়শ বস্তা মালামাল নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনতে পেরেছি।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কথা হয় কনস্টেবল গৌতমের সঙ্গে। তখনও তার পুরো ইউনিফর্ম ভেজা। পানি পড়ছিল ইউনিফর্ম থেকে। তিনি বলেন, জীবনের মায়া ত্যাগ করে ব্যবসায়ীদের জন্য যদি কিছু করতে পারি- চাকরি জীবনে এর চাইতে বড় স্বার্থকতা আর কী হতে পারে। আমি নিজে ৩০/৩৫টি বস্তা কাঁধে করে এনে ব্যবসায়ীদের কাছে হস্তান্তর করেছি।

পুলিশের এমন কাজের প্রশংসা করেন ব্যবসায়ীরাও। রহমতউল্লাহ নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, দুইজন পুলিশ ভাই আমার প্রায় ৪০ বস্তা মালামাল নিয়ে এসেছেন। আল্লাহ তাদের কবুল করুন। তারা যে পরিশ্রম করেছেন তা আমি নিজেও পারতাম না।

পুলিশের পাশাপাশি জীবনের ঝুকি নিয়ে ব্যবসায়ীদের মালামাল বের করে আনে র‌্যাব, বিজিবি, সেনা-নৌ-বিমান বাহিনীর সদস্যরা।

এদিকে, আর মাত্র এক সপ্তাহ পরেই পালিত হবে মুসলমান ধর্মালম্বীদের সব থেকে বড় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এখন পোশাকের মার্কেটগুলোতে বিক্রি জমে উঠেছে। ঈদ উপলক্ষে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগ করেছেন। দোকানে তুলেছেন নতুন পণ্য।

এ মুহূর্তে আগুন লাগার ঘটনায় নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বড় লোকসানের মুখে পড়েছেন। শুধু নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা নয়, আশপাশের ব্যবসায়ীদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।

ঢাকা নিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী বলেন, রাত দুইটার পর দোকান বন্ধ করে তারা বাসায় যান। ভোরবেলা আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখেন আগুন জ্বলছে।

এসব ঘটনার পেছনে কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা গোয়েন্দা সংস্থাকে খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, আমরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছি। একের পর এক ঘটনা ঘটছে। গোয়েন্দা সংস্থাকে আহ্বান করবো কোনো নাশকতা রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, নিউ সুপার মার্কেটের তিন তলা ভবনে ১২শর মতো দোকান রয়েছে। আমরা এখন পর্যন্ত ধারণা করছি, প্রায় ২৫০টির মতো দোকান পুড়ে গেছে। কারণ এক পাশ আগুনে একেবারে পুড়ে গেছে। এছাড়াও অনেকগুলো দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসার পর ভেতরে ঢুকলে আসল চিত্র জানা যাবে।

হেলাল উদ্দিন আরও জানান, বঙ্গবাজারের ক্ষত কাটতে না কাটতেই নিউ মার্কেটে আগুন লাগলো। আমরা এই আগুনের দ্রুত তদন্ত চাচ্ছি। কোনও নাশকতা না কি অন্য কিছু তা তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসুক। এরপর সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে, এটাই আমাদের চাওয়া।

সকাল ১০টা থেকে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নিউমার্কেটের কাছাকাছি চন্দ্রীমা সুপার মার্কেট, গ্লোব শপিং মল, বদরুদ্দোজা সুপার মার্কেট, গাউছিয়া সুপার মার্কেট, নূর মেনশন সুপার মার্কেট, হকার্স মার্কেট, চাঁদনী চক, ইয়াকুব সুপার মার্কেট, নূর জাহান সুপার মার্কেট, গোল্ডেন সুপার মার্কেট বন্ধ রয়েছে।

এর পাশাপাশি সায়েন্স ল্যাব থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত সব দোকান-অফিস বন্ধ হয়ে যায়। এই সড়ক দিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। সাধারণ মানুষ ঢুকতে গেলে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়। তবে জরুরি অ্যাম্বুলেন্স ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত গাড়িগুলো প্রবেশ করতে পেরেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ