৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে জেলেদের জালে মিলছে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। সমুদ্রযাত্রায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পেয়ে খুশি জেলে, ট্রলার মালিক ও ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্য বন্দরে গিয়ে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে ইলিশ মাছে ভরে গেছে মৎস্য অবতরণ এলাকা। বঙ্গোপসাগরে থেকে একের পর এক মাছবোঝাই ফিশিং ট্রলারগুলো এসে ভিড়ছে। শ্রমিকরা এসব ট্রলার থেকে মাছ আড়তে উঠাচ্ছেন। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত দরদামে পাইকারদের কাছে মাছ বিক্রি করছেন। অবরোধ শেষে দ্বিতীয় দিনে তাই বাজার দরও ভালো। তবে নিষেধাজ্ঞার সময় শেষ না হতেই অনেক ট্রলার সাগরে নামে বলে অভিযোগ উঠেছে। যে কারণে প্রথম দিনেই মাছ নিয়ে ফিরেছে ফিরেছে অনেক জেলে। আর এসব ট্রলারের মাছগুলোর বেশি দাম হাঁকাচ্ছেন।
ট্রলারের মাঝি ইলিয়াস বলেন, এতদিন অবরোধ শেষে সমুদ্রে গিয়ে তেমন ভালো মাছ পাইনি, দীর্ঘদিন বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ধার দেনা করে কোনোরকমে পরিবারসহ চলছি। তবে বাজারে মাছের ভালো চাহিদা রয়েছে দামও ভালো। এখন আশা করছি দেনা পরিশোধ করতে পারবো।
অপর এক ট্রলারের মাঝি সায়েম বলেন, দেশে অবরোধ চলে আর ভারতীয়রা মাছ ধরে নিয়ে যায়, এই হলো আমাদের দেশের অবরোধ। মাছ পেয়েছি প্রচুর, দামও ভালো। ধারদেনা করে চলছি, মাছ ধরে ধরে এনে বিক্রি করে মহাজনের টাকা পরিশোধ করতে হবে। আমাদের মধ্যে কিছু জেলে আছে যারা অবরোধের মধ্যেও অসাধু উপায়ে মাছ শিকার করেছেন।
মেসার্স ভাই ভাই ট্রলারের মালিক ইকবাল হোসেন বলেন, গভীর সমুদ্রে (২৩ জুলাই) রাত থেকে বিভিন্ন মাছের ট্রলার গেছে। যেসব ট্রলার মাছ পেয়েছে তারা মাছ নিয়ে ফিরে এসেছে। দীর্ঘদিন অবরোধ শেষে আশা করা যায়, এ বছর ভালো মাছ পাওয়া যাবে। মাছের সরবরাহ বেড়ে গেলে মাছের দাম কমে যাবে।
মেসার্স কামাল ফিসের মালিক আব্দুল মন্নান বেপারী বলেন, এখানে ৩০০ গ্রাম থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়, ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের প্রতিমণ ইলিশ ৪০ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকায় ও ১ কেজির বেশি ওজনের ইলিশ ৭০ হাজার টাকা থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মহিপুর বন্দর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা বলেন, সরকারের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা জেলেরা পালন করেছে। তারা রোববার রাত মাছ ধরতে গভীর সমুদ্রে গেছে। কিছু কিছু ট্রলার আসতে শুরু করেছে, মাছকে সতেজ রাখতে বরফ কলগুলো চালু করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সমুদ্রে ঝুঁকি নিয়ে মাছ শিকারের মাধ্যমে দেশের মৎস্য চাহিদা পূরণ করে আসছেন জেলেরা। অথচ জেলেরা সমুদ্রে মাছ শিকারে গিয়ে ঝড় কিংবা জ্বলোচ্ছাসে সমুদ্রে ডুবে মারা গেলে পরিবারকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। তাই তিনি নিবন্ধিত জেলেদের জন্য ঝুঁকিভাতা চালুর জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম বলেন, টানা ৬৫ দিনের অবরোধে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া সুন্দরভাবে অতিবাহিত হয়েছে। জেলেরা এই জন্য সমুদ্রে মাছ পাচ্ছেন। এবার অবরোধের সময় অভিযানে ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে যা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সমুদ্রে প্রায় ৪৭৫ প্রজাতির মাছ রয়েছে। জেলেরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মাছ শিকার করতে পারবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সমুদ্রে বেশি বেশি মাছ শিকার করায় তাদের আয় বৃদ্ধি পাবে, আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। কম সময়েই অধিক মাছ নিয়ে ফিরেছে জেলেরা। ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার সুফল পাচ্ছেন তারা।
উল্লেখ্য, ইলিশসহ সামুদ্রিক মাছের স্বাভাবিক প্রজনন ও সংরক্ষণে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। পটুয়াখালী জেলায় নিবন্ধিত জেলেদের সংখ্যা ৭৫ হাজার। এর বাহিরে ও মাছ শিকারে করে জীবিকা নির্বাহ করেন এখানকার লক্ষাধিক মানুষ।