Search
Close this search box.

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মোন্তাজ গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার- মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৯ সালে মো. মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজকে (৭৬) মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তবে রায়ের আগেই ২০১৬ সালে নিজ বাড়ি গাইবান্ধা থেকে পালিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পলাতক জীবন শুরু করেন তিনি। সবশেষ শনিবার গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।

রবিবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের ১ জুন মমতাজ, আব্দুল ওয়াহেদ, জাছিজার রহমান, আব্দুল জব্বার এবং রঞ্জু মিয়াসহ হেলাল পার্ক আর্মি ক্যাম্প থেকে পাক হানাদার ও রাজাকারের সমন্বয়ে ২০-২৫ জনের একটি দল গাইবান্ধা সদর থানার বিষ্ণুপুর গ্রামে হামলা চালায়। ওই এলাকার অম্বিকাচরণ সরকার এবং আব্দুর রউফের বাড়িতে মোন্তাজ এবং তার সহযোগী কয়েকজন রাজাকার বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট করে। এরপর তারা অম্বিকাচরণকে মারধর করলে এক পর্যায়ে তিনি মারা যান। একই গ্রামের দিজেশচন্দ্র সরকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক লুটপাট চালায় অভিযুক্তরা। এছাড়াও ফুলকুমারী রাণী এবং সন্ধ্যা রাণীকে পাশবিক নির্যাতন করে ধর্মান্তরিত করতে বাধ্য করা হয়। এ সময় দ্বিজেশ চন্দ্র বাধা দিতে আসলে তারা তাকে গাইবান্ধা আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে এবং মরদেহ গুম করে দেয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ১৯৭১ সালের ১৮ অক্টোবর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে গাইবান্ধা সদরের নান্দিনা গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালায় অভিযুক্তরা। ওই হামলায় তারা ওই গ্রামের আবু বক্কর, তারা আকন্দ, আনছার আলী এবং নছিম উদ্দিন আকন্দকে গুলি করে হত্যা করে। একই গ্রামের সামাদ মোল্লা, শাদা মিয়া, ফরস উদ্দিন ও সেকান্দার আলী মোল্লাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পাশের দৌলতপুর গ্রামে হামলা চালিয়ে লাল মিয়া বেপারী, আব্দুল বাকী, খলিলুল রহমান, দুলাল মিয়া, মহেশ চন্দ্র মন্ডলকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে ও গুলি করে হত্যা করে। এছাড়াও গাইবান্ধা সদর এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রামে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ওমর ফারুক, ইসলাম উদ্দিন এবং নবীর হোসেনসহ মোট সাতজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে গাইবান্ধা অধস্তন আদালতে মমতাজসহ ৫ জনকে বাদী করে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মামলা করা হয়। পরে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হলে ২০১৬ সাল থেকে আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। মামলার রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় দুই আসামি আব্দুল জব্বার এবং রঞ্জু মিয়া মারা যান। জাছিজার রহমান এবং আব্দুল ওয়াহেদ মন্ডলকে র‌্যাব গ্রেফতার করলেও মো. মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ পলাতক ছিলেন।

লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, মোন্তাজ তার নিজ বাড়ি ছেড়ে গাইবান্ধা সদরে জামাতার বাড়িতে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকে প্রায়ই স্থান পরিবর্তন করে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে তার বড় ছেলে শফিকুল ইসলামের ভাড়া বাসায় আসা-যাওয়া করতেন। পরে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে স্থায়ীভাবে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার চন্দ্রা এলাকায় ছেলের বাসায় বসবাস করতে থাকেন। ১৯৭১ সালে গঠিত জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী মমতাজ জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা সদরের সক্রিয় সদস্য ছিলেন।

গ্রেফতারের পর মোন্তাজের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এমন আরও ১০ জনের বেশি আসামি নজরদারিতে রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ