স্পোর্টস রিপোর্টার – বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘চাপের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে। ওই ধরনের খেলোয়াড় আমরা দলে চাই না।’ সিলেটে সংবাদ সম্মেলনে এমনটিই বলেছেন কোচ।
এক সিরিজে স্পিনার নাসুম আহমেদ খেলছেন তো পরের সিরিজে তাইজুল ইসলাম। দেশের মাটিতে শেষ হওয়া আয়ারল্যান্ড সিরিজে খেলেছেন নাসুম। আর আয়ারল্যান্ড সফরে ডাক পড়েছে তাইজুলের। তাদের দুজনকে নিয়ে এমন করার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘কারণ যেমন আমরা আলোচনা করেছি, আমি স্কোয়াড বড় করতে চাই। সবাইকে অনেক অভিজ্ঞতা দিতে চাই। বিশ্বকাপের আগে অবধি এমন চলতেই থাকবে।’
এমন প্রক্রিয়ার ফলে তাদের দুজনের মাঝে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের প্রধান কোচ বলেন, ‘করবে না। কারণ তাদের সঙ্গে যথেষ্ট কথা হয়েছে। ব্যাখ্যা করেছি কেন তারা আছে, কেন নেই। আশা করি প্রভাব ফেলবে না। যদি করে, তাহলে এটা চাপের মধ্যে তাদের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলবে। ওই ধরনের খেলোয়াড় আমরা দলে চাই না।’
ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব ক্ষেত্রেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেট দেখিয়েছে বাংলাদেশ। সামনেই বিশ্বকাপ, টাইগাররা কি এভাবেই এগুবেন নাকি ভিন্ন পন্থায়? চন্ডিকা হাথুরুসিংহে পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, আগ্রাসন বন্ধ করছেন না তিনি। অব্যাহত থাকবে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট।
আগামী মাসে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ওই সিরিজটা আবার ওয়ানডে সুপার লিগের অংশ। ফলে বাড়তি গুরুত্বই দিতে হচ্ছে। আয়ারল্যান্ড সিরিজের আগে তাই সিলেটে ক্যাম্প করছেন জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা।
হাথুরুসিংহে বলেন, ‘সব সময় আগ্রাসী ক্রিকেট খেলার মানসিকতা থাকবে আমাদের। তবে এর মানে এই না যে, বল মেরে স্টেডিয়ামের বাইরে পাঠাতে হবে। আগ্রাসী ক্রিকেট মানে হলো, যা-ই করি না কেন, ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে করতে হবে। পাশাপাশি সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রেও আগ্রাসী থাকা, সেটা হোক দল বাছাই কিংবা ফিল্ড প্লেসিং কিংবা কী ধরনের বোলিং করা হবে। আমরা ছেলেদেরকে এই স্বাধীনতা দিতে যাই, যেন তারা মাঠে গিয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারে।’
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে টপ অর্ডার নিয়ে সমস্যা অনেক দিনের। টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় শুরুতেই উইকেট হারিয়ে বিপদে পরতে হয়। যাতে পরে রান তোলোর গতি আর ঠিক থাকে না। টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতার কথা জানা আছে হাথুরুর। চেষ্টা করছেন সেটা সমাধানের।
হাথুরু বলছেন, মাঠে নামার সময় মাথা পরিস্কার থাকতে হবে ক্রিকেটারদের। তবেই প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স মিলবে। শ্রীলংকান এই কোচ বলেন, ‘ওপেনার হলে ১০ ওভার ব্যাট করতে হবে, কীভাবে শুরু করতে হবে এবং ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের (৩০ গজের মধ্যে ফিল্ডার রাখার বাধ্যবাধকতা) সর্বোচ্চ ব্যবহার কীভাবে করতে হবে সেটাও ভাবতে হবে। মাঝে ব্যাট করলে পরিস্থিতি অন্যরকম থাকবে। কখনো চারজন বা পাঁচজন আউট হওয়ার পর আসতে হবে (ব্যাটিংয়ে)।’
অনুশীলনের মাধ্যমেই সব কিছু আয়ত্ব করতে হবে বলছেন হাথুরুসিংহে, ‘কীভাবে শুরু করতে হবে সেটা অনুশীলন করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি এভাবে অনুশীলন না করেন তাহলে উইকেটে গিয়ে থমকে যেতে হবে, যেটা আমরা চাই না। আমরা চাই কোন পরিস্থিতিতে কেমন খেলতে হবে সে বিষয়ে সবার মাথা পরিষ্কার থাকুক।’
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন ধ্রুবর ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে নিজের মত দেন হাথুরুসিংহে। তিনি বলেন, ‘(আফিফ ও মাহমুদউল্লাহ) তাদের ব্যাপারে আমি আগে যা বলেছি সেটিই থাকবে। তারা সবাই মিক্সে (প্রাথমিক দলের ভাবনায়) আছে। বিশ্বকাপের আগে তারা সবাই-ই খেলার সুযোগ পাবে। আমরা ওই মাইন্ডসেটে কোনো পরিবর্তন করিনি।’
বিশ্বকাপে কোন ভেন্যুতে কার বিপক্ষে খেলতে হবে, তা এখনও জানা যায়নি। সূচীই যে চূড়ান্ত হয়নি। তা জানতে দেরি হওয়ার একটা প্রভাব দেখছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। বিশ্বকাপের আর বাকি পাঁচ মাসের মতন সময়। কিন্তু এখনো সূচি ঘোষণা করেনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। দশ দলের বিশ্বকাপে এবারও প্রতি দলকে খেলতে হবে ৯টি করে ম্যাচ। আগামী অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতে বিশ^কাপের ভেন্যু হিসেবে ১২টি শহরের নাম ঘোষণা করে রেখেছে স্বাগতিক ভারত।
হাথুরুসিংহে বলেছেন, ‘এটি শুধু আমাদের জন্য নয়, সবার ওপরেই প্রভাব পড়ছে। আমার মনে হয়, ভারত দ্রুতই (সূচি) ঘোষণা করবে। আগে ঘোষণা করা হলে ভালো হয়। খানিক স্বচ্ছতা পাওয়া যায়।’
আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে টাইগারদের সিলেটে তিন দিনের অনুশীলন ক্যাম্প শেষ। একেবারেই ভালো সময় যাচ্ছে না ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের। তামিমকে নিয়ে ভাবনা নেই হাথুরুসিংহের। মুস্তাফিজুর রহমান ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়ে ভাবছেন কোচ।
ছন্দহীন তামিম ইকবালকে নিয়ে হাথুরুসিংহে বলেন, ‘তামিম খুব ভালো ব্যাটিং করছে। এই ক্যাম্পে যেভাবে ব্যাটিং করেছে, আমি খুব খুশি। তবে নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে চিন্তিত নই আমি। পুরো দল নিয়েই ভাবছি, ভাবছি কিভাবে আমরা আরো ভালো করতে পারি।’
মুস্তাফিজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কেউ যখন না খেলে, তখন বলা খুব কঠিন যে – সে ফর্মে আছে বা ফর্মে নেই। সে সাম্প্রতিক সময়ে) খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি। সে যখনই খেলেছে, ভালো করেছে, দলের হয়ে কাজটা করেছে। তো সে ফেরার পর (আইপিএল থেকে) আমাকে দেখতে হবে কেমন পারফর্ম করে।’
কথা বলেন প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়া মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে নিয়েও। মূলত পেস বোলিং অলরাউন্ডারের প্রয়োজনীয়তা থেকেই তাকে নেয়া হয়েছে বলে জানান হাথুরু। এই প্রসঙ্গে উঠতেই তার বক্তব্য, ‘আমাদের পেস বোলিং অলরাউন্ডার দরকার আমি তার খুব বেশি ব্যাটিং দেখিনি। আমি শুনেছি সে ভালো বোলার। ম্যাচের তিন ফেজেই বল করার সক্ষমতা আছে। কিন্তু তার দেখাতে কী করতে পারে, আর তার মাঝে কতটা সামর্থ্য আছে।’
সিলেটের তিনদিনের অনুশীলন ক্যাম্পেও খুশি হাথুরুসিংহে। তিনি বলেছেন, ‘আমরা কন্ডিশন নিয়ে খুবই খুশি। আমরা যেমন চাই, তেমন পিচ কন্ডিশন তৈরি করতে তারা (কিউরেটর ও মাঠকর্মীরা) কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমাদের খুব ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। আপনি দেখতে পারেন ছেলেদের এনার্জি। ইন্টেনসিটি খুব ভালো ছিল, আমি এটাতে খুশি।’
এ সংক্ষিপ্ত অনুশীলন ক্যাম্পে হেড কোচের কাজ কী ছিল? তিনি বিশেষ কী করিয়েছেন? এমন প্রশ্নর জবাবে হাথুরুসিংহে জানান, তিনি আসলে বিশেষ কিছু করাননি। হাথুরুসিংহে বলেন, ‘আমি কারও সঙ্গেই বাড়তি কিছু করিনি। আমি শুধু মাঝে দাঁড়িয়ে এটি নিশ্চিত করছিলাম যে, সেশনটা যেন ভালোভাবে শেষ হয় এবং ইন্টেন্সিটি না কমে। নির্দিষ্ট কাউকে নিয়ে চিন্তিত নই আমি। পুরো দল নিয়েই ভাবছি। সে (তামিম) খুব ভালো ব্যাটিং করছে। এই ক্যাম্পে যেভাবে ব্যাটিং করেছে, আমি খুব খুশি।’