নড়াইলের কৃতি সন্তান দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের অন্যতম লোককবি বিপিন সরকারের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী জন্মোৎসব শুরু হয়েছে।
স্বভাবকবি বিপিন সরকার স্মতি রক্ষা পরিষদের আয়োজনে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মাধ্যমে নড়াইলের সুলতান মঞ্চে এ উৎসবের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লিংকন বিশ্বাস।
এ সময় বক্তব্য দেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদী, নড়াইল এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ কুণ্ডু, স্বভাবকবি বিপিন সরকার স্মতি রক্ষা পরিষদের সভাপতি মলয় কুমার কুণ্ডু, সাধারণ সম্পাদক ডা. মায়া রাণী বিশ্বাস, চারণ কবি বিজয় সরকার ফাউন্ডেশনের যুগ্ম আহ্বায়ক আকরাম শাহীদ চুন্নু, নড়াইল প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট নড়াইলের সাধারণ সম্পাদক শরফুল আলম লিটু এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান লিটু প্রমুখ। পরে শহরে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়। দুই দিনব্যাপী জন্মেৎসব আয়োজনের মধ্যে রয়েছে কবির কর্মের ওপর সেমিনার, বিপিন সরকার রচিত কবিতা আবৃত্তি, বিপিনগীতি, হালুই গান, সারি গান, অষ্টক গান ও অষ্টক যাত্রাপালা।
জানা যায়, স্বভাবকবি ১৮টি অষ্টক যাত্রাপালা, ১৪টি পালাগান, এক হাজারের বেশি কবিতা, প্রায় ৫০০ হালুই, ধুয়া, বারাসিয়া, সারি, ভাব, ভাটিয়ালি, অষ্টক ও ধর্মীয় গান লিখেছেন।
তার গান-কবিতায় কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কর্মময় জীবন, সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, অনুভূতি, জীবনাচার, প্রেম-বিরহের পাশাপাশি ঈশ্বরের বন্দনা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, দেশাত্ববোধক, ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মানব শ্রেষ্ঠত্বের বাণী উচ্চারিত হয়েছে।
স্বভাবকবি বিপিন সরকার আটটি কাব্যগ্রন্থ, ২০টি অষ্টক যাত্রাপালা, ১৪টি পালাগান, এক হাজারের বেশি কবিতা, এক হাজার হালুই গান, দুই শতাধিক ধুয়া-বারাসিয়া গান লিখেছেন। নড়াইলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই স্বভাবকবির এসব গান-কবিতা খেটে খাওয়া মানুষ, নৌকার মাঝি ও কৃষাণ-কৃষাণিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
কবি বিপিন সরকারের জ্ঞান-গরিমা পাণ্ডিত্য ছিল অসাধারণ। তিনি অবসরে, চলতি পথে, কথার ফাঁকে, যেকোনো অবস্থায় গান-কবিতা লিখতে পারতেন, সুর করতেন এবং গানও গেয়ে শোনাতেন।
১৯২৩ সালের ২২ ডিসেম্বর নড়াইল পৌরসভার বাহিরডাঙ্গা গ্রামে এই কবি জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০১৫ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যবরণ করেন।