স্টাফ রিপোর্টার- কক্সবাজারে মাছ ধরার ট্রলারের কোল্ডস্টোরেজ থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ১০ মরদেহের পরিচয় মিলেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রবিবার (২৩ এপ্রিল) রাতে নিহতদের স্বজন ও জনপ্রতিনিধিরা তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম।
পরিচয়ের দাবি মতে, নিহতরা মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা। নিহতদের মধ্যে ট্রলারটির মালিক সামশুল আলমও আছেন। তিনি মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকার রফিক মিয়ার ছেলে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও নিহতদের স্বজনদের দেওয়া তথ্যমতে নিহতরা হলেন- মহেশখালী উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের ছনখোলা পাড়ার রফিক মিয়ার ছেলে সামশুল আলম (২৩), শাপলাপুর ইউনিয়নের মিটাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), জাফর আলমের ছেলে সওকত উল্লাহ (১৮), মুসা আলীর ছেলে ওসমান গনি (১৭), চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪), শাহ আলমের ছেলে মোহাম্মদ শাহজাহান (৩৫) ও চকরিয়া পৌরসভার চিরিঙ্গা এলাকার জসিম উদ্দীনের ছেলে তারেক জিয়া (২৫), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪), মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে নুরুল কবির (২৮)।
ওসি মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, ট্রলারের বরফ রাখার কক্ষ থেকে ১০ জেলের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে তিনজনের হাত-পা রশি দিয়ে বাঁধা ছিল। কয়েকজনের শরীরে পেঁচানো ছিল জাল। একটি মরদেহের গলা থেকে মাথা ছিল বিচ্ছিন্ন। আরেকটি মরদেহের হাত বিচ্ছিন্ন পাওয়া গেছে। মরদেগুলো ট্রলারের যে কক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছে, সেই কক্ষের ঢাকনাও পেরেক দিয়ে আটকে দেওয়া ছিল। ট্রলারের জাল ও ইঞ্জিন রক্ষিত আছে।
ওসি আরও বলেন, মরদেহগুলো এখনো হাসপাতাল মর্গে আছে। ময়নাতদন্ত করে আরও যাচাইয়ের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে, তাদের মৃত্যুর রহস্য জানতে মাঠে নেমেছে পুলিশ ব্যারো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরই মধ্যে পিবিআই প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজি বনজ কুমার মজুমদার ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যবেক্ষণ করে তদন্তের পর বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন।
এর আগে শনিবার রাতে লাশবাহী একটি ট্রলার ভেসে আসার খবর জানান জেলেরা। খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে বোটটি দেখেন এবং মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে রোববার সকালের দিকে ফায়ার সার্ভিসের দলকে সঙ্গে নিয়ে মরদেহ উদ্ধারে যায় পুলিশ। সকাল থেকে চেষ্টা করে ট্রলারটি তীরে এনে কোল্ডস্টোর থেকে ১০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। শহরের নাজিরারটেক এলাকায় সাগরতীরে চলা মরদেহ উদ্ধার অভিযান বিকেল ৫টায় সমাপ্ত ঘোষণা করেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা।
স্থানীয়দের মতে, ১৫-১৬ দিন আগে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে ডাকাতি করতে গিয়ে একদল জলদস্যু জেলেদের হামলার শিকার হয়। এ সময় জলদস্যুরা মারা পড়েছিল বলে খবর বেরিয়েছিল। কিন্তু এতদিন পর্যন্ত ওই দস্যুবাহিনীর ট্রলারের হদিস পাওয়া যায়নি। এরই মধ্যে নিহতরা মহেশখালী ও চকরিয়ার বাসিন্দা বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা। এরা জেলে বলেও দাবি উঠেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সবকিছু খতিয়ে দেখছে পুলিশের এলিটফোর্স পিবিআই। সমস্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। মূল ঘটনা জানা যাবে বলে আমাদের বিশ্বাস।