ব্রাসিলিয়াতে অনুষ্ঠিত হলো ব্রাজিল ও বাংলাদেশের ২য় ফরেন অফিস কনসাল্টেশান। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষে অন্যান্যদের মধ্যে অংশগ্রহণ করেন ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা। ব্রাজিল সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর মারিয়া রোশা, এশিয়া প্যাসিফিক ও রাশিয়া বিভাগের সেক্রেটারি অ্যাম্বাসেডর এডুয়ার্ডো সাবোয়া এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্যান্য কূটনীতিকগণ। মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) ব্রাজিলের বাংলাদেশ দূতাবাস এ তথ্য জানায়।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয়ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা, নারীনীতি ও মানবাধিকার, জাতিসংঘ পুনর্গঠন বিষয়ে স্ব-স্ব রাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়। এছাড়াও বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাব্য ক্ষেত্রসমূহ, দক্ষিণ আমেরিকার আঞ্চলিক বাণিজ্য জোট মারকসুরের সঙ্গে বাংলাদেশ পিটিএ/এফটিএ সংক্রান্ত আলোচনা প্রাধান্য পায়।
পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব আর্থসামাজিক উন্নয়ন সম্পর্কে বর্ণনা করেন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের মাধ্যমে ২০৪১ সালে জ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে অবহিত করেন। এছাড়াও তিনি দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তর অর্থনৈতিক সাফল্যে বাংলাদেশের কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব প্রসঙ্গে আলোচনা করেন।
দারিদ্র বিমোচন ও বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন কিংবা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার চ্যালেঞ্জসমূহ বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করে ব্রাজিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাম্বাসেডর মারিয়া রোশা বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের মধ্যে চলমান বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্ক আরও গতিশীল করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
একই দিন বিকেলে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বাসেডর মাওরো ভিয়েরার সঙ্গে এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও তাঁর সুদীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবগত করেন।
দ্বিপাক্ষিক এই বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরা বিগত এক দশকে আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং বাণিজ্য-বিনিয়োগসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিভিন্ন ফোরামে বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন। বৈঠকে উভয়েই উচ্চ পর্যায়ের সফর বিনিময়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা ও ফুটবল বিশ্বকাপে ব্রাজিলের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের জনগণকে ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ এবং জি-২০ ফোরামে ব্রাজিলের নেতৃস্থানীয় উদ্যোগের সমর্থন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ব্রাজিলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাওরো ভিয়েরার কাছে হস্তান্তর করেন। রাষ্ট্রদূত সাদিয়া ফয়জুননেসা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব ব্রাসিলিয়াতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস পরিদর্শন করেন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে বাংলাদেশের একমাত্র কূটনৈতিক মিশন স্থাপিত হওয়ার পর দুই দেশের মধ্যে ১ম ফরেন অফিস কনসাল্টেশান অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৬ সালে ঢাকাতে। পররাষ্ট্র সচিবের চলমান সরকারি সফরে আগামী ০৪-০৫ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্টিয়াগোতে বাংলাদেশ-চিলি ১ম ফরেন অফিস কনসাল্টেশান অনুষ্ঠিত হবে।