স্টাফ রিপোর্টার- প্রবীণ রাজনীতিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) রাত সোয়া ১২টায় রাজধানীর পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোপ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার মরদেহ শমরিতা হাসপাতালের হিমঘরে রয়েছে বলে জানান সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদ।
বেশ কিছু দিন থেকে অসুস্থ ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। সবশেষ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ১৭ এপ্রিল থেকে ঢাকার পান্থপথের ‘হেলথ অ্যান্ড হোপ’ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
এরপর ঈদের দিন (শনিবার) তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
১৯৩৯ সালের ৬ আগস্ট চট্টগ্রামের রাউজানের নোয়াপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। তার শিক্ষাজীবন কেটেছে চট্টগ্রাম ও ঢাকায়। ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন তিনি।
ষাটের দশকের ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ ও পরবর্তী বাংলাদেশের সব আন্দোলন-সংগ্রামের প্রত্যক্ষদর্শী, একজন নেতৃস্থানীয় কর্মী ও সংগঠক পঙ্কজ ভট্টাচার্য।
১৯৬২ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও পরে কার্যকরী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। ১৯৬৬ সালে স্বাধীন বাংলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত হয়ে কারাবন্দি হন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টি গেরিলা বাহিনীর সংগঠক ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৩ সালে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম গঠনের সময় দলটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন তিনি।
পরে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন নামে দেশের প্রগতিশীল-গণতান্ত্রিক মানুষের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলেন তিনি। ২০১৩ সালে ঐক্য ন্যাপ নামে রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। অল্প বয়সে কৃতী ফুটবলার ছিলেন পঙ্কজ ভট্টাচার্য। লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চায় আগ্রহ ছিল তার।
চলতি বছরের অমর একুশে বইমেলায় তার লেখা আত্মজীবনীমূলক বই ‘আমার সেই সব দিন’ প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের গত ছয় দশকের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক ইতিহাসের একটি দলিল হিসেবে গণ্য করা হয় বইটিকে।